ঢাকা: বছরব্যাপী পাইলট প্রকল্প সফলভাবে শেষ করার পর দেশে প্রথমবারের মতো জামানতবিহীন ইনস্ট্যান্ট ডিজিটাল ন্যানো ঋণ নিয়ে এলো সিটি ব্যাংক, যা বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে নিতে পারবেন বিকাশ গ্রাহকেরা।
এ ঋণের আওতায়, ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা সাপেক্ষে গ্রাহক তাৎক্ষণিকভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের জামানতবিহীন ডিজিটাল ন্যানো লোন পাবেন।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথি হিসেবে এ ডিজিটাল ঋণ সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের ও সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর, সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর প্রধান মো. জাফরুল হাসান, বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দও এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা জানান, বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ ও পরিশোধযোগ্য সিটি ব্যাংকের এ জামানতবিহীন ইনস্ট্যান্ট ডিজিটাল ন্যানো লোন দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে একটি যুগান্তকারী সংযোজন। এর ফলে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা একটি বিশাল জনগোষ্ঠী কাগজবিহীন ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা বিবেচনায় তাৎক্ষণিক ঋণ পাওয়ার সুযোগ পেলেন। যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময় মোবাইল অ্যাপ দিয়েই একটি প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ঋণের আবেদন করা এবং মোবাইল ফোন অ্যাপেই ঋণ পাওয়া, অপেক্ষাকৃত কম ইন্টারেস্টে ঋণ পরিশোধ ও ঋণ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়ার সুযোগ গ্রাহককে সত্যিকার অর্থেই আর্থিক লেনদেনে আরো স্বাধীনতা ও সক্ষমতা এনে দিল। এ উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশন বাস্তবায়নের পথেও একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
গ্রাহকের বিকাশ লেনদেন এবং সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পলিসির ওপর ভিত্তি করে ঋণ পাওয়ার উপযুক্ততা এবং ঋণের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। ডিজিটাল ন্যানো লোন চালু উপলক্ষে সিটি ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের কাছে থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কোনো প্রসেসিং ফি নেবে না।
প্রযুক্তি সহায়তায় সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ন্যানো লোনের ক্ষেত্রে দৈনিক হারে ইন্টারেস্ট নির্ধারিত হবে। ফলে একজন ঋণগ্রহীতা মেয়াদ পূর্তির আগেও ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন এবং সে ক্ষেত্রে তাকে শুধুমাত্র সেই ক’দিনের জন্যই সুদ বহন করতে হবে। অগ্রীম নিষ্পত্তির জন্যও কোনো বাড়তি খরচ হবে না। ঋণগ্রহীতাদের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ন্যানো লোনের মতো উদ্ভাবনী সেবা আনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বিকাশ ও এর কৌশলগত অংশীদার অ্যান্ট গ্রুপ। ঋণ নেওয়ার জন্য উপযোগী গ্রাহককে তাদের বিকাশ অ্যাপের ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লোন’ আইকনে ট্যাপ করতে হবে। পরবর্তী ধাপে সিটি ব্যাংক অনুমোদিত সীমার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ঋণের পরিমাণ লিখতে হবে এবং শর্তাবলীতে সম্মতি দিতে হবে। এরপর বিকাশ পিন দিলে সঙ্গে সঙ্গেই-অবশ্যই ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতাসাপেক্ষে-বিকাশ অ্যাকাউন্টে ঋণের টাকা পেয়ে যাবেন গ্রাহক।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, ‘ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষের জন্য ব্যাংকের জামানতবিহীন তাৎক্ষণিক ঋণ পাওয়ার সুযোগ-এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতার গল্প। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা নিয়ে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সিটি ব্যাংক ও বিকাশের এ যুগান্তকারী উদ্যোগ জনমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথে নতুন এক দিগন্তের উন্মোচন ঘটালো আজ। আমি নিশ্চিত, ঋণের এ সহজলভ্যতা দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, ‘সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির কল্যাণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুত এগিয়ে চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন আরও বেশি জনবান্ধব, আরও বেশি ডিজিটাল। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ন্যানো লোন একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। নতুন এ সেবা চালু করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সহায়তা ছিল, তা সামনের দিনেও অব্যাহত থাকবে। ’
সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণে আমাদের এ ডিজিটাল ন্যানো লোন বড় ভূমিকা রাখবে। এ লোন নিতে গ্রাহকদের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকার কোনো প্রয়োজন পড়বে না। তারা নিজ নিজ বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই এ লোন নিতে ও পরিশোধ করতে পারবেন। এ লোন নেওয়ার জন্য কোনো জামানতেরও প্রয়োজন হবে না। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রসার ঘটবে। ’
ডিজিটাল ন্যানো লোন সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু করার বিষয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়টাকে ডিপোজিট হিসেবে নেওয়ার জন্য এজেন্ট ব্যাংক খুলবেন, তাদের টাকা ট্রান্সফার করে এমএফএস ব্যবসা করবেন, কিন্তু তাদের বিশ্বাস করে ঋণ সুবিধা দেবেন না, সেটা তো নৈতিকভাবে ঠিক হলো না। ডিজিটাল ন্যানো লোনের যুগে সিটি ব্যাংক ও বিকাশের এ পদার্পণ আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের একটা বড় নৈতিক ঘাটতির মোচন ঘটালো। ’
এ প্রসঙ্গে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, ‘ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যে আন্তঃলেনদেন সেবার কল্যাণে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিকাশের মত কার্যকর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও বিশাল গ্রাহক ভিত্তিকে ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সৃজনশীল নতুন নতুন সেবা চালু করতে পারে। এতে গ্রাহকদের কাছে আরো সহজে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হবে। এই উদ্যোগ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিকাশের মধ্যকার সম্পূরক ও আস্থার সম্পর্কের স্বীকৃতিস্বরূপ। ডিজিটাল ন্যানো লোন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগকে আরও বিস্তৃত করবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
এসই/এসআই