ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

গ্রামের স্কুলে তথ্য-প্রযুক্তির আলো

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪
গ্রামের স্কুলে তথ্য-প্রযুক্তির আলো ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

টবগী, বাপ্তা, ভোলা ঘুরে এসে: তথ্য-প্রযুক্তি পড়ুয়াদের এগিয়ে দিচ্ছে অনেকখানি। সহায়তা করছে লেখাপড়ায়।

ওরা প্রবেশ করছে বর্হিবিশ্বের অবারিত জ্ঞানের জগতে। মোবাইলের স্ক্রিনে অনলাইনে খবর পড়া, নিজের ই-মেইল থেকে দেশে-বিদেশে যোগাযোগ রাখা এসব ওদের কাছে এখন খুবই সহজ।

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙনসহ বহুমূখী প্রাকৃতিক দুর্যোগে মেঘনা পাড়ের বিপন্ন পরিবারের ছেলে-মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের জীবনের সমস্যা সমাধানের পথ বের করছে।

ভোলার মেঘনাতীরের টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রযুক্তির আলো এভাবেই পড়ুয়াদের ভাবনার জগতে প্রভাব ফেলছে। লেখাপড়ার সঙ্গে ওরা চারপাশের জগতের সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে। বিদ্যালয় ভবনের দোতলায় কম্পিউটার ল্যাবে পাঠদানের সব আয়োজন আছে। তবে বিদ্যুৎ সংকটে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে পাঠদান। রয়েছে আরও কিছু সমস্যা। তথ্য-প্রযুক্তির সম্প্রসারণে সংকট দূর করার দাবি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-পড়ুয়াদের।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী নাসরিন, রোল নম্বর ৮। তথ্য-প্রযুক্তি ক্লাসে নিয়মিত যায়। জানালো, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারছি। এটা আমাদের পড়ালেখা ছাড়াও জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। ইন্টারনেট থেকে যেকোনো বিষয় সহজেই বের করতে পারছি। যেটা এক সময় কল্পনাও করতে পারতাম না।

আমিনুল, নবম শ্রেণীর ছাত্র, রোল নম্বর ১০। সে বলেছে, স্কুলে আমরা একটি কাউন্সিল গঠন করেছি। এতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এ কাউন্সিলের মাধ্যমে আমরা লন্ডনের স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি। অভিজ্ঞতা বিনিময় করে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পারছি।

বিদ্যালয়ের দোতলায় একটি বড় পরিসরের কক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্লাস চলে। বিদ্যালয়ের পড়ুয়দের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলের সভাও হয় এখানে। এখানেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পড়ুয়াদের ক্লাস নিচ্ছিলেন বিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক অসীম আচার্য্য। পড়ুয়ারা মনোযোগী স্যারের কথায়। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী স্যারকে প্রশ্ন করে জেনে নিচ্ছে নানা বিষয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক অসীম আচার্য্য বাংলানিউজকে জানালেন, বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে নিয়ে ছেলে-মেয়েদের ক্লাস নেওয়া হয়। ছেলে-মেয়েদের মাঝে এই ক্লাসের বিষয়ে অনেক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। ওরা অন্য ক্লাসে কিছুটা অনাগ্রহ দেখালেও এ ক্লাস ফাঁকি দেয় না। শেখার ইচ্ছা আছে। ইন্টারনেটের জগৎ শিক্ষার্থীদের কাছে টানে।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত ‘কানেক্টিং ক্লাসরুমস প্রোগ্রাম’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কর্মসূচির অধীনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ব নাগরিকত্ব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পেশাগত উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এ বিদ্যালয় থেকে বেশ কিছু কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন, মেলা, কর্মশালাসহ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড, বৃক্ষ রোপন এবং ইংরেজি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের ওপর বিশেষ কর্মশালা।

এ কার্যক্রমের অধীনে টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের অধীনে এ কাউন্সিল পরিচালিত হচ্ছে। পড়ুয়ারা নিজেরাই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে এই কাউন্সিলে।

দেশের ১৬টি জেলার মধ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল ভোলার পাঁচটি বিদ্যালয় নির্বাচন করেছে এ কর্মসূচির আওতায়। টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, ভোলা পৌর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চরনোয়াবাদ মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ ক্লাস্টারের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করছেন টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অসীম আচার্য্য।

কর্মসূচির আওতায় ভোলার পাঁচ বিদ্যালয়ের সকল সহপাঠক্রমিক শিক্ষার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১২ সালে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চরনোয়াবাদ মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ব্রিটিশ কাউন্সিল ‘ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাওয়ার্ড’ দেয়। এছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে প্রতিনিধিদল ভোলার এ স্কুলগুলো ঘুরে গেছেন। একইভাবে কর্মসূচির আওতাভূক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও ঘুরে এসেছেন যুক্তরাজ্য।     

বিদ্যুৎ সঙ্কট আর শিক্ষক স্বল্পতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্লাস নিয়মিতভাবে চালিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানালেন টবগী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিদ্যালয়ের প্রত্যেক ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য গড়ে ৩ দিন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে এ ক্লাস একদিনের বেশি করা সম্ভব হয় না। বিদ্যালয়ে একজন মাত্র কম্পিউটার শিক্ষক ও একজন রিসোর্স পারসন রয়েছেন। এছাড়া কম্পিউটার ল্যাব রক্ষণাবেক্ষণে কোনো বাজেট ও জনবল নেই।

টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহনেওয়াজ বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এ বিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের অনেকখানি এগিয়ে দিচ্ছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা নানামূখী সমস্যার মধ্যে লেখাপড়া করছে। তথ্য-প্রযুক্তি সে সমস্যাও অনেকখানি কাটিয়ে দিতে সহায়তা করছে। কিন্তু পারিপার্শ্বিক সমস্যা এ শিক্ষা এগিয়ে নেওয়ার পথে প্রধান বাধা।

তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির প্রতি শিক্ষার্থীদের যে উৎসাহ আগ্রহ লক্ষ্য করি, তা ধরে রাখতে হলে সব বাধা দূর করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক স্বল্পতা দূর করাসহ কম্পিউটার ল্যাব আরও আধুনিক করার উদ্যোগ নিতে হবে।              

[পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোনো খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: ri_montu@yahoo.com ]

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।