অকল্যান্ড থেকে: ফিল হিউজ নেই! তবু তিনি আছেন বিশ্বকাপে! সিডনিতে মাইকেল ক্লার্ক শ্রীলংকার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন কালো আর্মব্যান্ড পরে। হিউজকে এখনো তিনি ভুলতে পারেননি।
হিউজের মৃত্যুর পর এক সাবেক অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট নিল হার্ভে বলেছিলেন, ‘হিউজ বাউন্সারের আঘাতে মারা যাননি। মারা গেছেন টেকনিকের অভাবে!’ কিন্তু হিউজ যে প্রজন্মের ব্যাটসম্যান, তারা তো বিশ্বকাপেও দেখিয়ে দিচ্ছেন ক্রিকেটকে কতোটা পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা তারা রাখেন।
অস্ট্রেলিয়ান দলটার দিকে তাকান। স্টিভেন স্মিথ, জেমস ফকনার, জোশ হ্যাজেলউড। নিউজিল্যান্ড দলটার দিকে তাকান- টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, কেন উইলিয়ামসন, কোরি অ্যান্ডারসন। দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেও তাকান, পেয়ে যাবেন একাধিক নাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, একই অবস্থা। ভারত তো তাকিয়েই রয়েছে বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজার দিকে। অন্য সবার কথা বাদ দিলাম।
তালিকাটা আরো বড় নাইবা করলাম। নিজের দেশের দিকে তাকান। খুব বড় দুটো নাম। রুবেল হোসেন ও নাসির হোসেন। এদের সবার শরীরের ভাষা কি অন্যদের থেকে একটু আলাদা নয়? মানতেই হচ্ছে এরা একটু আলাদা। শরীরের ভাষা, মুখের ভাষা, ক্রিকেটীয় ভাষাও এদের আলাদা! এরা সবাই খেলেছেন ফিল হিউজের সঙ্গে অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপে। এরা যেন একটু আলাদা।
আলাদা সব কিছুর জন্য এই প্রজন্মের ক্রিকেটারদের বলা হচ্ছে, ‘ক্লাস অব জিরো এইট’! বুঝতে যাতে আরো একটু সুবিধা হয়, তার জন্য পুরো ব্যাপারটাকে একটু ব্যাখ্যা করার দরকার।
দু’হাজার আট সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। সেবার কাপটা জিতেছিল বিরাট কোহলির ভারত। তবে সেটা বড় কথা নয়; ওই টুর্নামেন্টের একদল ক্রিকেটার এবারের বিশ্বকাপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের হয়ে। যাদের একটা কোড নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ক্লাস অব জিরো এইট’। সত্যিই এরা অন্যরকম ক্রিকেট খেলেছন। ক্রিকেটগ্রহে এখন এরাই তারকা হয়ে জ্বলছেন। ফিল হিউজও হয়তো দূর থেকে সেটা দেখছেন আর মনে মনে বলছেন, ‘আমি তো তোমাদেরই একজন ছিলাম!’
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগেও তাই আলোচনায় সেই ক্লাস অব জিরো এইট। ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, ড্যানিয়েল ভেট্টরির মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলে থাকতে আলোচনায় যে চারটা নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে তারা হচ্ছেন টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, কেন উইলিয়ামসন ও কোরি অ্যান্ডারসন। তারা ওই ‘জিরো এইট’ প্রজন্মের প্রতিনিধি। বাংলাদেশ দলে এই মুহূর্তের আলোচিত নাম রুবেল হোসেন। তিনিও সেই একই প্রজন্মের। ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপে খেলা ক্রিকেটার। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের গুরুত্ব কি এরা আমাদের সবাইকে এখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন না? কিন্তু আমরা, বাংলাদেশ ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট লোকজন কি দেখছি!
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কেও বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে দু’দলের লড়াইয়ের মধ্যেও অন্যরকম একটা লড়াই হতে পারে, ‘জিরো এইট’ প্রজন্ম বনাম ‘জিরো এইট প্রজন্ম’! তবে সেই লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ড এগিয়ে থাকছে সেটা লিখে দেওয়া যায় একটু ঝুঁকি নিয়েও। কারণ, বলহাতে দুর্দান্ত ফর্মে টিম সাউদি আর ট্রেন্ট বোল্ট। দু’জনেই এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে পাল্লা দিয়ে উইকেট তুলে নিচ্ছেন। স্যার রিচার্ড হ্যাডলির মতো লোক দ্বিধাহীন চিত্তে বলছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা নুতন বলের জুটি সাউদি ও বোল্ট। ’ বলবেন না কেন! টিম সাউদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ৭ উইকেট নিলেন ৩৩ রানে। এরপর বোল্ট অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৭ রানে নিলেন ৫ উইকেট।
এতো গেলো সেই বোলারদের কথা। ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসন নার্ভ ঠিক রেখে যেভাবে প্যাট কমিন্সকে স্ট্রেট ওভার বাউন্ডারি মেরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডকে জেতালেন তাতে কি মনে হয় না এরা একটু ভিন্ন জাতের!
অন্যদের জাতের কথা বাদ দিন। বাংলাদেশ দলে যে দু’জন আছেন তাদের একজন নাসির হোসেন। এক সময় বাংলাদেশ দলে ‘মিস্টার ফিনিশার’ হিসেবে যিনি পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে যথেষ্ট সাহসী। বলটাও একটু করে দিতে পারেন। আর রুবলে হোসেন? তিনি কি পারেন সেটা ইংল্যান্ড টের পেয়েছে অ্যাডিলেডে। সেটা দেখে বাংলাদেশের কোনো এক নাজনীন আখতার হ্যাপি রুবেলের বিরুদ্ধে করা মামলা নাকি তুলে নিয়েছেন। তবে হ্যাপিসহ গোটা দেশ খুশি হলেও রুবেলের পারফরম্যান্স বাড়িয়ে দিচ্ছে নিউজিল্যান্ডের দুশ্চিন্তা।
এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে হ্যাটট্রিকসহ ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন পেসার রুবেল হোসেন। সেডন পার্কে আবার তেমন কিছু যদি ঘটিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের এই পেসার তাহলে অপরাজিত থেকে কিউইদের নক আউট পর্বে যাওয়ার স্বপ্নটা ফিকে হয়ে যেতে পারে।
তবে ফিকে নয়, ধূসর নয়, আগামী দিনের ক্রিকেট অনেক বেশি রঙিন আর উজ্জ্বল হচ্ছে- সৌজন্যে জিরো এইট ক্লাস!
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৫
** অ্যাডিলেডে শরতের রংও যেন লাল-সবুজ | অঘোর মন্ডল, অ্যাডিলেড থেকে