ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

ইলিশ এলে জাগবে পাথরঘাটা, অপেক্ষায় মানুষ

অশোকেশ রায়, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
ইলিশ এলে জাগবে পাথরঘাটা, অপেক্ষায় মানুষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটা (বরগুনা থেকে): আকাশে কালো মেঘ ও গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি হলে সাগরে ইলিশ পাওয়া যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে জেলেদের জালে।

বরফে ঢেকে ট্রলারের পর ট্রলার ভর্তি করে ইলিশ আসে পাথরঘাটা মোকামে, ঘুরতে শুরু করে সিডর বিধ্বস্ত উপকূলীয় উপজেলাটির অর্থনীতির চাকা।

আষাঢ়ের প্রথম ভাগে শুরু ইলিশ মৌসুম। ব্যস্ততা বাড়ে ইলিশ নির্ভর উপকূলের জীবন-জীবিকায়। অথচ মঙ্গলবার (২৮ জুন) আষাঢ় মাসের ২০ তারিখে এসেও আকাশ ও প্রকৃতিতে ইলিশ মেলার লক্ষণ নেই।

সাগরে শত-শত ট্রলার নিয়ে গেছেন হাজারো জেলে-মৎস্যজীবী, আর কূলে তাদের অপেক্ষায় ট্রলার মালিক-আড়তদার, দাদনদার ব্যবসায়ীরা। সাগর থেকে বিষখালী নদী দিয়ে এর শাখা নতুন বাজার খাল পার হয়ে ট্রলার ভিড়বে অবতরণ কেন্দ্রে (অকশন শেড)। মাছ আসার পর জেগে উঠবে পুরো মোকাম। শুরু হবে ইলিশ ওঠানো-নামানো, প্রক্রিয়াজাতকরণ, হিমায়িত করা, প্যাকিং, ভ্যান-ট্রাকে লোড-আনলোড, দেশে-বিদেশে রফতানির মহা কর্মযজ্ঞ। জেলে-মৎস্য শ্রমিক, পাথরঘাটার সরকারি-বেসরকারি ২৩ বরফকলের শ্রমিক-ব্যবসায়ী, স্থানীয় ও বাইরের পাইকারি-খুচরা মাছ ব্যবসায়ী, দূর-দূরান্ত থেকে আসা মাছ পরিবহনকারী ট্রাক শ্রমিক-ব্যবসায়ীরাও অপেক্ষায় দম ফেলতে না পারা সেই ব্যস্ত জীবনের।
 
ঈদকে সামনে রেখে ইলিশের আসার অপেক্ষায় কূলে থাকা জেলেদের পরিবারসহ পাথরঘাটার সব শ্রেণি-পেশার দুই লক্ষাধিক মানুষও। কেননা, এখানকার ২০ শতাংশ শূন্যভোগী (বিনিয়োগ করতে না পারা হতদরিদ্র) জেলে সম্প্রদায়ের হলেও ৮০ শতাংশের পেশা মৎস্য কেন্দ্রিক। তবে শতভাগ মানুষে্রই জীবনের চাকা ঘোরে ইলিশ আর পানির জোরে।

‘চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম, অথচ মাছ আসেনি। চলবো কিভাবে?’- বাংলানিউজকে বলছিলেন ট্রলার মালিক সেলিম হাওলাদার, জেলে ও মৎস্য শ্রমিক শামীম মীর, লাবলু মীর, জাকির।

ব্যবসায়ী খোকন কর্মকার ও বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘জালে মাছ পড়লে হাসি ফুটবে জেলেদের মুখে। পেট বাঁচবে ব্যবসায়ীদের। এখনও মাছ না পড়ায় জেলেদেরই তো পেট বাঁচছে না, আমাদের টা তো পরে…’।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি বাজারে গিয়ে জানা গেছে, অন্য বছরের এ সময়টাতে ইলিশের চাপে পা ফেলাও দায় হয়ে পড়ে। জেলে-মৎস্য শ্রমিক, পাইকার-আড়তদার, ট্রলার-ট্রাক-ভ্যান আর সেগুলোর শ্রমিক-মালিকদের ব্যস্ততম পদচারণায় গম গম করে মোকামটি। সেখানে এ বছর সুনসান নীরবতা। অকশন শেডের সামনে থালের পানিতে আসেনি কোনো ট্রলার আর সামনে নেই একটিও ট্রাক। অলস সময় কাটাচ্ছেন অকশন শেডের শ্রমিক-কর্মচারীও।

বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার সোলায়মান শেখ বাংলানিউজকে বলেন, আকাশে কালো মেঘ ও গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি হলেই সাগরে ইলিশ ধরা দেবে। কিন্তু এখন পর‌্যন্ত সে লক্ষণ নেই। এবারের মৌসুমে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার টন ইলিশ আহরণ। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন আসে ৮০ থেকে ১০০ টন মাছ। অথচ সোমবার (২৭ জুন) বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮ টনের মতো।
 


ট্রলার মালিক-আড়তদার মো. টিপু খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাগরের খবর ভালো না। জেলেরা এখন পর‌্যন্ত কোনো সুসংবাদ পাঠাননি। দু’একদিনের মধ্যে ট্রলার ফিরলে বোঝা যাবে। তাই আশায় আছি’।
 
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে আমরা কয়েকশ’ ট্রলার সাগরে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ইলিশ মেলেনি। তাতে আমাদের অনেক লোকসান হয়েছে। এখনো অনেক ট্রলার সাগরে রয়েছে’।      

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এএসআর/               

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।