ক্রিকেটকে জ্যামিতিক দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করা কঠিন। যদিও ক্রিকেটে বোলারদের কনুই বাঁকানোর ডিগ্রি-টিগ্রির হিসাব এখন যেভাবে ঢুকে পড়েছে, তাতে জ্যামিতিকে দূরে রাখবেন কিভাবে! আসলে জ্যামিতিতো গনিতেরই অংশ।
বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা আছে বিশ্বকাপের পুল ‘এ’-তে। অন্যদের সঙ্গে এই পুল ‘এ’-তেই আছে আফগানিস্তানও। আর বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা দুটো দলই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলে ফেলেছে। তাহলে আফগানিস্তান - বাংলাদেশ-শ্রীলংকা মোটামুটি একটা ক্রিকেটীয় ত্রিভুজের তিনটা কোন। ক্রিকেটে এক ম্যাচের সংগে আরেক ম্যাচের তুলনা করা ঠিক না। তবে তুলনামুলক বিচারে একটা ফ্যাক্টর খুঁজে বের করা যেতে পাওে, যা পরের ম্যাচে কাজে লাগতে পারে।
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। এবং শ্রীলংকা-আফগানিস্তান। ম্যাচ দুটোকে পাশাপাশি রাখলে মাশরাফি-সাকিব-মুশফিক-তামিমরা উদ্দীপ্ত হওয়ার অনেক উপাদান খুঁজে পাবেন। যদিও দুটো ম্যাচ হয়েছে দু’জায়গায়। তবে একটা ফ্যাক্টর কমন । বাংলাদেশ-শ্রীলংকা দুটো দলেরই প্রতিপক্ষের নাম ছিল আফগানিস্তান। সেই আফগানিস্তানকে কমন ফ্যাক্টর ধরে যদি হিসেব করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকছে। এবং সেটা সহজ গানিতিক হিসেবে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ রান তুলেছে ওভার প্রতি ৫ দশমিক ৩৪ গড়ে। আর আফগানরা বাংলাদেশের বিপক্ষে রান করেছে ওভার প্রতি ৩ দশমিক ৭৮ গড়ে। অন্যদিকে, শ্রীলংকার বিপক্ষে আফগান ব্যাটসম্যানরা ৪ দশমিক ৬৭ গড়ে রান করেছেন। এবং তাদের সেই রানের জবাব দিতে গিয়ে লংকান ব্যাটসম্যানরা ওভার প্রতি রান তুলেছিলেন ৪ দশমিক ৮৮ গড়ে। রান তোলার দিক থেকে যেমন বাংলাদেশ এগিয়ে। রান দেয়ার ক্ষেত্রেও লংকান বোলারদের তুলনায় তারা অনেক বেশি কৃপনতার পরিচয় দিয়েছেন।
রান তোলা, রান দেয়ার সহজ সমীকরণে লংকানদের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত। পুল টেবিলেও লংকানদের উপরে তারা। এটা ভেবে এবং পয়েন্ট তালিকাটা দেখে খানিকটা স্বস্তি পেতে পারেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। কিন্তু যে দলটা তিন তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে, একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদের বিপক্ষে একটা ম্যাচের হিসেব নিকেশ দিয়ে পরের ম্যাচের সমীকরণ মেলানো কি ঠিক হবে?
না। সেই বোকামি না করাই ভাল। তবে খেলটা যখন মেলবোর্নে সেখানকার হিসেব নিকেশকেও একটু মাথায় রাখতে হবে। এমসিজিতে এর আগে কখনো খেলেনি বাংলাদেশ। আর বহু ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা লংকানদের। তবে এমসিজি দু’দলকেই বড় পরীক্ষায় ফেলতে পারে। টস জিতুন কিংবা হারুন, আগে ব্যাট করলে ২৮০-র উপরে রান না তুলতে পারলে জেতা কঠিন। এমসিজিতে গত এগারটা ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে রান উঠেছে গড়ে ২৮০-র উপরে। অতএব বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় কঠিন কাজ অপেক্ষা করছে শ্রীলংকা ম্যাচে। রান। রান। এবং রান। এই ম্যাচ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে রান চাইবে। বোলারদের কাছে চাইবে উইকেট। তা না হলে মেলবোর্নে বাঘের গর্জন নয়, সিংহের তর্জন-গর্জন শুনতে হবে।
মেলবোর্নে প্রবাসী শ্রীলংকানদের সংখ্যাও তুলনামুলকভাবে বেশি। গ্যালারির চেহারাটা নীল-হলুদে ভেসে যেতে পারে। সেখানে লাল-সবুজ জেগে উঠতে পারে শুধু মাত্র বাংলাদেশ ভাল খেললে। আফগানদের বধ করা আর সিংহের সঙ্গে লড়াই করা এক নয়, সেটা হয়তো সবাই জানেন। জানেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও। তবে লংকানদের বিপক্ষে ভাল খেলার নজিরও আছে বাংলাদেশের। দলের লংকান কোচ হাতুরুসিংহে তার নিজের দেশের ক্রিকেটারদের যেমন চেনেন, তেমননি জানেন তার নিজের দলের শক্তি আর দুর্বলতা কোথায়।
ম্যাচের সময় মেলবোর্নে সামুদ্রিক পাখিদের দেখা যায় না। তার কারণ, স্কাই ক্যামেরা। কিন্তু ম্যাচ শেষে মেলবোর্ন নীল-হলুদের ঢেউ দেখবে নাকি লাল সবুজ! উত্তরটা তোলা রইলো ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতের জন্য। ম্যাচ শেষে যখন সামুদ্রিক পাখিরা আবার ফিরে আসবে এমসিজিতে। সেই সময় মেলবোর্নের চেহারাটা কি রুপ নেয় তা দেখার জন্য ক্রিকেট বিশ্বও তাকিয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সময় ১০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে