ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২১
উপকূলে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

সাতক্ষীরা: ‘উপকূল রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’ স্লোগানে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ প্রবণ এলাকা ঘোষণা, পৃথক উপকূলীয় বোর্ড গঠন এবং জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দসহ ২১ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।

সোমবার (৩১ মে) সকাল ১১টায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার নামে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারে চলে সীমাহীন দুর্নীতি। আর এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকার বিগত নয় বছরে বেড়িবাঁধ সংস্কারে ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাঁধা হয়নি উপকূলীয় বাঁধ। সাতক্ষীরার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারে সরকার শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে সেই বাঁধ সংস্কার হয়নি। যে কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর ও সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে দক্ষিণ জনপদের কয়েক লাখ মানুষ। শুধু তাই নয়, স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কার করে আর বিল তুলে নেন সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

বক্তারা বলেন, সরকার বরাদ্দ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার নিয়োগ করেন। সেই ঠিকাদার কাজ না করে অপেক্ষা করতে থাকেন আরও একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের। দুর্যোগের পরে ওই ঠিকাদার বলেন, কাজ তো করেছিলাম, কিন্তু সব ভেসে গেছে জলোচ্ছ্বাসে। এভাবে প্রতিবারই কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সরকারের কোনো সংস্থা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এ ব্যাপারে মুখে ছিপি মেরে রাখে। তারাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, সিডর, আইলা, বুলবুল, মহাসেন, ফনি, আম্পান, ইয়াসের মতো প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে উপকূলের মানুষ আজও বেঁচে আছেন। প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ত্রাণের নামে চলে চরম দুর্নীতি। কখনো কখনো ত্রাণের যে তালিকা করা হয়, তার চেয়েও কম মানুষ ওই এলাকায় বসবাস করেন। একটি বিশেষ মহলের দ্বারা বলানো হয়-‘আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বাঁধ চাই। ’

আমরা ত্রাণও চাই, টেকসই বেড়িবাঁধও চাই। উপকূল রক্ষা করতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সেই বাঁধ বাঁধতে হলে বন্ধ করতে হবে দুর্নীতি। বিগত সময়ে যারা বাঁধের টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে নয়-ছয় করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, দাবি তোলেন বক্তারা।

বক্তারা এসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবণ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা, এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন, দুর্যোগের কারণে এ এলাকা থেকে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ, জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ, সামগ্রীক উন্নয়ন অংশীদার সুনির্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতসহ ২১ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।

বক্তারা সম্প্রতি পদ্মপুকুরে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে আন্দোলনরত দুই স্বেচ্ছাসেবক ও সংবাদ কর্মীকে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে ও জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব আলী নূর খান বাবুলর পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম-সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন-উর রশিদ, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, বাংলাদেশ জাসদের জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, উত্তরণের অ্যাডভোকেট মুনিরউদ্দিন, সুশীলনের দেবরঞ্জন বিশ্বাস, শ্রমিক নেতা রবিউল ইসলাম রবি, আক্তারুজ্জামান মহব্বত, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, পানি কমিটির নেতা আবেদার রহমান, নাগরিক নেতা মফিজুর রহমান, সূর্যের আলোর বার্তা সম্পাদক মুনসুর রহমানসহ অনেকে।

দুর্যোগপূর্ণ বৃষ্টিমূখর আবহাওয়ার মধ্যে মানববন্ধন কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকসহ শতাধিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।