একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন প্রাপ্তদের ১০ হাজার এক টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এসময় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১৩ জনকে এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দীক এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজন হলেন- উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের শহিদুল মাস্টারের ছেলে শামীম হোসেন ও সুজন হোসেন এবং বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল মতিন ও কৃঞ্চপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে আব্দুল শুকুর ওরফে বাবু। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলেন- বাহাদুরপুর গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে সান্টু।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে শামীম ও বাবু আদালতে রায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার সাঁইপাড়া গ্রামের মো. আলম, কচুয়া গ্রামের কালু, কাবুল, আলাল উদ্দিন, আতাউর রহমান, কৃঞ্চরামপুর গ্রামের রেজাউল, বাবু, সাবুল, সুন্দরগারা গ্রামের জেকের আলী, নওদাপাড়ার রবিউল ইসলাম, শেরপাড়া গ্রামের আশরাফ আলী, সৈমুদ্দিন ও বাহাদুরপুর গ্রামের আদম আলী।
নাটোর জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত মোয়াজ্জেম যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মামলার আসামিরা।
মামলা সূত্রে তিনি জানান, ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অভিযুক্ত আসামিরা রাজনৈতিক পূর্ব বিরোধ ও পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এক পর্যায়ে তারা যুবলীগ নেতা মোয়াজ্জেমের বাড়িতেও হামলা চালায়। কিন্তু সেসময় তাকে না পেয়ে তার বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। খবর পেয়ে মোয়াজ্জেম পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে আসামিরা তার ওপর হামলা চালায়। এসময় মোয়াজ্জেমকে কুপিয়ে জখম ও গুলি করা হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোয়াজ্জেমের বাবা আব্দুস শুকুর মৃধা বাদী হয়ে পরের দিন (১ মার্চ) ২৩ জনকে আসামি করে লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। দীর্ঘ শুনানি ও ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ১৪ বছর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রায় দেন বিচারক।
মামলার রায়ে অভিযুক্ত ২৩ জনের মধ্যে পাঁচজনকে সাজা, ১৩ জনকে খালাস এবং অপর পাঁচজন রাস্ট্র কর্তৃক আগেই খালাস রয়েছেন। তারা হলেন- একই এলাকার হামিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, আব্দুল জলিল, ফারুক হোসেন ও আবেদ আলী। এ মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে লালপুরের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ হত্যা মামলারও আসামি রয়েছেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট মাসুদ হাসান ও আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আতিকুল্লাহ বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক ও রাশিদা খাতুন।
মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সন্তোষ প্রকাশ করলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। তারা বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯ / আপডেটেড: ১৭১০ ঘণ্টা
এসআরএস