মৌলভীবাজার: দীর্ঘ ঠোঁটেই তার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। পাখিদের মধ্যে ধনেশই (Hornbil) ব্যতিক্রমী; যার ঠোঁট এমন বিশালাকৃতির।
তবে এই ঠোঁটই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়ে! ঠোঁট আর মাংশের লোভে মরতে হয় তাদের। হরিণের যেমন নিজের দেহ ও মাংসই নিজের শত্রু—‘‘ অপণা মাঁসে হরিণা বৈরী’’। এমন অবস্থা বহুদিন ধরে চলে আসছে। ফলে আমাদের পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে এই পাখিটি আজ অনেকাংশেই হারিয়ে গেছে। তাদের স্ট্যাটাস আজ ‘মহাবিপন্ন’-এর কোঠায়।
আমাদের দেশে প্রায় তিন প্রজাতির ধনেশ পাখির বিচরণ রয়েছে। উদয়ী পাকরাধনেশ বা কাউ ধনেশ (Oriental Pied Hormbil), রাজ ধনেশ (Great Hormbil) এবং পাতাঠোঁটি ধনেশ (Wreathed Hormbil)।
এছাড়াও দেশি মেটেধনেশ বা পুটিয়াল ধনেশ (Indian Gray Hormbil) পাখিটি ইতোমধ্যে আমাদের দেশ থেকে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এর ঠোঁটটির দিকে তাকালেই পাখিটির জন্য প্রচণ্ড মায়া হয়। প্রকৃতিপ্রেমী-বন্যপ্রাণীপ্রেমীদের ব্যথিত করে তুলে এর এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু। দৈর্ঘে এরা ৮০ সেমি থেকে শুরু করে ১৩০ সেমি পর্যন্ত হয়। তাহলে কতটুকুই বা এর মাংশ! তবু মানুষের এমন নির্মম লোভ আমাদের বন্যপ্রাণীদের বিপন্ন করে তুলছে।
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাংলানিউজের জন্য একটি দুর্লভ ছবি তুলে এনেছেন স্বনামধন্য সরীসৃপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার রহমান। কোনো ধনেশ পাখির মাংস খাওয়া হলে এর সুন্দর ঠোঁটটি আদিবাসীরা সংগ্রহ করে রাখেন। এটি স্থানীয়ভাবে চলমান একটি রীতি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এমনি এক দুর্গম আদিবাসীএলাকা থেকে এ দেহবিহীন ঠোঁটের এ ছবিটি তুলেছেন তিনি।
শাহরিয়ার সিজার রহমান এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মার্মা, ত্রিপুরা এবং মুরং আদিবাসীদের বসবাস। ওই এলাকার আদিবাসীদের মাঝে ধনেশ পাখির মাংশ বেশি জনপ্রিয়। এক আদিবাসীর বাসায় প্রবেশ করে এই ঠোঁটটি দেখতে পাই। ’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘স্থানীয় অবৈধ বাজারে ধনেশ পাখির একেকটি ছানার দাম নয় থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা শুনেছি। বর্ষার শুরুতে ধনেশ পাখি যখন উঁচু গাছে বাচ্চা দেয় তখন সেই বাচ্চাগুলো স্থানীয়রা সংগ্রহ করে। একটি সংঘবদ্ধচক্র এর সাথে জড়িত। ’’
স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে বন্যপ্রাণীর প্রতি সচেতনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের মধ্যে যারা পড়াশোনার জন্য পাহাড়ি এলাকা বা গোষ্ঠী থেকে বের হয়ে গেছে তারা আধুনিক জীবনযাত্রায় প্রবেশ করেছে। বন্যপ্রাণীর প্রতি অনেকটাই সচেতন এরা। তবে পাহাড়ি এলাকায় যারা রয়েছে, বন্যপ্রাণীর প্রতি তাদের সচেতনতা নেই বললেই চলে। ’’
সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে বন্যপ্রাণীর প্রতি সচেতনতা বিষয়ক কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হওয়া অধিক জরুরী বলে মনে করেন এই গবেষক।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘এ বিষয়টি ইতোপূর্বে আমরা জেনেছি। ধনেশের ছানা বা ধনেশ বিক্রয় কিংবা পাচার প্রতিরোধে ওই অঞ্চলে আমাদের অনুসন্ধানী কার্যক্রম চলছে। ’’
শুধু ধনেশ নয়ই, বাংলাদেশের সকল প্রকার বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করতে এবং তাদের পাচার ও হত্যা রোধ করতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩০ এএম ঘন্টা; ২৭ আগস্ট, ২০১৬
বিবিবি/জেএম