কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী ঘুরে এসে: গেট পেরোনোর পর থেকেই শুধু নেই আর নেই। পর্যাপ্ত ওষুধ নেই, রোগীদের থাকার বেড নেই, লোকবল নেই, চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আবাসন ব্যবস্থা নেই।
এমনকি এইসব সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের নজরও নেই। নেই’র তালিকা যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ।
উপকূল জেলা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের চিত্র এমনটাই। ৩১ শয্যার বরাদ্দ দিয়েই চালানো হচ্ছে ৫০ শয্যার কাজ।
সময়ের প্রয়োজনে হাসপাতালের মর্যাদা বাড়ানো হলেও বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা।
বর্হিবিভাগে প্রতিদিন আসা ৪-৫শ’ রোগীর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয় অন্তত ৮০-৯০ জন। রোগীদের অনেককেই থাকতে হয় হাসপাতালের মেঝেতে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জরুরি ও বর্হিবিভাগসহ হাসপাতালের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কাজকর্ম চলছে পুরানো ভবনে।
খসে খসে পড়ছে ভবনের প্লাস্টার। এক কক্ষের অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে কার্যক্রম স্থানান্তর করা হচ্ছে অন্য কক্ষে।
আবার অনেকবার মেরামতের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে কোন কক্ষের কাজ।
জরুরি বিভাগে ঢুকতেই উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার আবু নাসের বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন সমস্যার চিত্র।
তিনি জানান, আগে এই বিভাগের কাজ চলতো অন্যকক্ষে। সেটি ভেঙ্গে ফেলায় আরেক কক্ষে নেয়া হয়। সেটির প্লাস্টার খসে পড়ায় এই কক্ষে কাজ চালানো হচ্ছে। এটির অবস্থাও নাজুক।
উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার জানান, জরুরি বিভাগে রোগীরা এসে বসতে পারেন না। তাদের চেকআপের মত কোন জায়গা এখানে নেই। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে এখানে স্যাবলন বা ডেটল সরবরাহ নেই। বিকল্প হিসাবে বায়োডিন ও হ্যাক্সিসল দিয়ে এর কাজ চালানো হচ্ছে।
ঘুরে দেখা গেলো, হাসপাতালের এই পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জরুরি বিভাগ, এক্সরে বিভাগ, ইসিজি বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের কাজ চলছে। পুরানো ভবনে থাকা পুরুষ ওয়ার্ডের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ায় এটি স্থানান্তর করে হাসপাতালের সভা কক্ষে নেয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার চালু থাকলেও প্রায় চার মাস ধরে অচল হয়ে আছে এক্সরে মেশিন। নতুন এক্সরে মেশিনের বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি।
এক্সরে মেশিন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট মো. আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে এই হাসপাতালে দেয়া হয়েছে এক্সরে মেশিন । এটা অনেক পুরানো মেশিন। বর্তমানে ডিজিটাল মেশিনে এক্সরে করানো হয়, কিন্তু হাসপাতালে সে ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের মেশিন চালু থাকলে মাত্র ৭০ টাকায় এক্সরে করা সম্ভব হলেও এখন বাইরে থেকে ২০০ থেকে ৬০০ টাকায় করাতে হয়।
আলাপকালে ডা. আলাউদ্দিন, ডা. আবুল হোসেন, ডা. রশিদুল হাসান জানাচ্ছিলেন হাসপাতালের নানা সমস্যার কথা। ওষুধ সংকটের কথা জানিয়ে তারা বলেন, দরকারি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ অপেক্ষাকৃত কম দরকারি ওষুধ পাওয়া যায়। হয়তো বহু আগে ওষুধের একটি তালিকা তৈরি করে রাখা হয়েছে। সে অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করা হয়। ওষুধের চাহিদার ওপর স্টাডি করে ওষুধের তালিকা তৈরির সুপারিশ তাদের।
হাসপাতালে কথা বলার সময় প্রায় প্রত্যেকেই জানালেন আবাসন সমস্যার কথা। চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নেই। সে কারণে অনেককে ভাড়া বাসায় থেকে কাজ করতে হচ্ছে। অনেকে আবার থাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে জেলা সদর মাইজদিতে কিংবা অন্য কোথাও অবস্থান করছেন।
সূত্র বলছে, হাসপাতালের আবাসিক সংকট নিরসন করতে বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হলেও কাজ অসমাপ্ত পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০০৫ সালে ভবনগুলো নির্মাণের পর প্রায় দু’বছর পরিত্যক্ত পড়ে আছে। রাতের আঁধারে বাইরের লোকজন এসে এইসব ভবনের দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যাচ্ছে। রাতে মদ-গাঁজাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে এসব ভবনে। হাসপাতালে সীমানা দেওয়াল না থাকায় এসব সমস্যা আরও প্রকট।
বাইরে থেকে আসা রোগী ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানালেন, হাসপাতালের নানা সমস্যার সুযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর বসুরহাটে বহু বেসরকারি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ট সাধারণ রোগীরা। নানামুখী সমস্যায় পড়ে কম মূল্যে হাসপাতালের সেবার বদলে উচ্চমূল্যে বেসরকারি হাসপাতালের সেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল আজীম বাংলানিউজকে বলেন, পুরানো ভবন মেরামত করে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। শয্যা বাড়ানো হলেও এখানে সুবিধা বাড়ানো হয়নি। স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি সংকট রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দফায় দফায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৪