ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জীবন-জীবিকা

‘পোলাডারে লইয়া বাঁচতে চাই’

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
‘পোলাডারে লইয়া বাঁচতে চাই’

বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরসহ উপকূলীয় বাসিন্দাদের জীবন চলে অতি কষ্টে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগের সঙ্গে তাদের বসবাস। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে উপকূলবাসী। আবার অনেকের ভিটেমাটি না থাকায় সরকারি জমিতে থাকেন, আবার অনেক নারী স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটে থেকেও বঞ্চিত। উপকূলবাসীর অন্তহীন দুর্দশা এবং জীবন-জীবিকার চিত্র নিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা করেসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম খোকনের প্রতিবেদনের পঞ্চম পর্ব। 

উপকূলের প্রান্তিক জনপদ ঘুরে: স্বামী হারিয়েছেন দুই বছর আগে। সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে বিদেশি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবে যায়।

এরপর থেকে আজও সন্ধান পাওয়া যায়নি তার স্বামীর। একদিকে স্বামী হারানোর শোক, তারপর বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধি ছেলের দেখাশোনা।  

অপরদিকে স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের হাঁকডাক। প্রতিদিনই এ হাঁকডাকের যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে শিমলা বেগমকে।  

শিমলার মতো অনেক নারী আছেন যারা এ উপকূলীয় অঞ্চলের খেটে খাওয়া জেলের সংসার করছেন। অনেক জেলে পরিবার প্রধান গভীর সমুদ্রে গিয়ে আর ফিরে আসেনি আবার অনেক জেলে ট্রলার ডুবে মারা গেছেন। তাদের সংসারের হাল ধরেছেন শিমলার মতো অনেক নারী। উপকূলীয় অঞ্চলে কত সংখ্যক জেলে পরিবার প্রধান নিখোঁজ বা মারা গেছেন এমন সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও একেকটি গ্রামে ২ থেকে ৪ বাড়িতে পাওয়া যাবে না এমনটা নয়। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে অসংখ্য জেলে সাগরে গিয়ে মারা গেছে এবং নিখোঁজ হয়েছে। আজও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজদের। অনেক নিখোঁজ এবং নিহত জেলের পরিবার প্রধান এখন নারীরা। তবে শিমলার বিষয় একটু ব্যতিক্রম।  

সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদ ঘেঁষা কাঁঠালতলীর আমতলী গ্রাম। যে গ্রামে শিমলা বেগমের (৩৭) বসবাস। স্বামী বাবুল হাওলাদার দুই বছর আগে সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে বিদেশি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবে যায়। আর ফিরে আসেনি বাবুল হাওলাদার। ফিরে আসবে কিনা তাও জানে না শিমলা বেগম ও তার প্রতিবন্ধি শিশুপুত্র সিমরান (১১)।  

একদিকে স্বামী হারানো শোক, আরেকদিকে বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধি ছেলে সিমরানকে নিয়ে অসহায় জীবন যাপন। ভাইদের দেওয়া টাকা আর প্রতিবন্ধী ছেলের ভাতা দিয়ে খুবই টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলছে তার সংসার। এর মধ্যে স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটেমাটি থেকে দেবরের নামিয়ে দেওয়ার হাঁকডাকে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় মরছে শিমলা।  

সরেজমিনে শিমলা বেগমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে অনেক ফলদ ও বনজ গাছ লাগিয়েছেন তিনি। বাইরে ফিটফাট থাকলেও তার মনে রয়েছে স্বামীহারা শোক আর পেটে ক্ষুধা। মনে শান্তি নেই শিমলা বেগমের। পরনের কাপড়ের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কত কষ্টে আছেন তিনি। সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত শিমলা। ছেলে কথা বলতে পারে না, পারে না হাঁটাচলা করতে।  

শিমলা বেগম বলেন, পোলাডা লইয়া প্রায়ই দিন না খাইয়া থাহি, পরনের কাপড়ও কিনতে পারছিনা। পোলাডায় কথা কইতে পারে না, হাঁটতেও পারে না। মা ডাকতেও পারে না। মা ডাক শোনার জন্য কত অপেক্ষা আমার।

নারী নেত্রী মুনিরা ইয়াসমিন খুশি বলেন, নারীরাও মানুষ, তাদেরও আছে অধিকার। এমনিতেই স্বামীহারা শিমলা বেগম প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে অসহায়, তারপরও দেবররা যদি এমন আচরণ করে থাকে সেটি অবশ্যই অপরাধ। তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।  

প্রথম পর্ব
** সারাদিন শুঁটকি বাইছা ২শ টাহা পাই!


দ্বিতীয় পর্ব
** মরলে মোগো মাডি দেবে খাস পুহুরের পাড়ে


তৃতীয় পর্ব
** খড়ের ঘরে আমেনার জীবন


চতুর্থ পর্ব
** স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে প্রান্তিক নারী!


বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।