ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

খুলনা উপকূলে বাড়ছে পানি-বাতাস-আতঙ্ক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৯
খুলনা উপকূলে বাড়ছে পানি-বাতাস-আতঙ্ক খুলনার উপকূলে বাড়ছে পানি, ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: দানবীয় রূপ নিয়ে ক্রমশ এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। শুক্রবার (০৩ মে) ঝড়টি বাংলাদেশে হানা দেওয়ার কথা রয়েছে। সাগর থেকে ধেয়ে আসতে যাওয়া এ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।

দুর্যোগের এমন আগাম বার্তার পরও শুক্রবার সকাল থেকে খুলনায় ঝলমলে রোদে দিনের সূচনা হয়েছে। মাঝে মধ্যে আকাশ মেঘলা হলেও বাতাসে সে মেঘ ভেসে গিয়ে সূর্যের আলোয় আবার ঝলমলিয়ে উঠছে।

ভ্যাপসা গরম থাকলেও বাতাসের তীব্রতার কারণে স্বস্তি মিলছে। দিনের পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। খুলনার উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক থাকলেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে নেই। তবে খুলনাঞ্চলের নদ-নদীতে বাড়ছে পানির উচ্চতা। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বতাসের তীব্রতা। এতে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে গোটা উপকূলজুড়ে। খুলনার উপকূল অঞ্চলে বাড়ছে বাতাসের তীব্রতা, ছবি: বাংলানিউজমোংলা বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ সহকারী প্রকৌশলী (নৌ) নাসির উদ্দিন সকাল ১১টায় বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশুর নদীর পানি প্রায় দুই ফুট বেড়েছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে নদীতে।

তবে ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের হোগলা, কয়রা ইউনিয়নের গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, উত্তর বেদকাশীর গাজীপাড়া, বিনাপানি, গাব্বুনিয়া, দক্ষিণ বেদকাশির জোড়শিং, চোরামুখা, আংটিহারা, গোলখালী, খাশিটানা, মহেশ্বরীপুরের সরদারঘাট, পাইকগাছা উপজেলার শিবসা পাড়ের গড়ইখালী, দাকোপের বাণিশান্তা, বাজুয়া, কামারখোলা, সুতারখালী, কালাবগী, নলিয়ান, জেলেখালী, জয়নগর, গুনারী ও বটিয়াঘাটা উপজেলার শিয়ালীডাঙ্গা এলাকা। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে, ছবি: বাংলানিউজবাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জের কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। একইভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার জেলেখালী, দয়ারঘাট, কেয়ারগাতি, চাকলা, বিছট, কাকবসিয়া, কোলা, হাজারাখালী, ঘোলা ত্রিমোহনী, হিজলিয়া, চণ্ডিতলা ও বুধহাটার তেঁতুলতলা, দেবহাটা উপজেলার সুশীলগাতী, চরকোমরপুর, খারাট, টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এবং শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ ও রমজাননগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ।

আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও ক্ষতি এড়াতে উপকূলের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খুলনার কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে কেউ যায়নি।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে থাকা কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জাফর রানা বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী আতঙ্ক থাকলেও এখনও কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি। ক্ষতি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে ১২৬ সদস্যের সাতটি টিম সক্রিয় রয়েছে। বাড়ছে নদীর পানি ও ঢেউয়ের উচ্চতা, ছবি: বাংলানিউজএদিকে, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য বলা হচ্ছে। নৌকা, ট্রলারসহ ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেনা ও নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে খুলনার নয়টি উপজেলার সব ইউনিয়নে একটি ও প্রতি উপজেলা সদরে পাঁচটিসহ মোট ১১৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার খুলনার আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও বাতাসের তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে। মধ্যরাতে ফণী আঘাত হানবে খুলনায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৯
এমআরএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।