জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশের প্রায় ৫০% বন্যপ্রাণী বাস করে মাত্র ০.০৪% এলাকাজুড়ে অবস্থিত কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী-গবেষক দল এ উদ্যানের ওপর ২৮ মাসব্যাপী এক গবেষণাকার্য পরিচালনা করে এ তথ্য জানান।
গবেষক দলটির নেতৃত্ব দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান।
চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলায় ৫৪৬৪.৭৮ হেক্টর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান। ১৯৯৯ সালে এ উদ্যানকে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয় ।
গবেষক দলের দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০% বন্যপ্রাণী বাস করে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রায় ১৭ প্রজাতির বিপন্ন প্রাণীর সন্ধ্যানও তারা পেয়েছেন এই উদ্যানে।
তাদের মতে, এই উদ্যানে ৬২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ৩৫৮ প্রজাতির পাখি ও ২২১ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে।
বিপন্ন ১৭ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে রয়েছে: গেছো বাঘ, উল্লুক, হোমি বানর (যা আসামের বানর হিসেবে পরিচিত), কাঠময়ূর, ধূসর কাঠঠোকরা, ক্ষুদে মাছরাঙ্গা; আর সরীসৃপের মধ্যে রয়েছে বিরল প্রজাতির সাপ ও কচ্ছপ; আর উভচর প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে বিরল প্রজাতির ব্যাঙ। এছাড়া এ উদ্যানে নতুন প্রজাতির পাখি ‘বড় নীল চটকের’ (লার্জ ব্লু ফ্লাইক্লেচার) সন্ধানও পায় তারা।
গবেষকদের মতে, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের জন্য সব থেকে বেশি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে অতিরিক্ত লাকড়ি সংগ্রহ, বনে আগুন লাগানো এবং পর্যটনের অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈজ্ঞানিক বিকাশ।
তারা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষ হয়। তখন জমিতে আগাছা নিধনের জন্য আগুন লাগানো হয়। তা অনেক সময় বনের অনেক গভীর পর্যন্ত চলে যায়। তাছাড়া বনের মধ্যে রাস্তা থাকায় অনেকে বনের মধ্যে বিড়ি-সিগারেটের আগুন ফেলে যান। অনেক সময় যা থেকে পরে দাবানলের সৃষ্টি হয়ে ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্ম দেয়।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকেরা বন্য হাতির কবল থেকে নিজেদের জীবন ও সহায় সম্পদ রক্ষার জন্য আগুয়ান হাতির পালকে লক্ষ্য করে আগুনের গোলা ছোড়ে। তাতে করে হাতি তাড়ানো গেলেও তাদের ছোড়া আগুনের গোলা থেকে বনে আগুন লেগে যায়। এই আগুনের হাত থেকে বড় বড় গাছ বা প্রাণী বেঁচে গেলেও পুড়ে ধ্বংস হয় জঙ্গল। আর মারা পড়ে ছোট ছোট বন্যপ্রাণী। যা বাংলাদেশের জীব বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে।
গবেষণা চলাকালে সম্প্রতি একবার আগুন লেগে যায় এ বনে। এতে বনের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ পুড়ে যায়।
গবেষক দলের উদ্যোগে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে পার্বত্য এলাকার জনগণের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮দিনব্যাপী প্রায় ৪’শত মানুষকে নিয়ে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মশালা করা হয়। কর্মশালায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জীব ওবৈচিত্র্য রক্ষা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস না করা, মাংসের জন্য বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকার না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে বন বিভাগে কাজ করেন এমন প্রায় ৫০জন কর্মকর্তাকে ৫দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে তারা বনরক্ষায় কি করণীয় তা জেনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, ‘‘আয়তনে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান খুব বেশি বড় না হলেও বন্যপ্রাণীর বসবাসের জন্য এ উদ্যান খুবই উপযোগী। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে নানা কারণে এ উদ্যান হুমকির মুখে পড়েছে। এ উদ্যান সংক্ষণের জন্য সরকারের উচিত অতিদ্রুত নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নেওয়া। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এ উদ্যান ধ্বংসের মুখে পতিত হবে আর সেই সঙ্গে ধ্বংস হবে বাংলাদেশের জীব-বৈচিত্র্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
জেএম/