ঢাকা: আর কয়েক ঘন্টা পরেই শুরু হচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মহারণ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আর এরই মাঝে চলছে সবচেয়ে বড় এ আসরের সর্বশেষ প্রস্তুতি।
তবে এবারের আসরেও থাকবেন সেরা কয়েকজন ক্রিকেটার যারা তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপকে মাতিয়ে রাখতে পারবেন। আর এমন সেরা ১১জন ক্রিকেটারদের নিয়ে পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো বিশ্বকাপের সেরা একাদশ।
হাশিম আমলা: দক্ষিন আফ্রিকা দলে সেরা ওপেনার হিসেবে ইতিমধ্যে নিজেতে প্রমাণ করেছেন আমলা। ৩১ বছরের এ তারকা ক্রিস গেইলদের মত আক্রমণাত্বক না হলেও প্রতিটি ইনিংসেই তিনি নির্ভরতার প্রতীক। একদিনের ম্যাচের তার স্ট্রাইক রেট ৮৯.৬১।
২০০৮ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া এ ডানহাতি এখন পর্যন্ত ১০৭টি ম্যাচ খেলেছেন। তার সর্বমোট রান ৫,৩৫৯ যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৫৩ রানে অপরাজিত ইনিংসটি তার সেরা স্কোর। গত ২০১৪ সাল দারুণ কেটেছে আমলার। ১৮ ম্যাচে করেছেন ৮৯২ রান। আর ৫০ ওভারের খেলায় তার গড় রান ৫২.৪৭।
আমলা ২০১১ বিশ্বকাপে দলের সঙ্গী ছিলেন। তবে কোন ম্যাচে মাঠে নামেন নি। সেবার প্রোটিয়ারা কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে আসর থেকে বিদায় নিয়েছিল।
ডেভিড ওয়ার্নার: সীমিত ওভারের ম্যাচে এখনও বড় কোন সাফল্য পাননি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ওয়ার্নার। তবে সাদা পোশাকে কোন সন্দেহ নেই তিনি অসাধারণ ব্যাটসম্যান। কিন্তু তার দিনে তিনি বিপক্ষ দলের জন্য হুমকি হতে পারেন।
ওয়ার্নার এখন পর্যন্ত ৫৪ ম্যাচে ১,৭০২ রান করেছেন। যেখানে ২০১২ সালে ব্রিসবেনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৩ রান ওয়ানডের সর্বোচ্চ। আর সম্প্রতি ত্রিদেশী সিরিজে ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচে ৫৪.৩৩ গড়ে করেছেন ১৬৩ রান।
বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যানের এটি প্রথম বিশ্বকাপ। আর আট বছর পর অজিদের আবারো শিরোপা দখলে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি।
বিরাট কোহলি: ভারতীয় দলে বর্তমান সেরা ব্যাটিং তারকা তিনি। ২০১৩/১৪ সালে তিনি ৫৬ ওডিআইতে ২,৩২২ রান করেছেন। আর এখন পর্যন্ত ১৫০ ম্যাচে ৫১.৫০ গড়ে করেছেন ৬,২৩২ রান। যেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮৩ রানের ইনিংসটি তার সর্বোচ্চ।
কোহলি ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের ট্রফি জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। আর এবার দলের হয়ে টানা শিরোপা জয়েও তার অসাধারণ ভূমিকা থাকতে পারে।
কেন উইলিয়ামসন: সীমিত ওভারের ম্যাচে অন্যতম এক ব্যাটসম্যান তিনি। ২৪ বছরের এ তারকার রয়েছে হাশিম আমলার মত ব্যাটিং ধারাবাহিকতা। এখন পর্যন্ত ৬৫ ম্যাচে ৪৬.২৬ গড়ে করেছেন ২,৪৫৩ রান যেখানে তার স্ট্রাইক রেট ৮২.৭৮।
আর নিউজিল্যান্ড দলে মিডলঅর্ডারে অসাধারণ পারর্ফম করা এ ব্যাটসম্যান সর্বোচ্চ ১৪৫ রান করেছেন দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে। পাশাপাশি ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হওয়ায় রস টেইলর ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামদের সঙ্গে প্রথম শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি।
এবি ডি ভিলিয়ার্স: বর্তমান সময়ে ভিলিয়ার্সের মত হাতে গোনা কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন যারা ব্যাটিং করে মাঠ মাতিয়ে রাখছেন। গত কয়েক বছরে বিশ্ব ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছেন দক্ষিন আফিকান এই অধিনায়ক।
এখন পর্যন্ত ১৭৯ ম্যাচ খেলে ৫২.১৬ গড়ে ৭,৪৫৯ রান করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে সীমিত ওভারের ম্যাচে ৯৭.১৬ স্ট্রাইক রেট আছে তার দখলে। সম্প্রতি দ্রুত সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া এ ক্রিকেটার এক ইনিংসে সর্বোচ্চ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৪ বলে ১৪৯ রান।
এম এস ধোনি: আধুনিক ক্রিকেটে সবচেয়ে সেরা ফিনিশার বলা হয় তাকে। এখন পর্যন্ত ২৫৪ ম্যাচে ৫২.২৯ গড়ে ৮,২৬২ রান করেছেন এ ভারতীয় অধিনায়ক। ৩৩ বছরের এ তারকা ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেট কিপিংয়েও কার্যকারী ভূমিকা রাখেন।
২০১১ বিশ্বকাপে ভারতীয়দের শিরোপা জয়ে দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এবারও দলের হয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ে অবদান থাকতে পারে এ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের।
জেমস ফকনার: বর্তমান ক্রিকেটে অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্যাটিংয়ের পাশিপাশি বোলিংয়েও দারুণ কৃতিত্ব দেখিছেন তিনি। শেষ ২৪ খেলায় তিনি ৭৭০ রান করেছেন। ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১১৬ রান।
আর দলের হয়ে সর্বোমোট ৩৮ ম্যাচ খেলে ৫০ উইকেট পেয়েছেন এ বাঁহাতি বোলার। আর ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হওয়ায় অজি দলে চমক দেখাতে পারেন তিনি।
শহীদ আফ্রিদি: এবারের বিশ্বকাপের পরই অবসরে যাবেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার আফ্রিদি। ৩৪ বছরের এ তারকা এখন পর্যন্ত ৩৯১ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে ১১৬.৭৯ স্ট্রাইক রেটে ৭৯৪৮ রান করেছেন।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ স্পিন বোলিং করে দলের হয়ে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন তিনি। সীমিত ওভারের ম্যাচে ৩৯৩টি উইকেট পেয়েছেন। তার সেরা স্পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২ রান দিয়ে সাত উইকেট। আর ২৩ বছর পর আবারো দলের হয়ে শিরোপা জয়ে ভালো ভূমিকা থাকতে পারে আফ্রিদির।
ডেল স্টেইন: বর্তমান সময়ে সম্ভবত সেরা ফাস্ট বোলার তিনি। গত এক দশকে দক্ষিন আফ্রিকার হয়ে ৯৬ ম্যাচ খেলে ১৫১ উইকেট নিয়েছেন যেখানে তার গড় ২৫.১৪। তার সেরা স্পেলটি হচ্ছে গত বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে যেখানে ৫০ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।
৩০ বছরের এ তারকা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে ১৫ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়েছেন যা এবারের বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের প্রথম শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মিচেল জনসন: জনসন টেস্টের মত হয়তো ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেন নি। তবে তার ভয়ঙ্কর বোলিং বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কুপোকাত করতে পারে।
এখন পর্যন্ত ১৪৫ ম্যাচে ২৫.৫০ গড়ে ২২৪ উইকেট পেয়েছেন এ বাঁহাতি বোলার। ৩৩ বছরের এ তারকা দলের শিরোপা জয়ে অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারেন।
লাসিথ মালিঙ্গা: ম্যাচের শেষ ওভারগুলোতে অসাধারণ বোলিং করার রেকর্ড আছে তার দখলে। তবে তার বোলিং বৈচিত্র্য বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ক্রিজে থাকাটা কঠিন করে দেয়।
৩১ বছরের এ তারকা এখন পর্যন্ত ১৭৭ ওয়ানডে ম্যাচে ২৭১টি উইকেট নিয়েছেন। যেখানে তার গড় ২৭.২১। আর ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ড চার বলে চার উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কান দলের বিশ্বকাপ জয়ে কার্যকরী ভূমিকা থাকতে পারে এ ফাস্ট বোলারের।
বাংলাদেশ সময়: ০১০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫