ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫
ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে

ব্রিসবেন থেকে: আক্ষেপ আর হতাশার চিত্রটাই দেখলো গ্যাব্বা। আর আক্ষেপ-হতাশার যে ক্রিকেটীয় গল্প; সেখানে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া  কেউ কারো থেকে পিছিয়ে রইলো না।



বাংলাদেশের আক্ষেপ- অস্ট্রেলিয়ার মতো একটা বড়  দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে, গ্যাব্বার মতো বড় মাঠে খেলা হলো না! হতাশা- ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার থেকে একটা বিশ্বকাপ ম্যাচ হারিয়ে গেলো। যে ম্যাচে একটা বলও মাঠে গড়ালো না। এবং সেটা বৃষ্টির কারণে।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার আক্ষেপ; ম্যাচটা পরিত্যাক্ত ঘোষণা করার কিছুক্ষণ পর আকাশের কান্না থেমে গেলো! বেড়ে গেলো অস্ট্রেলিয়ানদের হতাশা! কারণ ব্রিসবেনের এই মাঠের নিস্কাশন ব্যবস্থা এতো ভাল যে বৃষ্টি থামা মানে আধা ঘন্টার মধ্যেই ম্যাচ শুরু করা সম্ভব।

হ্যাঁ, টানা তিন দিনের বৃষ্টির কথা মাথায় রেখেও কথাটা লেখা যাচ্ছে। কারণ, মাঠটা গ্যাব্বা। আর মাইকেল ক্লার্ক, স্মিথ, জনসনদের হতাশা শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগির কারণে নয়। হতাশার আর একটা কারণ হয়ে দাঁড়াছে টুর্নামেন্টের ফিক্সশ্চার! এবং সেটা ঘটনাচক্রে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার কারণে প্রথম ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়া আবার  মাঝখানের বাইশ গজে লড়াই করার সুযোগ পাচ্ছে দু’সপ্তাহ পরে! প্রথম ম্যাচ খেলেছিল তারা মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে। তারপর আবার মাঠে নামবে সবকিছু ঠিক থাকলে ২৮ ফেব্রুয়ারি অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ‘তাসমান যুদ্ধ’-এ নামার আগে নিউজিল্যান্ড ম্যাচ প্র্যাকটিসের দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ানদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রইলো। তিন ম্যাচ খেলে ছয় পয়েন্ট নিয়ে পুল ‘এ’-তে তালিকারও শীর্ষে তারা। ইডেন পার্কের লড়াইয়ের আগে মানসিকভাবেও এগিয়ে থাকছে  নিউজিল্যান্ড। যা কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলেছে অস্ট্রেলিয়ানদের। গ্যাব্বায় কোন বল মাঠে না গড়ানো-তে হতাশাটা তাই বেড়ে গেছে ক্লার্ক এবং তার দলের।

আক্ষেপ-হতাশার উল্টো পিঠেরও একটা চিত্র আছে। সেখানে আছে ‘স্বস্তি’ নামক একটা শব্দও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে না পারায় দর্শক, সমর্থক এবং ক্রিকেটাররা হতাশ। তবে বাংলাদেশের পয়েন্ট নামক একটা প্রাপ্তিও থাকলো ব্রিসবেনে। হোক সেটা না খেলে পাওয়া পয়েন্ট। তবু বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে এই এক পয়েন্ট বাংলাদেশকে আপাত অন্য রকম জায়গায় নিয়ে গেলো।

ইংল্যান্ড-শ্রীলংকার মতো দলকে পেছনে ফেলে পয়েন্ট তালিকায় বাংলাদেশ এখন তিন নম্বরে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ঠিক পরে। যা থেকে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মার্ক টেলর থেকে ব্রেট লি পর্যন্ত বলছেন,‘তাহলে বাংলাদেশেরও কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সম্ভনাটা উজ্জ্বল হলো!’ হ্যাঁ, ব্রিসবেনের আকাশ তখন যতোই কালো থাকুক ম্যাচ পরিত্যাক্ত ঘোষণা করার পর বাংলাদেশের পরের রাউন্ডে খেলার সম্ভাবনা সত্যিই উজ্জ্বল হয়েছে। তবে একটা কথা থাকছে। বাংলাদেশকে পারফরম করে অন্তত আর গোটা দুয়েক ম্যাচ জিততে হবে।

সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারলেন না  ব্রেট লি থেকে মাইকেল বেভান। ব্রেট যেমন বলে দিলেন; ‘স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জেতা উচিৎ। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ যে জায়গায় আছে তাতে ঐ ম্যাচে তারা ফেবারিট। সেখান থেকে দু’পয়েন্ট পেলে আর অন্য তিন ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলেই চলবে বাংলাদেশের। কিন্তু সমস্যা হতে পারে ঐ একটা পয়েন্ট নিয়ে...!’

তবে একটা আশার কথাও শোনালেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এক অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু বিকেল। তার কথায় এক ধরণের রসিকতা যেমন আছে তেমনি ক্রিকেটীয় বাস্তবতাও আছে। হাসতে হাসতে বিকেল বললেন; ‘ ইংল্যান্ডের যে অবস্থা...!’ হ্যাঁ, বিকেল কেন ঘোর ইংলিশ সমর্থকরাও এখন দলটার ছন্নছাড়া একটা চেহারা দেখছেন। তাতে ইংলিশদের বিপক্ষে এক পয়েন্ট কেন তিন পয়েন্টেরও আশা করতে পারে বাংলাদেশ। করলে সেটা বাড়াবাড়ি হবে না, এরকম বিশ্বাস বিকেলের। তবে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ দর্শক  সবাই মানছেন; ব্রিসবেন থেকে বাংলাদেশের এই এক পয়েন্ট পাওয়া বিশ্বকাপের হিসেব নিকেশ অনেক পাল্টে দিতে পারে।

খেলা দেখতে না পারার হতাশা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান এবং বাংলাদেশের সমর্থকরা যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন অনেকে স্মৃতির সরণি দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। ’৯২ এ অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে ইমরান খানের পাকিস্তান যেবার কাপ জিতেছিল, সেখানে ক্রিকেট দেবতা বৃষ্টি নামক ‘আশীর্বাদ’ ইমরানের টিমের জন্য বিলিয়েছিলেন! 

গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪ রানে অল আউট হয়ে বৃষ্টির সৌজন্যে একটা পয়েন্ট পেয়ে সেমিফাইনালে গিয়েছিল পাকিস্তান। বৃষ্টির সৌজন্যে পাওয়া পাকিস্তানের এক পয়েন্ট বিশ্বকাপের অনেক অংক উল্টে দিয়েছিল। অতি বাস্তববাদী অস্ট্রেলিয়ানদের কেউ কেউ আবার মনে করছেন; বাংলাদেশের বিপক্ষে এই এক  পয়েন্ট-ই তাদের চ্যাম্পিয়ন করতে পারে। এই পয়েন্টটাকে তাই ক্রিকেট দেবতার আর্শীবাদ হিসেবে নিচ্ছেন তারা। দেখে যাক এই একটা পয়েন্ট পেয়ে অ্যালেন বোর্ডারের আক্ষেপ ঘোচাতে পারেন কি না মাইকেল ক্লার্ক। প্রায় দুই যুগ আগে দেশের মাটিতে বোর্ডার বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। ক্লার্ক পারবেন তো?

বাংলাদেশ সময় ১৬২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫

** ভেসে গেল টাইগার-ক্যাঙ্গারু লড়াই, পয়েন্ট ভাগাভাগি
** ব্রিসবেনে ঝুম বৃষ্টি, মিইয়ে যাচ্ছে খেলার সম্ভাবনা
** টিকেটের মূল্য ফেরত দেওয়া হবে, যদি...
** সম্ভাবনা জিইয়ে থাকছে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত
** জিইয়ে আছে টাইগার-ক্যাঙ্গারু লড়াইয়ের সম্ভাবনা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।