ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

‘মোগো কপালডাই পোড়া’ 

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
‘মোগো কপালডাই পোড়া’  জাল বুনায় ব্যস্ত জেলেরা

পাথরঘাটা (বরগুনা): ‘এমনিতেই সাগরে পানির মইধ্যে থাহি জীবনের ঝুঁকি নিয়া, কোন সময় কী অইয়া যায়। হেরপর যদি সাগরে তুফান অয়, যে কোনো সময় ট্রলার পানির নিচে তলাইয়া যায়।

এহন একের পর এক ঝড়, সাগর উত্তাল থাহে। ’

উত্তাল সাগর থেকে ফিরে বাংলানিউজের কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সাগরে মাছধরা একটি ট্রলারের মাঝি জাকির হোসেন। তিনি বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের গহরপুর গ্রামের বাসিন্দা।

জাকির হোসেন বলেন, কূল দিয়া গেলেই সাগরে তুফান, একের পর এক সিগনাল, মাছ না ধইরাই কূলে আসতে অয়। মোগো কপালডাই পোড়া! শূন্য হাতে যাই, আবার শূন্য হাতেই ঘাটে আই।  

বার বার বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল, ট্রলার ডুবি, নিখোঁজ, জেলের মৃত্যু, নিজ দেশের জলসীমা অতিক্রম করে ভারতীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশের দায়ে আটক এ যেন উপকূলের জেলেদের ওপর শনির দশা কাটছেই না। লাখ লাখ টাকার রসদসামগ্রী আর বুক ভরা আশা নিয়ে সাগরে গেলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। গত দুই মাস ধরে উপকূলের জেলেদের ওপর প্রকৃতির এমন আচরণ চলছে।  

এদিকে, গত তিনদিন ধরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। গভীর সমুদ্রে প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় অনেক মাছ ধরার ট্রলার নিরাপদে এসেছে। ইতোমধ্যেই যারা সাগর থেকে উপকূলে এসেছেন, তারা খালি হাতে ফিরে এসেছেন। কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে জেলেদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। পাথরঘাটার উপকূলজুড়ে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে।  

দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। মাছের আশায় দিন-রাত উত্তাল নদীতে ভেসে থেকে দেনার বোঝা ভারী করে শূন্য হাতে ফিরছে জেলে ট্রলারগুলো। ফলে সঙ্কটকালে বিকল্প উৎস থেকে আয়ের পথও পাচ্ছেন না জেলেরা। একের পর এক বৈরী আবহাওয়ায় নাকাল পাথরঘাটার উপকূলের জেলেরা। অবশেষে বৈরী আবহাওয়া কাটিয়ে সপ্তাহখানেক আগে সাগরে মাছ শিকারে ট্রলার নিয়ে যান জেলেরা। আবার আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় এসব ট্রলার একে একে ঘাটে ভিড়ছে।  

ফিরে আসা জেলেরা জানান, সাগরে জাল ফেলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। এরপর আবার সাগর উত্তাল, প্রচণ্ড ঝড় বইছে।  

আবুল হোসেন, আলাউদ্দিনসহ একাধিক জেলেরা বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ দিন আগে ট্রিপ দিয়ে আসছি, ভালো মাছ পেয়েছিলাম। এবার তেমন কোনো মাছ পাইনি। এবার বাজার খরচ আসবে না। এতে সমস্যা হচ্ছে আমাদের যে খরচ হচ্ছে, মাছ বিক্রি করেও তা তোলা সম্ভব হচ্ছে না।  

তারা আরও বলেন, গত দুই মাস ধরে বার বার সাগর উত্তাল হওয়ায় খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। আল্লাহ যেন আমাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।  



বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সাগর থেকে সব ট্রলার ঘাটে এসেছে।  বার বার আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে না, খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, এখন যে অবস্থা তাতে মৎস্যজীবীরা পথে বসা ছাড়া। উপায় নেই।

এদিকে, পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া গ্রামের মোশাররফ (আদারু) গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে বৈরী আবহাওয়ায় বলেশ্বর নদে মাছ ধরার ট্রলার থেকে পড়ে নিখোঁজ হয়। এখনও পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি!

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।