ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উদযাপন করলো লাইফবয়-ব্র্যাক

বিজনেস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উদযাপন করলো লাইফবয়-ব্র্যাক

ঢাকা: স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’ নামে অভিনব এক কর্মসূচি চালুর মাধ্যমে ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’ পালন করছে ইউনিলিভার এর বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যকর সাবানের ব্র্যান্ড লাইফবয়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় নিত্যব্যবহার্য ও ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) উৎপাদন এবং বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

 

মহামারি পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’টি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ইউবিএল, যেখানে খেলার মাধ্যমে শিশুদের কোমল মনকে উজ্জীবিত করে হাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি৪) অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার বণিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।  

তারা স্কুল পরিদর্শন করে খেলাধুলা ও আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার সহজ অভ্যাস শেখানোর কার্যক্রমে অংশ নেন।  

চলতি বছর লাইফবয় ও ব্র্যাক যৌথভাবে দেশের এক হাজার ৫০০টি স্কুলে অংশগ্রহণমূলক ও আনন্দদায়ক উপায়ে শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস সম্পর্কে শেখাতে সাত লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছে।

‘বিহেভিয়ার চেঞ্জ মডেল’ বা ‘অভ্যাস পরিবর্তন মডেল’ অনুসরণ করে ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’-এ কয়েক ধরনের খেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাপ ও মই এবং কাগজের ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় কিছু গেমস। এসব গেমস খেলার সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়া শেখা এবং তা অনুশীলন করার বিষয়টি সুকৌশলে শিশুদের নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

‘ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো মেডিকেল সেন্টার’ এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালে করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে, মানুষের হাতের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার হার ছিল ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২০ সালের মার্চে তা সর্বোচ্চ ৯২ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয় কিন্তু ২০২০ সালের আগস্টে তা কমে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

এতে হাতের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের হার কমেছে এবং সব আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটেই এ হারে উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশেও অনুরূপ প্রবণতা দেখা গেছে। হাত ধোয়ার অভ্যাসের  কমার হার উদ্বেগজনক ফলে প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণ ও রোগে অনেক শিশু অসুস্থ হতে পারে। স্বাস্থ্যগত এ অসুস্থতা মোকাবিলা এবং বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে নতুন করে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে লাইফবয়। এই ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’ কর্মসূচি শিশুদের যথাযথভাবে হাতের পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে শেখা এবং তা অনুশীলন করাকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে একটি অংশগ্রহণমূলক সমন্বিত সমাধান দিতে সক্ষম হবে।

১৯৯০ দশক থেকে দেশে লাইফবয়-এর একটি উল্লেখযোগ্য কাজের ক্ষেত্র হলো- হাত ধোয়ার আচরণ পরিবর্তন। ২০১১ সাল থেকে ১১ মিলিয়নেরও বেশি শিশুকে নিয়ে সরাসরি কাজ করেছে ‘লাইফবয় স্কুল প্রোগ্রাম’।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি৪), অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার বণিক বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ধরনের কাজই হাত দিয়ে করতে হয়, তাই হাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন জীবন নিশ্চিতে হাত ধোয়ার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের জন্য স্কুল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোকে দূর করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যা মোকাবিলা করতে বহুদিন ধরে দেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইউনিলিভার।

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মধ্যে হাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকারিতা তুলে ধরা এবং এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ইউনিলিভার এবং ব্র্যাকের এ অভিনব উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার বলেন, দেশের জন্য ‘ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন’ (ওয়াশ) সম্পর্কিত রোগগুলো সব সময়ই প্রকট সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যু ব্যাপক হারে কমলেও, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু হারের অন্যতম প্রধান কারণ এখনো ডায়রিয়া, প্রতি হাজারে যার সংখ্যা প্রায় ছয়জন। দেশের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে হাতের স্বাস্থ্যবিধিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, কারণ হাতের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ত্রিমাত্রিক: ‘জীবন বাঁচানো, অর্থ সাশ্রয় ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ’। দেশে সর্বজনীন হাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মানুষের টেকসই অনুশীলনের অভাব, যার কারণ হিসেবে ‘কার্যকর আচরণ পরিবর্তন পদ্ধতির অভাবের’ কথা বলা যায়। লাইফবয় আমাদের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি, যার স্পষ্ট উদ্দেশ্য- জীবন বাঁচানো এবং মায়েদের সন্তানরা যাতে কম অসুস্থ হয় তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করা। ২০০৯ সাল থেকে লাইফবয় দেশে হাতের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং ব্র্যান্ডটি ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এ বছর, বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উদযাপনের জন্য লাইফবয় ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’ চালু করেছে, যার লক্ষ্য হলো হাত ধোয়াকে আনন্দদায়ক, চিত্তাকর্ষক এবং দৈনন্দিন খেলার একটি অংশ হিসেবে তৈরি করে স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোকে দূর করা।

আমরা বিশ্বাস করি, শিশুদের মনোযোগ ও কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা সারাজীবনের একটি অভ্যাস হিসেবে হাত ধোয়ার গুরুত্বকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব, যাতে মহামারি পরবর্তী সময়েও একটি আনন্দদায়ক ও চিরন্তন অভ্যাস হিসেবে শিশুদের মধ্যে এটি থেকে যায়।  

দেশে সার্বজনীন হাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দেশের সরকারের রোডম্যাপ অর্জনে লাইফবয়ের এ কর্মসূচি অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ‘লাইফবয় বিহেভিয়ার চেঞ্জ ক্যাম্পেইন’ পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করায় আমি আমাদের দীর্ঘদিনের অংশীদার ব্র্যাককে ধন্যবাদ জানাই এবং আমাদের এ সমন্বিত উদ্যোগ দেশের জন্য এসডিজি লক্ষ্য-৬ অর্জনে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, যখন আমরা মহামারি পরবর্তী বিশ্বে বিভিন্ন জটিলতার মুখোমুখি হয়েছিলাম, তখন বিশেষ করে আমাদের শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতার মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় হাতের পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি। স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা ও দৈনন্দিন জীবনে হাত ধোয়াকে উপভোগ্যভাবে ফিরিয়ে আনতে এ পদক্ষেপে লাইফবয়ের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে ব্র্যাক গর্বিত। সমাজের মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ক্ষমতায়িত করতে ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’ ও ব্র্যাক একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। এ সহযোগিতার মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়া বিষয়ে প্রশিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত করাই আমাদের লক্ষ্য, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হাত ধোয়াকে সারা জীবনের একটি অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে তুলবে।

এ সময় ইউবিএল- এর পার্সোনাল কেয়ার বিজনেস হেড ও মার্কেটিং ডিরেক্টর নীলুশি জায়াতিলেকে; কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস এর ডিরেক্টর শামিমা আক্তার; এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

খেলাধুলা ও বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আনন্দঘন পরিবেশে হাত ধোয়া শেখার কর্মসূচিতে যুক্ত ছিল ইউবিএল টিম।

দেশের শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ এবং আরও স্বাস্থ্যসম্মত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে বদ্ধপরিকর ইউবিএল ও ব্র্যাক।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।