ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: পড়ন্ত বিকেলের হালকা রোদে আড্ডাটা জমে ওঠেনি তখনও। বিচ্ছিন্নভাবে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন এদিক-সেদিক।
ঘড়ির কাটায় সময় তখন ৫টার কাছাকাছি। হঠাৎ-ই চারিদিক জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল। রাজু ভাস্কর্যর সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে ও দলীয় লাল-সবুজ জার্সি গায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন দুজন। মুহুর্তের মধ্যেই ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ স্লোগান দিতে দিতে যোগ দিলেন আরও অনেকে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে তাদের সঙ্গে শামিল হলেন আরও কিছু তরুণ। শুরু হলো বিজয় উল্লাস। হই-হুল্লোর আর চিৎকার চেঁচামেচিতে মাতিয়ে তুললেন পুরো এলাকা।
বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের একশ’ পাঁচ রানের বিশাল জয়ের পর এটাই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্ত্বরের চিত্র।
নিজেদের ওপর থেকে চাপের বোঝা সরিয়ে, আফগান দলপতীর হুঙ্কারকে তুচ্ছজ্ঞান করে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিজয়ের হাসি হাসে টাইগাররাই। তাদের বিজয়ের এ উচ্ছ্বাসের ঢেউ বিশ্বের ও-প্রান্ত থেকে আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে। তারুণ্যের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস বিজয়ের আনন্দ যেন বাড়িয়ে দিয়েছে আরও বহুগুণে।
বিজয়ের আনন্দ সবার সমান। কিন্তু অনুভুতি প্রকাশের ভাষা তাদের ভিন্ন ভিন্ন। প্রত্যাশার পারদের স্কেলের তারতম্যও বোঝা গেল তাদের কথা থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত বাংলানিউজকে বলেন, আসলে জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে দলের ওপর চাপ ছিল প্রচুর। কারণ প্রস্তুতি ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। তাছাড়া আফগান দলও বিভিন্ন হুঙ্কার দিচ্ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ আসলে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারাই যোগ্যতর দল।
দলের মূল ভরসা সাকিব, মাশরাফি-মুশফিক প্রত্যাশা অনুযায়ী খেললেও দলের টপ অর্ডার ও লোওয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আরও উন্নতি করতে হবে বলেও মত দেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বর্ণ বললেন, বাংলাদেশ আজ যেরকম খেলা প্রদর্শন করল, তাতে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকেও হারাতে পারবে। জাস্ট আত্মবিশ্বাসটাকে ধরে রাখতে হবে।
এদিকে সকাল থেকে ঢাবির বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা যায়, খেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটি হলের টিভিরুম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বসার চেয়ার না পেয়ে অনেকে ফ্লোরে বসে ও পিছনে দাড়িয়েই খেলা দেখে।
তবে এতো উচ্ছ্বাসের মধ্যেও অনেক শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কারণ খেলা দেখানোর জন্য ঢাবির কোথাও কোনো বড় পর্দা স্থাপন করা হয়নি। যার ফলে বিশ্বকাপের পুরো আমেজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও মনে করছেন অনেকে।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী আবু নোমান বাংলানিউজকে বলেন, ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশ না নিলেও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সত্বেয় কারো সেরকম কোনো উদ্যোগ দেখলাম
না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫