কিন্তু কিছুতেই থামছে না পাহাড় কাটা। এভাবে কাটতে থাকলে একসময় পাহাড়হীন হয়ে পড়বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা।
সরেজমিনে কসবা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বায়েক, মাদলা ও গোপীনাথপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব এলাকায় অন্তত অর্ধশতাধিক পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বায়েক ইউনিয়নের কুল্লাপাথর ৫১ শহীদের সমাধিস্থল সংলগ্ন পাহাড় কেটে পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন। আর অবৈধ এ কাজকে জায়েজ করতে প্রস্তাবিত পার্কটির নাম তিনি রেখেছেন ‘শেখ রাসেল সীমান্ত পার্ক’।
স্থানীয়রা জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি কুল্লাপাথর গ্রামের পাহাড়খেকো মফিজ মিয়া ট্রাক্টর যোগে মাটি নিতে শ্রমিক নিয়োগ করেন। এসময় পাহাড় ধসে দুই শ্রমিক আহত হন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে সস্তাপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে মালু মিয়ার (২৫) মৃত্যু হয়।
কুল্লাপাথরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কর্তিত পাহাড় ৯০ ডিগ্রি খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে আছে। নিচে বসত বাড়ি। যে কোন সময় পাহাড় ধসে বাড়ির বাসিন্দাদের হতাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কুল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থল দেখভালের দায়িত্বে থাকা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম বলেন, পাহাড় কেটে কুল্লাপাথর এলাকার প্রাকৃতিক রূপ বিনষ্ট করা হচ্ছে। ফলে পর্যটন সমৃদ্ধ এই এলাকাটির গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। যেভাবে পাহাড় কাটা চলছে তা অব্যাহত থাকলে এই এলাকা একদিন পর্যটক শূন্য হয়ে পড়বে। তাই অবৈধ পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
কুল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থলে ঘুরতে আসা কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, পাহাড় কাটা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। যেভাবে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে তা দেখে মনে হয় এখানে প্রশাসনের নুন্যতম কোন নজরদারি নেই।
কুল্লাপাথরে পাহাড় কেটে পার্ক করার বিষয়ে জানতে চাইলে বায়েক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো.বিল্লাল হোসেন বলেন, পর্যটকদের বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণ করতে চাইছি বলে এলাকার কেউ কেউ প্রতিহিংসা করে আমার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় তহশীলদারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘুরে দেখে গেছেন। আসলে পাহাড় কাটা তো দূরের কথা, পাহাড়ের এক ইঞ্চি মাটিও সরানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব বলেন, কসবা এলাকায় পাহাড় কাটার খবর পেয়েছি। এ নিয়ে তদন্ত করে যারা জড়িত বলে জানতে পেরেছি তাদের খুঁজে পাইনি। তাছাড়া আমাদের লোকবল ও যানবাহন স্বল্পতায় জেলায় বসে এসব তদারকি করাও দুরূহ।
পাহাড় কাটা বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানান মোসাব্বের হোসেন।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা ইসলাম বলেন, কিছু দুষ্কৃতকারি পাহাড় কাটায় জড়িত। কিছুদিন আগে সালদা নদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছি। প্রয়োজনে আরো অভিযান চালানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
জেডএম/