ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

চরলতিফের পতিত চরে ফলছে রবিশস্য

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
চরলতিফের পতিত চরে ফলছে রবিশস্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: চরলতিফ। দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন  উপজেলায় প্রায় বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ জনপদের নাম।

বছরের পর বছর ধরে চরের পতিত জমিতে রবিশস্যের আবাদের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন কৃষকরা।

কিন্তু প্রথমবারে মতো এবার সেই পতিত জমির বুক চিরে ফলানো হচ্ছে রবিশস্য। চলতি মৌসুমে চরলতিফের চরের জমিতে শোভা পাচ্ছে গম, ভুট্টা, সয়াবিন, তরমুজ, সূর্যমুখীসহ নানান ফসল।

কৃষকরা এ ফলন নিয়ে আশাবাদী হতে শুরু করলেও তাদের শঙ্কিত করে তুলছে খেতে ইঁদুরের উৎপাত।

সরেজমিনে চরলতিফে গিয়ে জানা যায়, মেঘনার কোল ঘেঁষে প্রায় ২০ বছর আগে জেগে উঠে চরলতিফ। চর জাগার পর সেখানে ফসলের আবাদের চেষ্টা করেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও ফলনে সুবিধা করতে পারেননি তারা। বছরের পর বছর ধরে সেখানে পতিত থাকতো জমি। ফলে ধান ছাড়া চরের জমি থেকে আর কোনো ফলন পেতেন না চরের বাসিন্দারা।

চলতি ওই চরে শুরু হয় রবিশস্য আবাদের প্রচেষ্টা। ইউএসএআইডির সহযোগিতায় সিসাএমআই ও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা কৃষকদের ওই চরে রবিশস্য আবাদের প্রশিক্ষণ দেয়।

পরে তাদের মধ্যে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় ফসলের বীজ। ওই দুই সংস্থার সার্বিক সহায়তায় চরের পতিত জমিতে শুরু হয় রবিশস্যের চাষ। এখন সেখানে কৃষকরা গম, ভুট্টা, সয়াবিন, তরমুজ, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন কৃষকরা। ‍

চরলতিফের রবিশস্যের আবাদ করা কৃষক শামিম হোসেন, মো. ফারুক, আবুল বাশার ও স্বপন জানান, তারা কখনো ভাবেননি এখানে অন্য ফসল হবে।
কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে আরো বেশি ফসল ফলাতে পারবেন বলে তারা আশাবাদী।

কৃষকরা জানান, প্রথমবারেই ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু খেতে ইঁদুরের আক্রমণ নিয়ে চরমভাবে চিন্তিত তারা। তাই সনাতন পদ্বতিতে ইঁদুর দমনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতে কাজ হচ্ছে না।

এদিকে, চরলতিফে প্রথমবারের মতো রবিশস্যের আবাদে কৃষি অফিসও সন্তুষ্ট। তারাও সেখানে আবাদের আরো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।

এরইমধ্যে গত ৯ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সমসের আলী ও অতিরিক্ত পরিচালক (জনপ্রশাসন ও অর্থ) ড. গোলাম মোহাম্মদ ফারুক, সিসাএমআইয়ের প্রতিনিধি হিরালাল নাথ, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিনসহ একটি প্রতিনিধিদল চরলতিফে ফসলের খেত পরিদর্শন করেছেন।

জানতে চাইলে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বাংলানিউজকে বলেন, ইউএসএআইডির সহযোগিতায় সিসাএমআই ও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে আমরা কৃষকদের রবিশস্য আবাদে সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এতে কৃষকরা বেশ সফলতা পাচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চরলতিফে কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান বলেন, চরলতিফে প্রচুর পলিজমি রয়েছে, যা ফসলের জন্য বেশ উপযোগী। এটিকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ইঁদুর দমনের যথেষ্ট কলাকৌশল রয়েছে। এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেব। ইঁদুর দমনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।