ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

দশেই দক্ষ জেলে!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
দশেই দক্ষ জেলে! ছবি-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটা উপকূলের জনপদ ঘুরে: ১০ বছরের শিশু মো. কাওছার। যে বয়সটা তার বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার, সমবয়সীদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে বেড়ানোর; সে সময়টাতে তাকে বইতে হচ্ছে সংসারের বোঝা।

বছরখানেক আগে তাদের দুই ভাই ও মাকে ফেলে চলে গেছেন বাবা। মা হনুফা বেগম শারীরিক অসুস্থার কারণে কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। ফলে পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের ভার এসে বর্তেছে শিশু কাওছারের কাঁধে।

শৈশবের দুরন্তপনা ভোলা শিশু কাওসারের এখন সময় কাটে সাগরে মাছ শিকার করে, পরিবারের ভরণপোষণের চিন্তায়। তার দেখাদেখি ছোট ভাই তাওহীদও এসে ভিড়েছে মাছ শিকারে। ছোট্ট দুই ভাইয়ের সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনিতে চলে তিনজনের সংসার।

শুধু কাওসার কিংবা তাওহীদ নয়, তাদের মতো আরো অনেক শিশু জেলেদের ছোট্ট কাঁধে বর্তেছে পরিবার নির্বাহের বড় দায়িত্ব। সম্প্রতি বরগুনার উপকূলীয় পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামে ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মেলে।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে আর পেটের টানে বর্তমানে এ কাজ ভিন্ন অন্য তেমন কোনো বিকল্পও নেই উপকূলের বাসিন্দাদের। ফলে প্রতিদিনই ঝূঁকিপুর্ণ মাছ শিকারে জড়িয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের শিশুরা। পরিবারে অভাব-অনটন, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝরে পড়া শিশুরাই এ শ্রমে ঝুঁকে পড়ছে বেশি।

অবস্থা এমন যে, ‍বয়স ১০ না হতেই এ অঞ্চলের শিশুরা এ পেশায় দক্ষ হয়ে উঠছে। প্রয়োজনে গভীর সমুদ্রে যেতেও দ্বিধা কিংবা ভয় নেই তাদের।

সিডর বিধ্বস্ত পদ্মা গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো, কাওছার ও তাওহীদ দুই ভাই মনের সুখে গান গাইছে আর ছেড়া জাল বুনছে।

কাওছার জাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর তার ছোট ভাই ৮ বছরের তাওহীদ ছেড়া জাল বুনছে। বলেশ্বর নদ সংলগ্ন পদ্মা গ্রামের বাঁধের বাইরে মাছ ধরা ট্রলারে বসে জাল বুনছে তারা। শেষ হলেই মাছ শিকারে নেমে পড়বে।

আলাপকালে তাওহীদ বলে, ‘কাম না হরলে মোরা খামু কি? মোগো কেউ খাওন দেবে না। বাবা এক বছর আগেই মোগো হালাইয়া গ্যাছে। মাছ ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই মোগো। ’

এ কাজ করে তাদের সংসার চলে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তাওহীদ ও কাওছার বলে, ‘টাহা-টোহা বুঝি না, এক খেও মারলে ৪/৫শ টাহা পাই। মাছ বেশি পাওয়া গেলে হের চাইয়্যা বেশিও পাই। ’

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীপাড়ে অনেকে শিশু, কিশোর-কিশোরী জীবিকার তাগিদে মাছ শিকারে ব্যস্ত। তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে কোমড় পানিতে নেমে জাল টেনে মাছ শিকার করে। অবসরে জাল মেরামত করে।

যে হাতে তাদের থাকার কথা রঙ-পেন্সিল আর স্কুলের বই।   এখন সে হাতে বইতে হয় মাছের বোঝা, নৌকার বৈঠা। স্বপ্ন দেখতে শুরু করার আগেই পাথরঘাটা উপকূলের শিশুদের চোখ শুধুই খুঁজে ফেরে রোজগারের পথ।

এ এলাকার অধিকাংশ শিশুদের মাছ শিকারে ‍হাতেখড়ি হয় মাত্র ৭-৮ বছর বয়সে। এরপর ২/৩ বছরের মধ্যেই তারা হয়ে ওঠে একেকজন দক্ষ জেলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।