শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পাকা সড়ক, সেতু, কালভার্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ধ্বংসের মুখে আবাদি জমিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ।
কেউ কেউ ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলনের শর্ত না মেনে, কেউ বা আবার ইজারা ছাড়াই দিনের পর দিন অপরিকল্পিতভাবে দৈনিক শ্রমিক দিয়ে তুলে যাচ্ছেন বালু। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একটি সাধারণ বালু ও আঠাশটি সিলিকা বালুসহ মোট ঊনত্রিশটি বালুর মহাল রয়েছে। এর মধ্যে বড়ছড়া, ঝলমছড়া, ভুরভুরিয়াছড়া, জৈনকাছড়া, খাইছড়া, শাওনছড়া, নুলুয়াছড়া, পুটিয়াছড়া, হুগলিছড়া, গান্ধিছড়া ও আমরাইলছড়া ইজারা দেওয়া হয়নি।
অথচ সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গান্ধিছড়া, আমরাইলছড়া ও হুগলিছড়া ঘুরে দেখা গেছে, সেগুলোতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে সম্রাট ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন এলাকার একাধিক স্থানে বিশালাকৃতির স্তুপ করে উত্তোলন করা বালু রাখা হয়েছে।
ফুলছড়া থেকে মেশিন দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের পর আশিদ্রোন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ‘আটঘর বস্তি’ এলাকায় গোবিন্দ নুনিয়ার ধানি জমিতে সেগুলো স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
লাংলিয়াছড়ায় উজানের দিকে ক্রমাগত বালু উত্তোলনের ফলে এ ছড়ার দুই পাড় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। ব্যাপক এলাকাজুড়ে কৃষকের ফসলি জমি লাংলিয়াছড়ার ভাঙনের কবলে পড়েছে।
একাধিক এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলের নেপথ্য সমর্থনে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত চলছে এ অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যবসা। এলাকাবাসী এতে আপত্তি জানালে তাদের ভয়-ভীতি দেখানোসহ নানা হয়রানি করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুরভুরিয়াছড়ায় শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলকাস, ঝলমছড়ায় জুয়েল, পুটিয়াছড়ায় মাখন, নায়ারণছড়ায় ফজলু এবং আমড়রাইছড়ায় কবির মোল্লা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন।
সম্রাট ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন এলাকার একাধিক স্থানে বালু স্তুপ করে রেখে সৌন্দর্যহানিসহ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছেন শাজাহান, কদর, খলিল ও কবির মোল্লা।
বিষ্ণু সেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঘন ঘন বালুর গাড়িগুলো যাতায়াত করে সিন্দুরখান এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের রঘুনাথপুর-বনগাঁওয়ের সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তাটি একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে। রাস্তাটির বয়স ছয়মাসও হয়নি। পাঁচ বছরের আগে এ পাকা সড়কটি মেরামতের আর কোনো সুযোগ নেই।
বেলা’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাড. শাহ শাহেদা বাংলানিউজকে বলেন, মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা অনুসারে কোনো চাবাগান অথবা অন্য কোনো স্থাপনার ভেতরে কোনো বালুমহাল থাকারই কথা নয়। যেগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতেও শর্ত উল্লেখ করা রয়েছে যে, পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে কোনো বালু উত্তোলন করা যাবে না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শহীদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
বিবিবি/এএসআর