ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

জোয়ারে বন্ধ, ভাটায় খোলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
জোয়ারে বন্ধ, ভাটায় খোলা

চর চান্দিয়া (ফেনী) থেকে: জোয়ার হলেই স্কুল বন্ধ। আর ভাটা এলেই খোলা।

নদী গর্ভে শতবর্ষী প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হওয়ার পর গত ছয় বছর ধরে এই নিয়মেই এক মক্তবে চলছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণপূর্ব চর চান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। যেখানে শিক্ষা নামক মৌলিক অধিকারটি নিতান্তই পরিহাসে পরিণত হয়েছে।

নতুন স্কুল নির্মাণের স্বপ্নও মাত্র  জেগে ওঠা চরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যেখানে এখনো নিত্য দিন জোয়ার-ভাটার পানি খেলা করে।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষার সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের এই চরাঞ্চলটির প্রায় চারশ’ শিক্ষার্থীর এ পরিস্থিতি যে কোনো সচেতন মানুষের টনক নড়াতে বাধ্য। তবে টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।

গত প্রায় ছয় বছর ধরে দিনের পর দিন বন্ধুর মাটির মেঝেতে ভাঙাচোরা বেঞ্চে বসে নাম মাত্র ক্লাস করে যাচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানরা। মাটি এমনই বন্ধুর যে বেঞ্চগুলোও সোজা হয়ে বসে না। বাঁশের তৈরি বেড়ার এই দোচালা ঘরটির মেঝেতে জোয়ার ভাটায় পানি আসার দাগ স্পষ্ট। অসমতল মেঝে হওয়ায় বেঞ্চে বসলেই দোলনার মত দোল খেতে হয়।

নিয়মিত জোয়ারে প্রায় তিনফুট পানি ওঠে বড় ফেনী নদীর পাড়ের এ গ্রামটিতে। তাতে অনেকের বাড়ির মেঝের মতো এ মক্তবের মেঝেও ভিজে ওঠে। আর তখন অলিখিত ছুটি এ অস্থায়ী প্রাইমারি স্কুলটিতে। যেখানে দুটি কক্ষে কোন রকমে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন শিক্ষকরা। পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন তিনজন। এই শিক্ষক দলের নারী সদস্যটি আবার নিয়মিত অনুপস্থিত থাকেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। স্কুলটিতে নেই একজন প্রধান শিক্ষকও। কাজ চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত একজন। জানা যায়, প্রায় একশ’ ২০ বছরের পুরোনো স্কুলটি ২০১০ সালে ফেনী নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। যেখানে স্কুলের দোতলা ভবনটি ছিল, সেটি এখন চরমাত্র। পরে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় মক্তবে ক্লাস নেওয়ার অনুমতি মেলে।

কিন্তু ছোট্ট মক্তবে যেখানে এক থেকে দেড়শ’ শিক্ষার্থীকে আরবী পড়ানো হত, সেখানে প্রায় চারশ’ শিক্ষার্থীকে জায়গা দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। দুটি শিফটে ক্লাস নিয়েও স্থান সংকুলান হয় না। ফলে স্কুলে আসা অনিয়মিত হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর।

রমজানে বন্ধ থাকা স্কুলটি ঘুরে দেখা যায়, জীর্ণ ছাউনি ও বেড়ার এ মক্তবটি পতিত ঘর প্রায়। মাকড়শার জাল, অবিন্যস্ত বেঞ্চ এ সবই এর প্রতি অবহেলাকে নির্দেশ করে। উপরের তাকে সাজানো কয়েকটি আরবী বই আর কোরআন শরীফও এই অবহেলা থেকে মাফ পায়নি।


আশপাশেই কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে পাওয়া যায়। আক্ষেপ করে তারা জানান, শুধু জায়গার অভাবে একটি স্কুল নির্মাণ হচ্ছে না। পুরাতন স্কুলটি বিলীন হওয়ার পরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩৩ ডেসিমেল জায়গা পেলে নতুন স্কুল ভবন হতে পারে।

‘কিন্তু আমাদের গ্রামে এমন সভ্রান্ত কেউ না থাকায় স্কুল তৈরি এখনো স্বপ্ন থেকে গেছে। ’- আক্ষেপ করে বললেন, বিলীন স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তৈয়ব আহমদ কুদ্দুস।


বাংলানিউজকে তিনি বলেন,  আমাদের বসতবাড়ির মত পুরোনো স্কুল,  মক্তব সবই নদী নিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাও চলে গেছে। এখন স্কুলটি নামমাত্র রয়েছে।

তবে নতুন স্কুল নির্মাণের আশা বুকে নিয়ে তিনি কয়েক কিলোমিটার দূরে জেগে ওঠা চর দেখিয়ে বলেন, গত ছয় বছর ধরে একটু একটু করে জেগে উঠেছে, এখনও উঠছে। এখনও জোয়ার ভাটার পানি ওঠানামা করে যদিও, তবে দু’এক বছরের মধ্যে জায়গাটি আরো পরিপূর্ণ হবে। তখন নিশ্চয় ওখানে আবার স্কুল ভবন নির্মাণ হবে আমাদের সন্তানদের জন্য।
 
আর এ স্বপ্ন পূরণে সরকারের সহায়তা চান তিনিসহ স্থানীয় সকল অভিভাবক।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
জেপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।