ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আদালত

বিচার বিভাগের সচিবালয় গঠনের ক্ষমতা নেই মন্ত্রণালয়ের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৬
বিচার বিভাগের সচিবালয় গঠনের ক্ষমতা নেই মন্ত্রণালয়ের

ঢাকা: হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির মধ্যে বিচার বিভাগের সচিবালয় গঠন করার কোনো ক্ষমতা নেই।
 
বিচারপতির শব্দ চয়ন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত সম্মানিত বিচারপতি, আমি তার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।

তিনি এ রকম শব্দ চয়ন করবেন এটা আমি আশা করিনি’।
 
গত সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতির ২২ বছর পূর্তি উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি বলে এলেও আইন মন্ত্রণালয় তাতে গা করছে না বলে অভিযোগ করেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন।
 
বিচারপতির এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি তুলে ধরেন।
 
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গতকাল একটি খবরের কাগজে দেখলাম, একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বিচারপতি- আমি তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। তিনি একটা মিটিংয়ের মধ্যে বলেছেন যে, আইন মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগের সচিবালয়ের ব্যপারে সুপ্রিম কোর্টকে.... তিনি যে শব্দ বলেছেন আমি তা বলবো না। আমার দু:খ লেগেছে এ জন্য যে, একজন অত্যন্ত সম্মানিত বিচারপতি, আমি তার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তিনি এ রকম শব্দ চয়ন করবেন এটা আমি আশা করিনি।

‘কিন্তু কথা হচ্ছে- আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির মধ্যে বিচার বিভাগের সচিবালয় গঠন করার কোনো ক্ষমতা নেই। দেশে একটাই সেক্রেটারিয়েট। প্রধানমন্ত্রীরও কোনো সেক্রেটারিয়েট নেই। রাষ্ট্রপতিরও নেই। আছে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। সেক্ষেত্রে যদি বিচার বিভাগের সচিবালয় করতে হয় তাহলে একটা প্রসেজের মাধ্যমে করতে হবে। আইন  করে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অনুমোদন নিয়ে পার্লামেন্টে পাস করে তারপরে করা যায়। সেক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। এজন্যে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের কর্মপরিধিতে পড়ে না। খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে সে জন্য ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন, তাই ব্যাখ্যা দিচ্ছি’।
 
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পরিস্কার করে বলতে চাই- কাউকে আমি দোষারোপ করছি না এ বক্তব্যের জন্য। কিন্তু এ বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে, সেজন্য এটা পরিস্কার করা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। মন্ত্রণালয় থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা যেটা বলা হয়, বিচার বিভাগের সেই স্বাধীনতা যাতে সম্পূর্ণভাবে থাকে, সেজন্যই যতোটুকু সহযোগিতা করা যায়, আমরা করছি’।
 
আনিসুল হক বলেন, ‘আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা যদি আসে, তাহলে বলতেই হবে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম যখন সরকার গঠন করেন এবং ০২ অক্টোবর বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করা হয়, সেই থেকে প্রথম শুরু হয়েছিল আইনের শাসন কায়েম করার ফাউন্ডেশন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে শুধু আইনের শাসনই কায়েম হয়েছে তা নয়, দূর হয়েছে কালচার অব ইমপিউনিটি (বিচারহীনতার সংস্কৃতি)। আর কালচার অব ইমপিউনিটির কারণেই আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ এসব বিচারের দরজা খুলে গেছে’।
 
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এই সরকারের চেয়ে অন্য কোনো সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য কমিটেড ছিল না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাপারে আমাদের যে কমিটমেন্ট সেই কমিটমেন্ট থেকে এক সুতা পরিমাণও নড়বো না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাপারে কোনো আপোস করা হবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন, বাংলদেশের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেটা উপহার দিয়েছিলেন, তাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেভাবে লেখা আছে, ঠিক সেভাবেই বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে। এটি একটি গ্র্যাজুয়াল প্রসেস। বাই প্র্যাকটিস এটি বাড়বে, কমবে না’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৬
এসএমএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।