ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

সোনালী দিনের স্বপ্ন যমুনা চরের কৃষকের

রফিকুল আলম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
সোনালী দিনের স্বপ্ন যমুনা চরের কৃষকের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ধুনট (বগুড়া): একসময় যমুনা নদীতে জেগে ওঠা চরের বিস্তীর্ণ জমি পতিত পড়ে থাকতো বছরের পর বছর। চিক চিক করা বালুর আস্তরণ একসময় ঢাকা পড়ে যেতো প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া কাঁশবন কিংবা ঝাউগাছে।



দফায় দফায় যমুনার ভাঙা-গড়ার খেলায় পলি জমে উর্বর হয়ে ওঠা এ জমিতে ছিল কেবল নানান জাতের আগাছা।

কিন্তু একটা সময়ে এ চরের আগাছা পরিস্কার ও কাঁশবন-ঝাউগাছ কেটে নদীপাড়ের সংগ্রামী মানুষেরা তৈরি করে নিয়েছেন জমি। তাদের কঠোর হাতের কোমল ছোয়ায় সেই মাটি থেকে ফলছে ‘সোনা’।

এসময়ের পতিত ও আগাছাপূর্ণ বগুড়ার ধুনট উপজেলার যুমনা নদীর বিস্তীর্ণ চরজুড়ে এখন চলছে নানান জাতের ফসলের আবাদ। নীরব ‍এ কৃষি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সোনালি দিনের স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।

সম্প্রতি ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা দুর্গম চর এলাকা ঘুরে দেখা গেলো সুজলা-সুফলা শস্যের বিস্তীর্ণ খেত।

স্থানীয়রা জানান, ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে চলছে যমুনা নদী। গত ৪০ বছর ধরে যমুনা নদী ভাঙছে। দীর্ঘ সময়ের ভাঙনে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

অপরদিকে, ভাঙা-গড়ার খেলায় প্রায় ২০ বছর ধরে যমুনা নদীর পূর্ব তীরে চর জেগে উঠছে। প্রতি বছরই একটু একটু করে বাড়ছে চরের ব্যাপ্তি। যমুনার পশ্চিম তীরের অনেক পরিবার সময়ের প্রয়োজনে ও জীবিকার চাহিদায় এসে ঘর বেঁধেছেন পূর্বের চরে। ধীরে ধীরে বাড়ছে এ জনবসতির ব্যাপ্তি।

পূর্ব তীরে জেগে ওঠা চরের মধ্যে বৈশাখী, রাধানগর ও বতুয়ারভিটা এলাকায় এরইমধ্যে অন্তত ৫০০ পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে।

তবে নিউসারিয়াকান্দি, পুকুরিয়া, বরইতলি, ভূতবাড়ি চরে এখনও কেউ বসতি গড়ে তোলেনি। তবে এসব চরে চলছে নানান জাতের ফসলের চাষাবাদ।

যমুনার বুকে জেগে ওঠা এ চরের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে তা অনেকটা স্থায়ী চরে রূপ নিচ্ছে।

একসময়ের অনাবাদী এ চরে বর্তমানে ধান, পাট, ভুট্টা, মরিচ, গম, মসুর, খেসারি, ছোলা, চীনা বাদাম, মিষ্টি আলু, কেশর, পেঁয়াজ, রসুন, তিল, তিশি, কালোজিরা, কালো বোরো ধান, আখ ও মাসকালাইসহ নানান ফসলের আবাদ চলছে। ।

নিউসারিয়াকান্দি চরের কৃষক আব্দুল আজিজ জানান, যমুনা নদীতে বিলীন হওয়া তার ১৮ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ১০ বিঘা জমি জেগে ওঠেছে। চরের জমির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। পলি পড়ে ফসল চাষে উপযোগী হচ্ছে তার এসব জমি। প্রায় ৩৫ বছর আগের পারিবারিক জমি ফিরে পাওয়ায় সেখানে পুরোদমে শুরু করেছেন চাষাবাদ।

বৈশাখী চরে পূর্ব পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত জমির আইলে বসে বৃদ্ধ কোরবান আলী জানান, তার কৈশোরে এসব জমি যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছিল। জমি-জিরাত হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। কিন্ত এতোদিন পর সেই জমি জেগে ওঠায় তার চোখে মুখে এখন স্বস্তির ছোয়া।

তিনি জানান, প্রথম দিকে চরের এই জমিতে কালাই, চীনা  বাদাম ও তিলের চাষ করলেও এখন বোরো ধানের আবাদ করছেন। এর মাধ্যমে আবারো ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

এসব বিষয়ে ধুনট উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবাহান বাংলানিউজকে জানান, যমুনা নদীর চরে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল চাষাবাদ হয়েছে। পলি পড়া এ বালুচরের মাটি উর্বর হওয়ায় সব ফসলের বাম্পার ফলন হবে।

এছাড়া অনেক অনাবাদী জমি ক্রমেই চাষযোগ্য হয়ে উঠছে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬ 
এসআর/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।