‘তাসমান যুদ্ধ’র আগে অস্ট্রেলিয়া অন্যরকম এক বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য এখানে তাদের প্রতিপক্ষের নাম কোনভাবেই নিউজিল্যান্ড নয়।
হ্যাঁ, লড়াইটা কথার লড়াই। যেখানে সাবেক বর্তমান সবাই মিলেই লড়ছেন। আর সেই লড়াইয়ে শুরুটা করেছেন শেন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়া দলের বর্তমান কোচ এবং ওয়ার্নেও সাবেক টিমমেট ড্যারেন লেম্যানের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্ন। প্রশ্ন তার দলে অধিনায়কের ভুমিকা নিয়ে।
না। বর্তমান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক-কে নিয়ে প্রশ্নটা নয়। প্রশ্নটা ওয়ার্নের ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেয়া স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে। দিন দুয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার একটা রেডিওতে সাক্ষাতকার দেয়ার সময় সাবেক এই লেগ স্পিনার প্রশ্ন তুলেছেন দলে ড্যারেন লেহম্যান এবং স্মিথের ভুমিকা নিয়ে। ওয়ার্নের মন্তব্য: ‘ড্যারেনের জানা উচিৎ দলে একজন কোচের কি কাজ আর ক্যাপ্টেনের কি কাজ। ’ মেলবোর্ন টেস্টের সময় ড্যারেন সাইড লাইনের পাশ থেকে ইনিংস ডিক্লেয়ার করার ইশারা করেছিলেন! এমন দাবি করে সাবেক এই স্পিন কিং বলেছেন, কাজাট করার কথা অধিনায়কের। কিন্তু ড্যারেন নিজে করতে গেলেন কেন? তিনি কি অস্ট্রেলিয়া দলের পুরো কর্তৃত্ব নিতে চাইচ্ছেন! শেন ওয়ার্নেও এই সব কথা শুনে মুখে খুলেছেন স্মিথ, ড্যারেনের পাশাপাশি সাবেকরাও। মাইকেল স্ল্যাটার যেমন আরেকটা রেডিওকে বলেছেন, ‘ ওয়ার্ন হেড লাইন হওয়ার জন্য সব সময় ভাল। কিন্তু তিনি এখন যা বলছেন তা শুনছে কে? আমার মনে হয় না অস্ট্রেলিয়া দল আর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা ওর এসব কথাবার্তাকে পাত্তা দিচ্ছেন। পাত্তা দেয়ারও আসলে কিছু নেই। ’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক এবং বোর্ড সদস্য মার্ক টেলর অবশ্য ওরকম সোজা সাপটা আক্রমনের পথে হাঁটেননি। তিনি শুধু বলেছেন;‘ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সংস্কৃতিতে কোন পরিবর্তন আসেনি। যেখানে অধিনায়কের কর্তৃত্বকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ম্যাচে দল চালান অধিনায়ক। ’ অস্ট্রেলিয়ার এই দলটার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কেও ঘুম ঘনিষ্ট ওর্য়ান। তাদের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। অনেকে তাই এটাকে ক্লার্কের হয়ে ওয়ার্নের ব্যাটিং কি না তাও ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু ক্লার্ক এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আদৌ আগ্রহী নন। তার সমস্ত আগ্রহ এখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮ ফেব্রুয়ারির ম্যাচকে ঘিরে। লম্বা সময় পরে দলে ফেরার অপেক্ষোয় ক্লার্ক। তিনি ফেরা মানে আবার অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েই ফেরা। যার অর্থ আগামী ম্যাচে একাদশে জায়গা হবে না বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেয়া জর্জ বেইলির।
ইডেন পার্কে বেইলি দলে জায়গা পাবেন না। অথচ আগের ম্যাচে তিনি-ই ছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক!
আসলে এটাই হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সংস্কৃতি। কাউকে তারা অপরিহার্য মনে করেন না। আবার দলটা এমনভাবে সাজানো যেখানে কাউকে জায়গা করে দিতে টিম কম্বিনেশনে কোন পরিবর্তন আনতে হবে! বাংলাদেশে হলে হয়তো এরকম ভাবা যেতো না। কিন্তু এই হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। সেই দলটার যিনি অধিনায়কত্ব করেছেন ক্লার্কের অনুপস্থিতিতে সেই স্মিথ অবশ্য পরিস্কার বলেছেন; ‘মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে যা ঘটেছে তা সবাই দেখেছেন। ইনিংস ডিক্লেয়াওে সিদ্ধান্ত ড্যারেন লেম্যান নয়, ক্যাপ্টেন নিজেই নিয়েছেন। ড্রেসিংরুমের সবাই সেটা জানতেন,’ দাবি স্মিথের।
স্মিথের কথা পড়ে মনে হচ্ছে; এতো মেলবোর্নেও মতো আয়তনে এতো বড় মাঠের বাউন্ডারি লাইনের ওপারে ফেলা দেয়া হলো সাবেক লেগ স্পিন কিং-কে। তবে এরপরও ওয়ার্ন তার এই বোলিং স্পেলটা খুব দ্রুত শেষ করেন কি না সেটাই দেখার বিষয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অন্দর মহলে অস্বস্তির একটা চোরা¯্রােত যে বইতে শুরু করেছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশ সময় ১৬৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে