ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জেলে জীবন

ও দাদি মোর আব্বায় কি আইবেনা?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৯
ও দাদি মোর আব্বায় কি আইবেনা? দাদির কোলে শিশু তাছরিফা, ছবি: বাংলানিউজ

বরগুনা, পাথরঘাটার বাদুরতলা জেলে পল্লী থেকে: তাছরিফা; বয়স পাঁচ বছর। জন্মের পর বাবার আদর-স্নেহ পেয়েছে। আদর-স্নেহের মর্ম বোঝার মতো সময় হয়নি। তবে বাবার স্পর্শ অনুভূতি পাওয়ার সময় হয়েছে। এছাড়া জন্মের পর বাবার সঙ্গে ঈদ করেছে। কিন্তু এবার পাঁচ বছর পেরিয়ে ভালো-মন্দ বোঝার সঙ্গে সঙ্গে বাবা হারানোর অনুভূতিও বুঝতে পেরেছে সে। ঈদ ঘিরে তার মধ্যে সেই আনন্দ নেই। শিশু তাছরিফা এখন শুধু বলে বেড়ায়, ‘আব্বায় কি আইবেনা?’

একই গ্রামের নিখোঁজ আট জেলের পরিবারের কেমন ঈদ কাটবে, জানার জন্য গেলে, শিশু তাছরিফার এমন আবেগের কথা জানালেন তারই দাদি ও নিখোঁজ জেলে শাহিন মিয়ার মা শাহিনুর বেগম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আজও নাতিডা (নাতনি) আমারে জিগাইছে, ও দাদি মোর আব্বায় কি আইবেনা? মোর লইগ্যা কি নতুন জামা কাপড় আনবে না।

কিন্তু ওই অবুঝ শিশু জানে না, ওর বাবা আর ফিরে আসবে না, ওর বাবা এ পৃথিবীতে আর নেই।

২০১৮ সালের ২১ জুলাই গভীর সমুদ্রে ১৮ জেলেসহ শাহিন ফিটারের মালিকানা এফবি শাহজালাল ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে তিনদিন পর ১০ জেলে উদ্ধার হলেও বাকি আট জেলেসহ ট্রলার নিখোজ রয়ে যায়। প্রায় এক বছর হতে চলছে, কিন্তু এখনও ওই জেলেরা ফিরে আসেননি।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বাংলানিউজে ‘এখনো অপেক্ষায় তারা...’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরে স্বেচ্ছায় সেবাদান সংগঠন ‘আস্থা’র নজরে আসলে ট্রলার মালিকের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথ প্রচেষ্টায় স্বজন হারা আট জেলে পরিবারের পাশে সহায়তার হাত বাড়ায় তারা।

সোমবার (০৩ জুন) বিকেলে পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জেলে পল্লী বাদুরতলা গ্রামে নিখোঁজ জেলে বাবুল মিয়ার বাড়িতে সহায়তা দেওয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- আস্থার সভাপতি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন, ট্রলার মালিক শাহিন ফিটার, এএসএম জসিম প্রমুখ। সহায়তার মধ্যে ছিল, ঈদের দিনের জন্য সেমাই, চিনিসহ নাস্তা সামগ্রী। এছাড়া প্রতি পরিবারকে নগদ দেড় হাজার টাকা ও শাড়ি। ঈদ সামগ্রী পেলেন আট জেলে পরিবারের সদস্যরা, ছবি: বাংলানিউজএ সময় সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। ছেলে শাহিন মিয়ার রেখে যাওয়া কন্যা সন্তানটি কোলে নিয়ে ঈদ সামগ্রী ও নগদ টাকা হাতে নেওয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা শাহিনুর বেগম। কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শাহিনুর বেগম বলেন, আজও নাতনি তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করেছে। বলেছে ‘ও দাদি আব্বায় কি আইবেনা’। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিখোঁজ বাবুলের স্ত্রী শাহিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোগো সংসারের কর্তাই চইল্যা গ্যাছে। মোগো দেহার কেউ নাই। ঈদের দিন দুইডা পোলারে নতুন জামা কিন্যা দিমু হেই টাহাই নাই। ’

ট্রলার মালিক শাহিন ফিটার বাংলানিউকে বলেন, আট জেলের সঙ্গে আমার ট্রলারও নিখোঁজ। আমার সাধ্য অনুযায়ী অসহায় জেলেদের আর্থিকসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করবো। তাদের পাশে আমি সবসময়ই আছি।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ট্রলার মালিক ও আস্থা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই, জেলে পরিবারের পাশে সহায়তার হাত বাড়ানোর জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৯
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।