ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আদালত

ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাড়িটি সরকারেরই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাড়িটি সরকারেরই

ঢাকা: রাজধানীর ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডে অবস্থিত ৪০ নম্বর বাড়িটি সরকারেরই থাকবে বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ওই বাড়ির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেখানো পুলিশের এক সদস্যসহ দুইজনকে ২০০ টাকা করে জরিমানা করেছেন উচ্চ আদালত।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সরকারের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

জরিমানাপ্রাপ্ত দুই ব্যক্তি হলেন- পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহিন ও প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন।

আদালতের আদেশের পর জরিমানার টাকা তারা মঙ্গলবারই জমা দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিবাদী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও শাহ মুনির শরীফ।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে পরিত্যক্ত বাড়িটি আত্মসাত করার চেষ্টা হচ্ছিল। আদালত প্রতারকদের চিহ্নিত করেছেন ও তাদের জরিমানা করেছেন। আদালত বলেছেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে যারা সম্পদ ছাড়িয়ে নেয় তাদের বেশির ভাগই ভুয়া।

ধানমন্ডির এ বাড়িটির মালিক ছিলেন জনৈক হাকিম এস এ আলী। তিনি ১৯৭১ সালে ভারতে চলে যান। পরে সরকার বাড়িটিকে পরিত্যক্ত বাড়ি ঘোষণা করে এবং তৎকালীন সিরাজগঞ্জের এমপি সৈয়দ হায়দার আলীকে ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মাসিক ৭শ’ টাকা ভাড়া পরিশোধের শর্তে পূর্ত মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয়।

১৯৭৫ সালে পূর্ত মন্ত্রণালয় বাড়িটি ফেরত নিয়ে নাজমা মজিদকে বরাদ্দ দেয়। পরে এ বাড়িটি নিয়ে একাধিক মামলা হয়। সর্বশেষ মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক ব্যক্তি পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. শাহিনের নামে একটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আম-মোক্তারনামা) তৈরি করেন। এই আম-মোক্তারনামায় বাড়িটির মূল মালিক হাকিম এস এ আলীকে মৃত দেখিয়ে তার স্ত্রী মোছা. নাজনীন বেগম ও কন্যা মোছা. রানা আলী ও ফারজানা আলী হাকিমকে উত্তরাধিকার দেখানো হয়। হাকিম এস এ আলীর উত্তরাধিকার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে থাকেন উল্লেখ করে বাড়িটির মালিকানা পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. শাহিনকে দেখানো হয়।

এ নিয়ে বিচারিক আদালত ২০০০ সালের ২ মে বাদীপক্ষে (শাহিনের) রায় দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার হাইকোর্টে আপিল করে। হাইকোর্ট সরকারের আবেদন খারিজ করে ২০০৫ সালে রায় দেন। এরপর সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন করে আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগ এবারও সরকারের আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর সরকার রিভিউ আবেদন করে। তবে ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল রিভিউ আবেদন গ্রহণ করেন এবং আপিল করার অনুমতি দেন। এরপর সরকার আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানিকালে আম-মোক্তারনামা নিয়ে আদালত পুলিশ কর্মকর্তা মো. শাহীন ও তার আত্মীয় প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেনকে তলব করেন। ওই দুই ব্যক্তি মঙ্গলবার আদালতে হাজির হন।

প্রথমেই আদালত মো. শাহীনের বক্তব্য জানতে চান। আদালতের প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারছিলেন না এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আদালতের প্রশ্নের জবাবে মূল মালিককে চেনেন না এবং তার নামও জানেন না বলে জানান।

তিনি বলেন, তার আত্মীয় মোয়াজ্জেম হোসেনই তার নামে (মো. শাহিন) আম-মোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) করে এনেছেন।

এরপর আদালত মোয়াজ্জেম হোসেনের বক্তব্য জানতে চান। মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, প্রথম আম-মোক্তারনামা যার নামে ছিল তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরিচয় থাকার সুবাদে তিনি ভারতে গিয়ে আম-মোক্তারনামা করে আনেন।

শুনানিতে ওই দুইজনের বক্তব্যে মিল না থাকায় এবং সঠিক উত্তর দিতে না পারায় আদালত তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ আদেশে আদালত কক্ষে পুলিশ উপস্থিত হয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে নিতে চাইলে তারা আদালতের কাছে ক্ষমা চাইতে থাকেন। এক পর্যায়ে আদালত বলেন, কোনো ক্ষমা নেই। আপনি শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এভাবে এত বড় জালিয়াতি আপনি করতে পারেন না। আর কতজনের সর্বনাশ করবেন আপনারা। রাষ্ট্রের আর কত ক্ষতি করবেন? এরপর আদালত তাদের প্রক্যেককে দুইশ টাকা করে জরিমানা করেন। আদালত বলেন, এরপর যদি আর কোনো প্রতারণা করেন তাহলে শাস্তি পেতে হবে।

এরপর ওই দুই ব্যক্তি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জরিমানার টাকা জমা দেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।