ঢাকা: ওয়ালটন ১৬তম জাতীয় ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ডে চার ম্যাচের (বৃহস্পতিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি) শেষ দিনে তিনটিই ড্র হয়েছে। শুধু মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে রাজশাহী বিভাগকে ইনিংস ও ১৮৩ রানে হারিয়েছে খুলনা।
নাজিমউদ্দিনের সেঞ্চুরিতে ঢাকা মেট্রোর সাথে ম্যাচটি ড্র করে চট্টগ্রাম। বিকেএসপির-৩ নম্বর মাঠে অনুষ্ঠিত রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ম্যাচও নিষ্প্রাণ ড্র হয়।
এদিকে নায়ারনগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকা ও সিলেট বিভাগের ম্যাচটিও ড্র হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোর সাথে চট্টগ্রামের ম্যাচ: এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ঢাকা মেট্রোর প্রয়োজন ছিল ৭ উইকেট। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিনের শেষ পর্যন্ত লড়াই করে ম্যাচ বাঁচিয়ে দেন চট্টগ্রামের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নাজিমউদ্দিন। ৩১৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ২৪০ বলে ১৬ বাউন্ডারিতে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। চলতি লিগে এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি।
এর আগে বৃহস্পতিবার নাজিমউদ্দিন ১৬ ও ইরফান শুক্কুর শূন্য রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেন। বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের পনের মিনিট পর খেলা শুরু হয়। দিনের শুরুতে দেখেশুনে খেলতে থাকেন নাজিমউদ্দিন ও ইরফান। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগে আসিফ আহমেদ ঢাকা মেট্রোকে ব্রেক থ্রু এনে দেন। ইরফান শুক্কুর ৪৩ রানে আসিফের শিকার হন।
পঞ্চম উইকেটে জুটি বাঁধেন তাসামুল হক ও নাজিমউদ্দিন। ১৬২ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান তাসামুল দ্বিতীয় ইনিংসে শরীফউল্লাহর ঘূর্ণিতে ৮০ রানে সাজঘরে ফেরেন। তাসামুলকে ফেরানোর পর শফিউদ্দিনের উইকেটও তুলে নেন শরীফউল্লাহ। ব্যক্তিগত ১৮ রানে আউট হন শফিউদ্দিন।
দ্রুত উইকেট হারানোর পরও নাজিমউদ্দিন সেঞ্চুরিতে দিন শেষে ৬ উইকেটে ৩৭৬ রান করে ম্যাচ ড্র করে চট্টগ্রাম।
এর আগে, প্রথম ইনিংসে ঢাকা মেট্রোর করা ৪৯৬ রানের জবাবে ২৭৪ রানে গুটিয়ে যায় চট্টগ্রাম। ২২২ রানে পিছিয়ে থেকে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যান তাসামুল হক।
রংপুর বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের ম্যাচ: বিকেএসপির-৩ নম্বর মাঠে রংপুর ও বরিশালের ম্যাচটি নিষ্প্রাণ ড্র হয়েছে। তবে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচের সব আলো কেড়ে নিয়েছেন বরিশালের ডানহাতি ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন।
বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে ১২৫ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। তার সঙ্গে ছিলেন ৯৬ রান করা আল-আমিন-২। বৃহস্পতিবার ম্যাচের শেষ দিনে মোসাদ্দেক ব্যক্তিগত ২৫০ রান তুলে নেন। তবে মাত্র ১ রানের জন্যে ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পাননি আল-আমিন।
এই দুই ব্যাটসম্যান পঞ্চম উইকেট জুটিতে রেকর্ড ৪২৩ রানের জুটি গড়েন। যা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি।
বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্ন বিরতির পর মোসাদ্দেক ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন। এরপর বৃষ্টির কারণে দুই ঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ ছিল। ম্যাচ শুরুর পরপরই তানভির হায়দারের বলে আল-আমিন সাজঘরে ফেরেন। ২৬৪ বলে ২৬ বাউন্ডারিতে ১৯৯ রান করেন আল-আমিন।
দলীয় ৬১৯ রানে অল-আমিনের বিদায়ের পর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মোসাদ্দেক ২৫০ রানে আউট হলে ৬৮৮ রানে থেমে যায় বরিশালের প্রথম ইনিংস। ৪৪৮ বলে ২১ চার ও ৫ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান মোসাদ্দেক।
রংপুরের পক্ষে তানভির হায়দার ৭৯ রানে ৪ উইকেট নেন।
রংপুরের করা ৫১৮ রানের জবাবে ৬৬৮ রান করে বরিশাল। ১৫০ রানের লিড নেয় তারা।
পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ১২.২ ওভার ব্যাটিং করে ৬৫ রান করে রংপুর। এরপর দুই অধিনায়কের সম্মতিতে ম্যাচ ড্র হয়। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মোসাদ্দেক হোসেন।
খুলনা বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের ম্যাচ: এ ম্যাচের চতুর্থ দিনে বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিভাগকে ইনিংস ও ১৮৩ রানে হারায় খুলনা। চলতি লিগে এটি খুলনার তৃতীয় জয়। এর আগে সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে জয় পায় খুলনা। তবে তৃতীয় রাউন্ডে রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচে হেরে যায় তারা।
বৃহস্পতিবার জয়ের জন্যে খুলনার প্রয়োজন ছিল ৮ উইকেট। এদিন ২ উইকেটে ৬১ রানে দিন শুরু করে রাজশাহী। মাইশিকুর রহমান ২৩ ও ফরহাদ হোসেন ১৮ রানে ব্যাটিং শুরু করেন। কিন্তু খুলনার বোলারদের দাপটে ১৫২ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন মাইশিকুর রহমান। এছাড়া ২৫ রান করেন ফরহাদ হোসেন।
খুলনার দুই স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও মেহেদি হাসান নেন ৮ উইকেট। বাহাতি স্পিনার রাজ্জাক মাত্র ৫২ রানের খরচে নেন ৫ উইকেট। আর তরুণ স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন জিয়াউর রহমান ও রবিউল ইসলাম শিপলু।
এর আগে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ৫৬০ রান করে খুলনা বিভাগ। তুষার ইমরান ২০৩ ও জিয়াউর রহমান ১৬৪ রান করেন।
জবাবে রাজশাহী প্রথম ইনিংসে ২২৫ রানে গুটিয়ে যায়। ৩৩৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে রাজশাহী দ্বিতীয় ইনিংসে করে মাত্র ১৫২ রান। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তুষার ইমরান।
ঢাকা বিভাগ ও সিলেট বিভাগের ম্যাচ: ঢাকা ও সিলেট বিভাগের ম্যাচটিও ড্র হয়েছে। নায়ারনগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষ দিনে বৃহস্পতিবার ৩ উইকেটে ৮৩ রান নিয়ে দিন শুরু করে ঢাকা বিভাগ।
কিন্তু বৃষ্টির কারণে ম্যাচ শুরু হতে বিলম্ব হয়। মধ্যাহ্ন বিরতির পর নাদিফ চৌধুরী ও নাসিরউদ্দিন ফারুক ব্যাটিংয়ে নামেন। দলীয় ১৩৩ রানে সাজঘরে ফেরেন নাদিফ। ২৬ রানে অলোক কাপালির বলে এলবিডাব্লিউর শিকার হন তিনি।
এরপর রাহাতুল ফেরদৌসের বলে ১২ রানে সাজঘরে ফিরেন মোহাম্মদ শরীফ। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। কিন্তু আলো স্বল্পতার কারণে বেশিক্ষণ খেলা চালাতে পারেননি আম্পায়াররা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৭৫ রান করে ঢাকা। নাসিরউদ্দিন ফারুক ৪১ ও মোশাররফ হোসেন রুবেল ৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে সিলেট বিভাগ প্রথমে ব্যাটিং করে ৫০০ রান সংগ্রহ করে। রাজিন সালেহ ১৮১ ও অলোক কাপালি ১৭৫ রান করে। জবাবে ঢাকা বিভাগ মাত্র ২০২ রানে গুটিয়ে যায়।
২৯৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ঢাকা বিভাগ। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন রাজিন সালেহ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫