ঢাকা: বিপিএলের লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে (৩০তম) নাসির হোসেনের ঢাকা ডায়নামাইটস মুখোমুখি হয় মাহামুদুল্লাহ রিয়াদের বরিশাল বুলসের বিপক্ষে। এ ম্যাচে নাসিরের নেতৃত্বে খেলা ঢাকাকে দুই বল হাতে রেখে হারিয়ে দেয় বরিশাল।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বরিশাল অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বরিশাল বুলসকে ১৩৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ঢাকা ডায়নামাইটস। জবাবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা বরিশাল ১৯.৪ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়েও জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। বুলসকে জেতাতে অসাধারণ ব্যাটিং করেন রায়াদ এমরিত।
এর আগে দিনের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে সিলেট সুপার স্টারসের হারের সুবাদে ঢাকার পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়। তাই অনেকটা নির্ভার হয়েই বরিশালের মুখোমুখি হয় ঢাকা। বরিশালের হয়ে এ ম্যাচে ছিলেন না ক্রিস গেইল আর ঢাকার হয়ে মাঠে নামেননি নিয়মিত অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা।
ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনিং জুটিতেই ৪২ রান তোলেন মোহাম্মদ হাফিজ (২৫) ও ফরহাদ রেজা (১৯)। অধিনায়ক নাসির হোসেনের ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান। ব্যক্তিগত ১০ রানে জিম্বাবুয়ের ম্যালকম ওয়ালার ও ১৩ রান করে আউট হন সৈকত আলী।
ইনিংসের ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে রায়াদ এমরিতের বলে মাহমুদুল্লার ক্যাচে পরিণত হন রায়ান টেন ডোয়েসকেট (২২)। শেষদিকে, মোসাদ্দেক হোসেন ৩১ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন। নির্ধারিত ওভার শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৩৬ রান তোলে ঢাকা।
বরিশালের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট দখল করেন নিখিল দত্ত। হাফিজ, নাসির ও ওয়ালারকে সাজঘরে ফেরান কুয়েতি বংশোদ্ভুত ২১ বছর বয়সী এ কানাডিয়ান অফস্পিনার। ক্যারিবিয়ান পেসার এমরিত দু’টি ও সোহাগ গাজী একটি উইকেট লাভ করেন।
১৩৭ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৫ রানের মাথায় বরিশালের ওপেনার রনি তালুকদার বিদায় নেন। মোহাম্মদ ইরফানের বলে উইকেটের পেছনে থাকা ইরফান শুক্কুরের গ্লাভসবন্দি হন ৪ রান করা রনি তালুকদার। দলীয় ২৩ রানে আউট হন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলর। নাবিল সামাদের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন ৩ রান করা টেইলর।
স্কোরবোর্ডে মাত্র দুই রান যোগ হতেই নাবিল সামাদ বোল্ড করেন বুলসের দলপতি মাহামুদুল্লাহ রিয়াদকে (১)। দলীয় ৪৫ রানের মাথায় বরিশালের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন বিপিএলের চলতি আসরের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ক্যারিবীয়ান ব্যাটসম্যান এভিন লুইস। মোসাদ্দেক হোসেনের করা নবম ওভারের শেষ বলে ম্যালকম ওয়ালারের তালুবন্দি হয়ে ফেরার আগে লুইসের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান।
লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সাব্বির রহমান। ইনিংসের ১১তম ওভারে মোশাররফ হোসেনের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ৪ রান করা সাব্বির। বুলসের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হয়ে বিদায় নেন সোহাগ গাজী (১)। দলীয় ৫৯ রানের মাথায় ঢাকার দলপতি নাসিরের বলে মোহাম্মদ হাফিজের তালুবন্দি হন গাজী।
বরিশালের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল দেখতে থাকা দলের ওপেনার মেহেদি মারুফ ছিলেন অবিচল। ক্যারিয়ার সেরা ৩৭ রান করেন তিনি। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় ইনিংসের ১৫তম ওভারে মোশাররফ হোসেনের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন মেহেদি। বিদায় নেওয়ার আগে ৪১ বলে তিনটি চার আর দুটি ছক্কায় তিনি তার ইনিংস সাজান। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে মোশাররফ হোসেনের তৃতীয় শিকারে বিদায় নেন সোহরাওয়ার্দি শুভ। ডোয়েসকাটের হাতে ধরা পড়ার আগে দুই রান করতে সক্ষম হন শুভ।
শেষদিকে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন এমরিত। ১৭তম ওভারে মোশাররফ হোসেনের বলে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান কমিয়ে আনেন এমরিত। তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন নিখিল দত্ত। শেষ দুই ওভারে বরিশালের প্রয়োজন হয় ২০ রান, হাতে ছিল দুটি উইকেট। ফরহাদ রেজার ১৯তম ওভার থেকে ১০ রান তুলে নেন এমরিত-নিখিল। শেষ ওভারে আরও ১০ রান প্রয়োজন হয় বরিশালের।
পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইরফানের শেষ ওভারের প্রথম বলে চার হাঁকান এমরিত। পরের বলে এমরিত সিঙ্গেল নিলে তৃতীয় বলে এক রান অতিরিক্ত পায় বুলস। চতুর্থ বলে চার হাঁকিয়ে বরিশালকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন এমরিত। দুই বল বাকি থাকতেই বরিশাল ১৩৭ রান তোলে।
ক্যারিয়ার সেরা ৫৪ রান করতে এমরিত ২৮ বলে ৬টি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকেন। নিখিল ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। এ দুই ব্যাটসম্যানের জুটি থেকে অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রান (২১ বলে) আসে।
ঢাকার হয়ে নাবিল সামাদ ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে পান দুটি উইকেট। মোশাররফ হোসেন ৪ ওভারে ২৯ রানের বিনিময়ে নেন তিনটি উইকেট। একটি করে উইকেট পান নাসির, ইরফান ও মোসাদ্দেক।
** শেষ ম্যাচে ঢাকার সংগ্রহ ১৩৬
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫
এমআর