ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

এ শহরে ধোনিই ‘নেতা’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, চেন্নাই থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
এ শহরে ধোনিই ‘নেতা’

চুল-দাড়ি সবই পেঁকে গেছে ভদ্রলোকের। হাঁটার সময়ও স্পষ্ট হয় বার্ধক্য।

মিডিয়ার লোকজনকে দেখভাল করাই তার মূল দায়িত্ব। বারবার তাড়া দিচ্ছেন, লাঞ্চটা যেন দ্রুত সেরে ফেলি। তার কাছে প্রশ্ন, ‘ধোনিকে নিয়ে এখানে কত স্মৃতি, তাই না?’

প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ তো বললেন অবশ্যই। এরপর তার চোখেমুখে খেলে গেলো উচ্ছ্বাস আর স্মৃতির ফোয়ারা, ‘এখানে ধোনিই তো সব...’। এখানে মানে কোথায় আছি, বুঝেছেন তো? ভারতে বিশ্বকাপ কাভার করতে এসেছি, এটি হয়তো এতক্ষণে জেনেছেন। উপরের এত কথায় শহরটাও নিশ্চয়ই চেনার কথা- চেন্নাই।

কেন এটা ধোনির শহর? এ প্রশ্নই আসার কথা নয়। ধোনির জন্ম চেন্নাই থেকে প্রায় ১৭শ কিলোমিটার দূরের রাঁচিতে। গুগল ম্যাপ বলছে  সড়কপথ ধরে ওখানে যেতে লাগবে ৩১ ঘণ্টা। অথচ এত দূরেও ধোনি খুবই প্রাসঙ্গিক; এটুকু বললে বোধ হয় কমই বলা হয়, এখানকার ক্রিকেটে ধোনিই সব।  

এ সবকিছুই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সুবাদে। বিশ্বকাপের ছোঁয়া এখানে তেমন লাগেনি। কেন? কাল রাতে চেন্নাই পৌঁছে একজনের কাছে জানতে চাইতেই ভদ্রলোকের ভাবখানা ছিল এমন, ‘আরে, এ তো আইপিএল নয়...। ’ 

এই আইপিএলই ধোনিকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যেটি অবিশ্বাস্য বললেও ঠিকঠাক বোঝা যায় না। এমনিতে এম এ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে অনেকেরই দেয়ালচিত্র আছে- শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেবাগ বা এখানকারই ছেলে রবীচন্দ্রন অশ্বিন।  

কিন্তু ধোনি? তিনি আলাদা। কম করে হলেও পঞ্চাশ ফুটের এক বিশাল দেয়ালিকা তার। ওখানে তিনটি ছবি- একটিতে হাতে ধরে আছেন আইপিএল ট্রফি। নিচে ছোট করে লেখা ‘থালা’, তামিল শব্দটির অর্থ নেতা। গত বছর আইপিএল জেতার পর চিদাম্বারামে বসেছে এই দেয়ালিকা।  

পাঁচ শিরোপা চেন্নাইকে এনে দিয়েছেন ধোনি, আরও কত কত মুহূর্ত তার। ধোনি আর চেন্নাইয়ের সঙ্গে চিদাম্বারামে হওয়া অনেক ঘটনা পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে টাঙানো, বেশির ভাগই পত্রিকার কাটিং। একটির শিরোনাম খুব চোখে পড়লো, লেখার সঙ্গে সেটি প্রাসঙ্গিকও। ‘সিটি'স এডপ্টেড সন’ লেখা প্রায় পুরো পাতাজুড়ের খবর দেয়ালেবন্দি করে রাখা। নিশ্চয়ই বুঝেছেন, ধোনি চেন্নাইয়ের আসলে কী! 

চেন্নাই এমনিতে তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী। শহরটা বেশ পরিষ্কার। মানুষজন আরও ভালো। যদিও মানসপট খুব অদ্ভুত জিনিস- ছোটবেলা থেকে তামিল সিনেমা দেখার প্রভাব কি না কে জানে; লুঙ্গি পরে বাইক চালাতে দেখলেই ‘গুণ্ডা’ লাগে কাউকে কাউকে।

পরে কিন্তু যখনই কারো সঙ্গে কথা বলি, আফসোস হয়- ইশরে! এখানে কেবল দুদিনের জন্যই এলাম, আরেকটু থাকতে পারলে...! চেন্নাইয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাষা। এখানকার লোকজন বেশ শিক্ষিত, বেশির ভাগই ইংরেজি জানেন। তামিলের পর ইংরেজিই এখানকার দ্বিতীয় ভাষা। তাই হিন্দি ভাষার সঙ্গে সখ্যতা খুব একটা নেই অনেকের।

আগের দিন রাতে সমুদ্র দর্শনে গিয়ে বেশ ভিন্ন এক অভিজ্ঞতাই হয়েছে। ধর্মশালা থেকে প্রায় ১৮ ঘণ্টা যাত্রার পর সন্ধ্যায় চেন্নাই পৌঁছে শরীর প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ফ্রেশ হওয়ার পর শোনা গেল- নিউজিল্যান্ড নাকি রাতে অনুশীলন করছে।  

স্টেডিয়াম থেকে হোটেল এতই কাছে- নিজেকে আর আটকে রাখা গেলো না। কাজে এলে বোধ হয় বাড়তি স্পৃহা চলে আসে- মাঠ থেকেই সমুদ্র দর্শনের ইচ্ছে হলো তাই। দিবা-রাত্রির ম্যাচ আর দুদিনের সফর হওয়ায় পরে আর এই সুযোগ নাও মিলতে পারে- এমন ভাবনায়!

কিন্তু রাত সাড়ে ৯টাতেই বিচ বন্ধ হয়ে যায়- মাঝপথে গিয়ে এমন শুনে মনটা খারাপ হলো। গলায় যেহেতু বিশ্বকাপের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড আছে- একবার চেষ্টা করেই দেখা যাক, এমন ভাবনা নিয়ে এগোলাম তবুও। অল্প বয়সী এক পুলিশ কনস্টেবল এসে বাধা দিলেন শুরুতে।  

কিন্তু ভদ্রমহিলা শুধু বাধা দিলেন, এটুকুই বুঝে গেলো। এরপর ফটর ফটর করে কী বললেন বোঝার উপায়ই আসলে নেই। হিন্দি বোঝেন? না। ইংরেজি? তাতেও তার খুব একটা সম্মতি নেই। ভীষণ বিপদ! আমরা তামিল বুঝি না, ভদ্র মহিলা বোঝেন না হিন্দি বা ইংরেজি।

কোন এক অদ্ভুত কারণে এ দৃশ্য দেখে হাসি আটকাতে পারলাম না। দুজন লোক দুজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু কেউই বুঝছেন না- এই দৃশ্য দেখে হাসা কোনোভাবেই উচিত না। এমন ভাবনা মাথায় আসার পর বহু কষ্টে দাঁত আটকে রাখলাম ভেতরে। ‘রিপোর্টার’, ‘জার্নালিস্ট’, ‘বিশ্বকাপ কাভার’ এমন নানা ‘কী ওয়ার্ড’ দিয়ে যখন শেষ অবধি বোঝানো গেলো, তখন তিনি আরেকটু দূরের পথ দিয়ে বিচে যেতে বললেন।  

ধর্মশালার পাহাড় এমনিতে দেখার জন্য ভীষণ সুন্দর। তবে ব্যক্তিগতভাবে টানটা সমুদ্রের জন্যই বেশি। প্রায় মিনিট দশেক হাঁটার পর যখন সমুদ্রের আওয়াজ কানে এলো- তীব্র গরম আর ভ্রমণ ক্লান্তি উড়ে গেলো এক নিমিষে। একটা উপলব্ধিও হলো- শহর থেকে শহর দৌড় আর ভ্রমণ ক্লান্তি দূরে ঠেলে সময়টাকে উপভোগ করাই শ্রেয়। ‘থালার’ শহরে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে খোঁজার আনন্দের মতো।  

বাংলাদেশ সময় : ১৬৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
এমএইচবি/ এএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।