ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

যমুনার রুদ্রমূর্তি উপেক্ষা করেই জীবিকা নির্বাহ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৭
যমুনার রুদ্রমূর্তি উপেক্ষা করেই জীবিকা নির্বাহ ভাঙনের মুখে যমুনা/ছবি: আরিফ জাহান

যমুনা নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘুরে: সহড়াবাড়ি ঘাটে হেলে দাঁড়িয়ে আছে একটি বটগাছ। গোঁড়ায় একের পর এক ধাক্কা মারছে যমুনার আগ্রাসী ঢেউ। সরে গেছে সিংহভাগ মাটি। গাছটি হেলে কোনোরকম শেকড়ের ওপর দণ্ডায়মান। বটবৃক্ষের মাথায় পতপত করে উড়ছে লাল নিশান। জানিয়ে দিচ্ছে বিপদ অতি সন্নিকটে।

ঠিক উত্তরপাশ লাগোয়া সহড়াবাড়ি স্পার। সময়ের ব্যবধানে স্পারের বেশির ভাগ অংশ চলে গেছে যমুনার পেটে।

যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা রক্ষায় ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। কিন্তু ক্রমাগত পানির প্রচণ্ড ধাক্কা সামলে নিয়ে কতদিন টিকতে পারবে তা বলা বড়ই মুশকিল।
 
ঘাটের ঠিক সামনের অংশ ঘিরে বিরামহীন চলছে পানির ঘূর্ণন। শোঁ শোঁ শব্দ করে তীব্র বেগে যমুনার বুক বেয়ে যাচ্ছে পানির স্রোত। সঙ্গে ঢেউয়ের গর্জন তো রয়েছেই। নতুন কোনো আগন্তক দৃশ্যগুলো দেখলে আঁতকে উঠবেন এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
 
এতোকিছুর পরও নরসুন্দর রবির চোখে-মুখে ভয়ের কোনো বালাই নেই। খুঁটির সঙ্গে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ঘাটেই বসিয়েছেন সেলুন। সেলুন থেকে মাত্র কয়েক ফুট সামনেই গর্জন ছাড়ছে হিংস্র যমুনা। তখনও রবি চিরুনি হাতে কাস্টমার বকিবুদ্দিনের চুলে গভীর মনযোগে কাঁচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় নরসুন্দর রবি জানালেন যমুনার সঙ্গে যুদ্ধ করে কীভাবে টিকে রয়েছেন তা।
 
ছয় সদস্য নিয়ে রবির সংসার। যমুনার অব্যাহত ভাঙনের মুখে ৫-৬বার ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন তিনি। ভাঙনের কারণে সেলুনও সরাতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। ভাঙন ধরলেও ঠেকানোর কোনো উপায় থাকে না।
 
‘এখন এখানে আছি কাল এসে দেখবেন হয়তো এখানে আর নেই। তাই বলে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। বেঁচে থাকার লড়াইটা ঠিক মতই চালাতে হবে। বাকিটা দেখার দায়িত্ব উপরওয়ালার। দিন শেষে ২০০-২৫০ টাকা আয় হয়। এতেই টেনেটুনে সংসার চলে’ এমন কথা বলেন রবি।
 
ভাঙনের মুখে যমুনা/ছবি: আরিফ জাহানবগুড়ার ধুনট উপজেলার যমুনার তীরবর্তী সহড়াবাড়ি ঘাট ঘিরে নরসুন্দর রবির মতো অনেকেই যমুনার ভয়ঙ্কর রুদ্রমূর্তি উপেক্ষা করে জীবিকা নির্বাহে ছোট ছোট একাধিক দোকানপাট গড়ে তুলেছেন।
 
তাদেরই আরেকজন রমজান আলী। একে একে চারবার বসতভিটা গিলেছে সর্বনাশা যমুনা। এরপরও দমে যাননি তিনি। আবার নতুনভাবে গড়েছেন। ঘাট এলাকায় খাবার হোটেল দিয়েছেন। যখন দোকান গড়েন তখন যমুনার অবস্থান ছিল অনেকটা দূরে।
 
সময়ের ব্যবধানে ভাঙতে ভাঙতে যমুনা হোটেলের অতি সন্নিকটে চলে এসেছে। এ দফায় হয়তো যমুনার করাল গ্রাস থেকে রমজান আলীর হোটেল ঠেকানো সম্ভব হবে না।
 
তিনি জানান, সহড়াবাড়ি তার গ্রামের নাম। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১০জন। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে বৃদ্ধ স্ত্রীর ভার তাকেই বইতে হয়। কারণ ছেলেরা যার যার মতো চলেন। বয়স্ক হলেও কাজেকর্মে তাকে বেশ শক্ত বলেই মনে হলো।
 
রান্নাবান্নার সিংহভাগ কাজ তিনি নিজেই করেন। বাকিটা কর্মচারীরা সারেন। হোটেল থেকে দিন শেষে সব খরচ বাদে ৭শ-৮শ টাকা আয় হয়। এতেই চলছে তাদের জীবনটা।
 
মুদি দোকানি জাহিদুল ইসলামও একই কথা জানালেন। ঘাট এলাকায় ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দু’টি খাবার হোটেল, চারটি মুদি দোকান রয়েছে। যমুনার ভয়-ডর উপেক্ষা করে এসব ব্যক্তি দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
 
তবে তারা জানান, ঘাটে চলাচলের সড়কটির বেহাল অবস্থা। এ কারণে লোকজন তুলনামূলক এ পথে কম যাতায়াতের চেষ্টা করেন। সড়ক ভালো থাকা অবস্থায় তাদের বেচাবিক্রি বেশি হতো।
 
সহড়াবাড়ি ঘাট হয়ে সারিয়াকান্দি, বৈশাখী চর, ধারাভাষ্যার চর, চল্লিশপাড়া, মল্লিকপাড়া, কাজীপুর, নাটুয়ারপাড়া, মেঘাই, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী পথে নৌকাযোগে মানুষ যাতায়াত করে থাকেন বলে জানান এসব ব্যক্তি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৭
এমবিএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।