সিলেট থেকে: মাশরাফি বিন মর্তুজার কথাগুলো শিরোনাম করার তাড়া সংবাদকর্মীদের। মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে হয়তো তার দেখাই হয়ে যাওয়ার কথা ততক্ষণে।
ফিটনেসের বেহাল দশা নিয়ে বিপিএল খেলায় মাশরাফির সমালোচনা শুরু হয়েছিল আশরাফুলের কাছ থেকে। পরে তাতে যোগ দিয়েছেন অনেকেই। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে সেসব সমালোচনা নিয়ে মাশরাফি বলেছেন ‘এগুলো নিয়ে ভাবার সময় নেই’ তার।
ওই কথা বলে যাওয়ার খানিক বাদেই আশরাফুলও সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এসেছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ড্রেসিংরুমের পাশে দাঁড়িয়ে ব্রডকাস্টিং শো শেষে। তাদের তাই দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আলোচনা ও সমালোচনা প্রসঙ্গে করা প্রশ্নের দীর্ঘ উত্তর দিয়েছেন মাশরাফি।
তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় আমার নেই। পারফরম্যান্স তো এমন একটা জিনিস, আমি শেষ দুই ম্যাচ বোলিংই করিনি। পরিষ্কার মেসেজ ছিল, আমি পারব না। এটা আমি যেহেতু খেলেছি এভাবেই হবে, এক। ’
‘দ্বিতীয় কথা হলো পারফরম্যান্স যখন খারাপ করবেন, আমার কাজ যেটা বোলিং করা। বোলিং খারাপ করলে তখন মাথায় নিতে হয়। আর পারফরম্যান্স... ক্রিকেটারদের এমন হয় যে পারফরম্যান্স খারাপ হতেই পারে। বাইরের আলোচনায় তো আর আপনি কামব্যাক করতে পারবেন। ’
উদাহরণ দিতে মাশরাফি ফেরেন তার সেরা সময়েও, ‘আমি যখন আমার ক্যারিয়ারের (চূড়ার) সময়ে ছিলাম; এমন না যে আমার সবসময় ভালো গিয়েছে। খারাপ গিয়েছে, হয়তো কোনোদিন ভালো গেছে। তখনও সমালোচনা হয়েছে। ফেরার বিষয় সব খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেই সমালোচনা নিয়েই খেলতে হবে। এর জবাবও কিছু নেই, জবাব দেওয়াও যায় না। বরং খেলায় মনোযোগী হওয়া আর চেষ্টা করা ভালো খেলার। আর দলকে জেতানো যায় কি না...। ’
মাশরাফি বিন মুর্তজা দীর্ঘ সময় জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দিয়েছেন নেতৃত্বও। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্ত এসে তাকে সইতে হচ্ছে নানা ধরনের সমালোচনা। এতে কি একটা অভিমানও পেয়ে বসেছে তাকে? অথবা দেখিয়ে দেওয়ার তাড়না?
এমন প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বলেন, ‘আমি কোনোদিনই আমার ক্যারিয়ারে কাউকে আক্রমণ করিনি। এটা আমার স্বভাবও না। মানুষ ভালোটাই চায়। মানুষ সবসময় যারা জয়ী হয়, তাদের চিন্তা করে, মনে রাখে। এটা খুব স্বাভাবিক। এটা শুধু ক্রিকেটে নয়য়, যেকোনো লাইফেই যদি আপনি ভালো করেন সেটাই মানুষ এসে বলবে। খারাপকে কেউ কিন্তু গ্রহণ করে না। সুতরাং এখানে উত্তর দেওয়ার কিছু নেই। ’
‘এখানে যেটা হচ্ছে আপনি খেলছেন, চেষ্টা করছেন আপনার সাধ্যমতো। যেটা বললাম আমি এটাও মেনে নিয়েছি আইডিয়াল সিচুয়েশনে নরমালি এ অবস্থায় যেহেতু বোলিং করতে পারছি না; না খেললে ভালো হতো। তবে দলের চাওয়া, সবকিছুর একটা ব্যাপার থাকে। যেটা হয়তো বিস্তারিত আমি বলিনি। ’
‘কিন্তু আজকে যেহেতু আবার খেলেছি, চেষ্টা করেছি যে ভালো লাগলে বোলিং করবো। পা টা একটু ভালো লাগছিল। এজন্য বোলিং করেছি। শর্ট রান আপে আমি তো ৫-৬ বছর ধরেই বল করি। কারণ আমার তো পেস মেটার করে না। আর ফুল রান আপে বল করলে যে খুব গতি হয়, তাও না। লাস্ট ইয়ারেও শর্ট রান আপে করেছি। হয়তো এর চেয়ে একটু বড় ছিল। গত বছরও ১৫ উইকেট পেয়েছি। এটাই আপনি চেষ্টা করতে পারেন। আর কাউকে দেখিয়ে দেওয়া বা উত্তর দেওয়া এ বিষয়গুলো একেবারেই ভেতরে আসে না। ’
চার বছর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। তখন বলেছিলেন, ‘খেলে যাবেন’; সেই কথা এখন আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও যে ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন দিয়েছেন সেই ইঙ্গিত।
তিনি বলেন, ‘আমি তো আগেও বলেছি, এখান থেকেই অবসরে গিয়েছিলাম। তখনও বলেছি আমি কিন্তু ক্রিকেট খেলবো ঘরোয়া। এটা যদি আন্তর্জাতিক হতো, অবশ্যই না। এটা ওইদিনই বন্ধ করেছি, ওইদিনই বন্ধ। ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট, ফ্র্যাঞ্চাইজি কী চায়; আমি যে ধরেন ক্লাব ক্রিকেট খেলি ওয়ানডে, আমার দল কী চায় সেটার ওপর নির্ভর করে। এখানে তো ক্যারিয়ারের বিষয় না। এখানে আপনি উপভোগ করছেন, যদি টিম ম্যানেজমেন্ট চায়, নেবে অকশন থেকে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০১৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
এমএইচবি