ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

অরা মোগো বিপদের বন্ধু হইয়া গ্যাছে

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
অরা মোগো বিপদের বন্ধু হইয়া গ্যাছে ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটা (বরগুনা) থেকে: ‘অরা (ওরা) মোগো (আমাদের) বিপদের বন্ধু হইয়া গ্যাছে, রাইত নাই দিন নাই, কোনো বিরামও (বিশ্রাম) নাই, যহন যে ডাকে, তহন তার কাছে গিয়া হাজির হয়। কম লইয়া পাড়ক, বেশি লইয়া পাড়ক মাইনষের উপকার তো অইতাছে (হচ্ছে)’।

ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের নিয়ে বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ মিয়া এমনই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আগে পোলাপানগুলার কোনো কাম-কাইজ থাকতো না, খালি টাল্টি-বাল্টি কইরা ঘুইরা বেড়াইতো। এহন পাথরঘাটার প্রত্যেক গ্রামে উঠতি বয়সের ওই যুবকরা একটা মোটরসাইকেল কোনোভাবে যোগাড় কইরা কামাইতে নামতাছে। এতে অগো সংসার যেমন ভালো চলতাছে, তেমনি গ্রামের মাইনষেরও উপকার অইতাছে’।

‘রাস্তাঘাট চিকন-চাকন থাকায় সব জায়গায় রিকশা, টমটম, নসিমন, বাস যাইতে পারে না, কিন্তু মোটরসাইকেল লইয়া অরা কই না যায়’।

‘এই ধরেন রাইত ২টা বাজে, বাড়ির মধ্যে কেউ অসুস্থ হইয়া পড়ছে, হাসপাতালে নেওয়া লাগবো বা ডাক্তার কবিরাজ বাড়িতেই আনতে লাগবো। মোবাইলের যুগ হইলেও গাড়ি জোগাড় করতে করতে কিংবা হাইট্টা রওয়ানা দিয়া পৌঁছাইতে পৌঁছাইতে রোগীর অবস্থা বারোটা। কিন্তু গ্রামের মধ্যে আতান  দিলে  (খোঁজ লাগালে) ২/৪ ঘরের মধ্যে একটা মোটরসাইকেল পাইবেন, যা ভাড়ায় এ এলাকায় চালানো হয়। যতোই রাত হউক, যেহেতু ওইডাই অগো পেশা দ্যাখবেন মোটরসাইকেল লইয়া আমনের উপকারে নাইম্মা পড়ছে’।

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের সময় জ্ঞান বাড়ে নাই ক্যাডায় কয়, সবাই একটু তারাতারি বাড়ি কিংবা কামে যাইতে চায়, আবার পয়সাও বাঁচাইতে চায়। ২০/২২ বছরের পোলাপানগুলায় ভাড়ায় মোটরসাইকেলে মানুষ টাইন্না নানান রহমের সুযোগ বাইর কইরা দেছে, যার লইগ্যা অগো সবাই ভালো পায়। বিপদে কেউ না থাকলেও অগো পাইবেনই’।

‘আবার এই পেশায় শরীরের কষ্ট কম অয়, ভালো টাহাও আয় অয় বিধায় অনেকে যেমন ধরেন ক্ষ্যাত-খামারে বদলা দেওয়া লোকজনও ভাড়ায় এহন মোটরসাইকেল চালায়’।

এইসব যুবকরা যদি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসারের হাল না ধরতো। এতে যেমন সংসার অভাব-অনটনেই চলতো আর তার সংসারের কাছে তারাও বোঝা হয়ে যেতো, তেমনি আবার অলস মস্তিস্ক নানান ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে ধাবিত হতো বলে দাবি করেন ১২ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত নূরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের কারণে তেল, পার্টস, রিপেয়ারিং বা সার্ভিস সেন্টারের ব্যবসা করেও অনেক বেকাররা আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। তাই এই মোটরসাইকেলকে কেন্দ্র করে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য নির্ভর এ সমাজে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে অবশ্যই ট্রাফিক আইন মেনে ও বেপরোয়া চালনা থেকে বিরত থাকা উচিত চালকদের। তবে এ এলাকায় কোনো কিশোর বয়সের ছেলেরা এ পেশায় নিয়োজিত নেই।

মৎস্যজীবী থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালনার এ পেশায় আসা গহরপুর এলাকার বাসিন্দা নাসির বাংলানিউজকে জানান, তারা পাথরঘাটা পৌর শহর কিংবা উপজেলা সদর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন যাত্রীদের। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বরগুনা, পিরোজপুর, বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের পৌঁছে দেন।

পাথরঘাটা পৌর শহরের বাদুরতলা, ট্যায়রা, তালতলা ও নতুন বাজার ব্রিজ এলাকায় চারটি অস্থায়ী স্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে পাঁচ শতাধিক যুবক ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালান। ভাড়ায় আর নিজের হোক মোটরসাইকেল চালিয়ে ব্যয় শেষে প্রতিদিন ভালো টাকাই থাকছে, যার ফলে সুন্দর জীবন যাপন করা সম্ভব। তবে বর্তমানে মাছ না থাকায় তাদের এ ব্যবসা বেশি একটা ভালো যাচ্ছে না। যাত্রী কম তবে মাছ পড়া শুরু হলে যাত্রী বাড়বে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময় : ১০১৭ ঘণ্টা, জুন, ২৯, ২০১৬
এনটি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।