ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায় ম্যাচ টাই, সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায় ম্যাচ টাই, সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ ছবি: শোয়েব মিথুন

‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়ে হারমানপ্রিত কৌরের জন্য দর্শকদের চিৎকার ছিল এমন। শেষের একেকটা উইকেটের পর তাদের উচ্ছ্বাস যেন ছিল আরও বেশি।

মাঠের ক্রিকেটাররাও কী কম যান! নাহিদা আক্তার স্নেহা রানার ক্যাচটা লাফিয়ে ধরেন যখন, তাকে ঝাপটে ধরেন সতীর্থরা।  

তারা খেলেন প্রতিটি রান আটকানোর জন্য। ব্যাটিংয়ে আরও বেশি রান করতে না পারার আফসোস, ফিল্ডিং বা বোলিংয়ে হতাশার গল্প মুছে দিয়ে শেষদিকে তেঁতে ছিল বাংলাদেশ। দুই রান আউট ও নাহিদা আক্তারের এক ওভারে দুই উইকেটে ম্যাচে তৈরি হয় নাটকীয়তা। এর শেষে অবশ্য জয়ী হয়নি কেউই। ম্যাচ শেষ হয় সমতায়।  ফলে সিরিজ ভাগাভাগি করতে হয় দুই দলকে।

শনিবার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটি টাই হয়েছে। আগে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। ইনিংসের তিন বল বাকি থাকতে এই রানেই অলআউট হয় ভারত।

শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে দুই উদ্বোধনী ব্যাটার শামীমা সুলতানা ও ফারজানা হক। তারা দুজন উদ্বোধনী জুটিতে গড়েন রেকর্ডও। অবশ্য ছাড়িয়ে যেতে পারেননি এক যুগ আগে গড়া উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রান। শারমিন আক্তার ও শুকতারা রহমান ১১৩ রানের জুটিই হয়ে থেকেছে সর্বোচ্চ।  

এদিন শামীমা ও ফারজানার জুটি ভাঙে ৯৩ রানে গিয়ে। স্নেহা রানার বলে হারমানপ্রিতের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শামীমা। এর আগেই তিনি অবশ্য ছুয়ে ফেলেন হাফ সেঞ্চুরি, ৫ চারে ৭৮ বলে এই ব্যাটার করেন ৫২ রান। তিন নম্বরে খেলতে আসেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।  

১ চারে ৩৬ বলে ২৪ রান করেন তিনি। স্নেহা রানার বলে ক্যাচ দেন আমানজাত কৌরের হাতে। ৪ বলে ২ রান করে আউট হন রিতু মণিও। বাংলাদেশের বাকি ইনিংস টানেন সোবহানা মোস্তারি ও ফারজানা। ফারজানা গড়েন ইতিহাসও। নারীদেরও ওয়ানডেতে দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান এখন তিনি।  

তিন অঙ্ক ছোয়ার কিছুক্ষণ আগে রান নিতে গিয়ে পেয়েছিলেন চোট। ফারজানা হকের কাছে নিশ্চয়ই তখন তুচ্ছ সেসব। তার সামনে সুযোগ ইতিহাস গড়ার, হাতছানি দিয়ে তাকে ডাকছে রেকর্ড। দীপ্তি শর্মার বলে মিসফিল্ডিং হয়ে বল বাউন্ডারি ছুতেই ফারজানা সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এরপর ড্রেসিংরুমের দিকে উঁচিয়ে ধরেন ব্যাট। সতীর্থ, কোচিং স্টাফরা ভাসেন উচ্ছ্বাসে।  

ওয়ানডেতে এতদিন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রান ছিল সালমা খাতুনের। ২০১৩ সালে ভারতের মেয়েদের বিপক্ষেই এই রান করেছিলেন তিনি। ফারজানা সেটিকে ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত সংগ্রহ নেন তিন অঙ্কে। ৭ চারে ১৫৬ বলে একশ রান করেন তিনি, হাঁকান সাতটি চার।  

ইনিংসের একদম শেষ বলে গিয়ে আউট হয়ে যান ফারজানা, সেটিও রান আউট। এর আগে ৭ চারে ১৬০ বলে ১০৭ রান করেন তিনি। ২ চারে ২২ বলে ২৩ রান আসে সোবহানা মোস্তারির ব্যাট থেকে। ভারতের পক্ষে ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন স্নেহা রানা।  

জবাব দিতে নামা ভারতকে বেশ চাপেই ফেলে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা। ৩২ রানে সফরকারীরা হারায় দুই উইকেট। ৩ বলে ৪ রান করা শেফালি ভার্মার ক্যাচ নিজের বলে নিজেই নেন মারুফা আক্তার। এরপর ইয়াস্তিকা ভাটিয়াকে এলবিডব্লিউ করেন সুলতানা খাতুন, তিনি ৭ বলে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরার সময় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানান।  

ভারতের চাপ আরও বাড়তে পারতো, কিন্তু সেটি হয়নি জ্যোতির জন্য। মারুফার করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই সহজ ক্যাচ ফেলেন স্মৃতি মান্ধানার। এই ব্যাটার পরে হারলিন দেওলের সঙ্গে গড়েন ১০৭ রানের জুটি। ৫ চারে ৮৫ বলে ৫৯ রান করার পর ফাহিমা খাতুনের বলে সোবহানার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরত যান স্মৃতি।  

এরপর বাংলাদেশ ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে আসে হারমানপ্রিত কৌরকে আউট করে। নাহিদা আক্তারের বলে সুইপ করতে গিয়ে এই ব্যাটার স্লিপে ক্যাচ দেন ফাহিমা খাতুনের হাতে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অবশ্য একেবারেই মেনে নিতে পারেননি তিনি। ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করেন, আম্পায়ারকেও কথা শোনাতে দেখা যায় তাকে। পরে সাজঘরে ফেরার সময় দর্শকদের ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ চিৎকারের জবাবে দেন ‘থাম্পস আপ’।

মাঝে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। দেওলের সঙ্গে জেমাইমা রদ্রিগেজ সঙ্গী হয়ে ম্যাচ ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতের দিকে। কিন্তু দুই রান আউটে ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চল থেকে ফাহিম খাতুনের করা থ্রো দারুণভাবে ধরে স্টাম্প ভাঙেন জ্যোতি। ডাইভ দিয়েও পৌঁছাতে পারেননি ৯ চারে ১০৮ বলে ৭৭ রান করা দেওল।  

ওই ওভারেই কাভার থেকে সরাসরি থ্রোয়ে সোবহানা আউট করেন দীপ্তি শর্মাকে। তবুও ভারতের সম্ভাবনা টিকে ছিল বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু সেটি আরও কমিয়ে দেন নাহিদা আক্তার। স্নেহা রানা ও দেবিকা ভাইদেয়াকে একই ওভারে ফেরান তিনি। স্নেহার দুর্দান্ত এক ক্যাচও নেন তিনি।  

ম্যাচের এমন রঙ বদলের পর বাংলাদেশের দিকেই হেলে গিয়েছিল বেশি। কিন্তু শেষ ব্যাটার হিসেবে আসা মেঘনা সিং সুলতানা খাতুনের ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে কাজটা সহজ করে দেন। পরে শেষ ওভার করতে আসেন মারুফা। তার প্রথম দুই বলে রান নিলে ম্যাচে চলে আসে সমতা।  

তৃতীয় বলে কাট করতে গেলে নিগার সুলতানা জ্যোতির হাতে বল যায়। বাংলাদেশের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। টাই হয় ম্যাচ। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সুপার ওভার হয়নি।

প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ জেতার পর দ্বিতীয়টি জেতে ভারত। শেষ ম্যাচ টাই হওয়ায় সন্তুষ্ট থাকতে হয় সমতায়। তবুও অবশ্য উৎসবে মাতেন মেয়েরা। ভারতের বিপক্ষে যে প্রথম ওয়ানডে জয়টিও এসেছে এই সিরিজেই!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।