ফেনী: দুর্ভোগের অন্ত নেই মুহুরী-কহুয়া নদীপাড়ের ফুলগাজী ও পরশুরামবাসীর। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দফায় দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় এ দুই উপজেলাবাসীর।
অনেক সময় বৃষ্টি না হলেও উজানের পানির তোড়ে এখানকার জনপদ হাঁটুপানিতে ডুবে থাকে। কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই মুহুরী-কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। সেই ভাঙা অংশ দিয়ে জনপদে প্রবেশ করে পানি। পানি কমলে বাঁধ সংস্কার হলেও পরে দফার বৃষ্টিতে আবারও ভাঙে।
স্থানীয়রা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারদের অনিয়মের কারণেই এমন নিত্য দুর্ভোগের শিকার হতে হয় তাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির তোড়ে ফুলগাজী ও পরশুরামের মুহুরী-কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুইটি স্থানে ভেঙে ১২টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিনি বলেন, আমরা ভাঙনের স্থলে গিয়ে বাঁধ রক্ষার্থে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। পানি নেমে গেলে দ্রুত ভাঙনস্থল সংস্কার করা হবে। অন্যদিকে ফুলগাজীর জয়পুর এলাকা দিয়ে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ৬টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফেনী পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ঘনিয়ামোড়া এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি প্রবেশের কারণে আমজাদহাটের মনিপুরসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। উজানে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
ফুলগাজীতে বার বার বন্যা ও বন্যার্তদের জন্য সরকারের ত্রাণ বরাদ্দ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসী বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। বন্যাকবলিত ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের জয়পুর, ঘনিয়ামোড়াসহ প্লাবিত হওয়া ৬টি গ্রামে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ দপ্তর থেকে ১০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে এসব তথ্য জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ফুলগাজীর বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ ত্রাণ ও নগদ অর্থের চেয়ে বার বার ভাঙনের কবল থেকে রক্ষাকল্পে মুহুরী নদীর টেকসই বাঁধ নির্মাণে জোর দাবি জানিয়েছেন।
চাল ও অর্থ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে বলে যোগ করেন ইউএনও।
বন্যার পানিতে ২শ হেক্টর আমন ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে বীজ ও প্রণোদনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দেওয়া হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উজ্জ্বল বণিক বাংলানিউজকে বলেন, বন্যায় জয়পুর এলাকার ৮০টি পুকুরের ১৬ হেক্টর এলাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বানভাসি মানুষের জন্য চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বন্যায় প্রতিবছর এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ জরুরি।
অন্যদিকে পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের সাতকুচিয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে ফের প্লাবিত হয়েছে ৬টি গ্রাম। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ডুবে যায় এলাকার ফসলি জমি এবং প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এর আগে গত জুলাই মাসে একই এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ৫টি গ্রাম। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দত্ত, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত আলমগীর নামে এক বাসিন্দা বলেন, সকালে কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে উজানের পানি নেমে মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘরটি পানিতে তলিয়ে যায়। উপায় না পেয়ে জীবন বাঁচাতে সবকিছু রেখেই বের হয়েছি।
তিনি বলেন, চলতি বছরে সাতকুচিয়া এলাকায় ৩ বার প্লাবিত হয়ে বহু ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণ নয়, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান বানভাসি এসব মানুষ।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাতকুচিয়া এলাকায় কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে সাতকুচিয়া, টেটেশ্বর, সলিয়া, চিথলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
এসএইচডি/এএটি