ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

দেশ সেরা থেকে বিশ্বসেরা হতে চান রুমানা

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৬
দেশ সেরা থেকে বিশ্বসেরা হতে চান রুমানা ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: অল্প সময়েই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল উঠে এসেছে বিশ্বমঞ্চে। বিশ্বকাপের মতো আসরে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সে মাঠ কাঁপাচ্ছেন দেশের নারী ক্রিকেটাররা।

সালমা খাতুন, জাহানারা আলমরা তাদের পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল করছেন দেশের মুখ। বাংলাদেশকে উপরের দিকে টেনে তোলায় সালমা-জাহানারাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন আরেক যোদ্ধা। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের রুমানা আহমেদ।

২০১১ সালে অভিষেক ওয়ানডেতেই তার হাতে উঠেছিল ম্যাচসেরার পুরস্কার। সেই থেকে হয়ে উঠেছেন ওয়ানডে স্পেশালিস্ট। এরপর ধীরে ধীরে নিজের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন এই ক্রিকেটার। ব্যাটে-বলে রুমানা যেন ম্লান করে দিচ্ছেন সতীর্থ সালমা-জাহানারা-শুকতারাদেরও।
 
১৮ ওয়ানডেতে দুই অর্ধশতকে রুমানার রান ৪২৫। সর্বোচ্চ ৭৫, গড় ২৬.৫৬। রুমানার কাছাকাছি রান আছে কেবল লতা মন্ডলের। ১৯.১৭ গড়ে তিনি করেছেন ৩২৬ রান। সমান ১৮ ম্যাচ খেলে ফারজানা হক ও সালমার রান যথাক্রমে ৩০৩ ও ২৫৫।

বল হাতেও এরই মধ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন রুমানা। ২১ উইকেট নিয়ে শীর্ষে এখন এই লেগস্পিনার। সমসংখ্যাক ম্যাচ খেলা সালমা পেয়েছেন ১৯ উইকেট। জাহানারা ১৬, খাদিজাতুল ‍কুবরা ১৪ ও লতা মন্ডলের দখলে ১১ উইকেট। পারফরম্যান্স বিচারে বাংলাদেশের সেরা ওয়ানডে বোলার, ব্যাটসম্যান ও অলরাউন্ডার এখন রুমানাই।

ওয়ানডে স্পেশালিস্ট এই ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টিতেও ছুটছেন সেরা হওয়ার পথে। ব্যাট হাতে শীর্ষে থাকা সালমার থেকে মাত্র ২১ রানে পিছিয়ে রুমানা। শীর্ষে থাকা সালামার রান ৩৯৪ আর রুমানার ৩৭৩। দলের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ফারজানা হক, লতা মন্ডল, আয়শা রহমান, শুকতারা রহমানরা অনেকটাই পেছনে তার।

টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ২৮টি উইকেট পকেটে পুড়েছেন সালমা খাতুন। ১৬টি করে উইকেট দখলে নিয়েছেন জাহানারা আলম ও পান্না ঘোষ। এরপরই অবস্থান রুমানার। তার দখলে ১৫ উইকেট।

ব্যাট-বলের ‍এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরও ভালো কিছু করে দেখাতে চান অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ। লেগস্পিনের ঘূর্ণি আর ব্যাটের দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসে স্বপ্নটাও বড় হচ্ছে। দেশ ছাপিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের স্বপ্নে বিভোর ২৪ বছর বয়সী খুলনার এই মেয়ে।
 
সম্প্রতি বাংলানিউজের মুখোমুখি হন দেশসেরা ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ। কথোপকথনে উঠে আসে ক্রিকেটে হাতেখড়ি, প্রতিবন্ধকতা, পরিবারের সহযোগিতার প্রসঙ্গ। ক্রিকেটকে ঘিরে রুমানার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা, চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।  

শুরুর কথা:
একদিন পত্রিকায় দেখলাম নারী ক্রিকেটার বাছাই হবে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে। আমার বাড়ি খুলনার খালিশপুরে। বড় ভাই ইফতেখার হোসেন সেলিমের সঙ্গে সাহস করে চলে গেলাম ট্র্যায়াল দিতে। বাছাইয়ে টিকে যাই। আমার বড় ভাই, বড় বোন এরাই আমাকে সাপোর্ট করেছে। খোঁজ-খবর নিয়েছে। কোচ ইসতিয়াজ হোসেন পিলু আমাকে ক্রিকেটে হাতেখড়ি দেন। এর তিন মাস পর প্রথম বিভাগে খেলি খুলনায়। খুলনা আন্তঃজেলা ক্রিকেট খেলতে ঢাকায় আসছিল। তারপর একটা একটা করে ধাপ। তারপর ডিভিশন খেলা, ওখানেও ভালো করি। ঢাকায় আমাদের কোচ ছিলেন এহসান স্যার। প্রথম দেখায় পছন্দ করে দলে রেখে দেন আমাকে।
পরিবারের সহযোগিতা:
আমি খুব ভাগ্যবান, কারণ আমার পরিবার কখনও খেলতে বাধা দেয়নি। ফুল সাপোর্ট পেয়েছি। কিন্ত আশে-পাশের অনেক মানুষ আমার আম্মাকে বলতো, ‘মেয়েকে কেন আপনি খেলতে দিচ্ছেন?’ আমার মা খুব রক্ষণশীল। নামাজ-কালাম পড়তেন। প্রতিবেশীদের কথা হলো, তার মেয়ে হয়ে আমি কেন মাঠে খেলতে যাব। এখন তারাই গর্ব করে। অনেকে চাচ্ছে, আমার মাধ্যমেই তাদের মেয়েদেরও ক্রিকেটে পাঠাবে।

সাফল্যের পেছনে পরিশ্রম:
নিজে তো পরিশ্রম করছি। এছাড়া কোচ, ফিজিও, ট্রেনার-সবাই আমাকে সাহায্য করছেন। বিশ্রামের সময়গুলোতে খুলনায় পরিশ্রম করছি। আমাদের জেলায় যে কোচ আছে তিনিও আমাকে অনেক সাহায্য করছেন।

বাধা পেরিয়ে:
মেয়ে হিসেবে অনেক-বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আমাকে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। মেয়েরা সাধারণত মাঠ পায় না। এই ধারাবাহিকতাই চলছে এখন পর্যন্ত। মাঠের ব্যবস্থা খুব কম। আমি বলবো, সবাই যদি মেয়েদের একটু আলাদা নজরে দেখে। ছেলেরা একপাশে অনুশীলন করছে মেয়েরা একপাশে করছে-এমন যদি হতো। সবাই যেন মেয়েদের জন্য একটু খেলার জায়গা করে দেয়। তাহলে অনেক জায়গা থেকেই অনেক মেয়ে খেলোয়াড় উঠে আসবে। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট হচ্ছে, বিভিন্ন খেলা হচ্ছে মেয়েরা উঠে আসছে কিন্ত।

একাডেমি মাঠে প্রথম অনুশীলন:
আমাদের অনুশীলনের এখানে অনুমতি ছিল না। প্রথম দিকে আমরা শুরু করি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠ থেকে। ওই ছোট মাঠে আমাদের অনুশীলন হতো। এখানকার একাডেমিতে (মিরপুর ক্রিকেট একাডেমি) আমাদের একদিন রাখে। তখন দেখতাম সাকিব ভাই, মাশরাফি ভাইরা প্র্যাকটিস করছে। আমাদের খুব আশা জাগত এখানে কবে নেবে! তারপর হঠাৎ ২০১০ থেকে আমাদের এ মাঠে আনা হয়, এ মাঠে এলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। মনে হয় আরও ভালো করতে পারবো।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনা:
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং শেষ। যখন আমরা নিশ্চিত হলাম বিশ্বকাপ খেলতে পারবো তখন থেকেই আসলে মানসিকভাবে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। অনেক ভালো পারফরম্যান্স করার ইচ্ছা রয়েছে। আমি আমার ব্যক্তিগত দিক থেকে বলছি, ধারবাহিকতা রাখতে চাচ্ছি। এর চেয়েও ভালো গত আসর চেয়ে ভালো পারমরম্যান্স দিতে চাই দলকে। আমি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিকেই তাকাই বেশি। আমার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভালো হলে দলও ভালো করবে। তাছাড়া আমাদের দলের অনেক ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি করারও সক্ষমতা আছে। আমার মনে হচ্ছে বিশ্বকাপে পুরো দলটাই ভালো করবে।  

স্বপ্ন:
যেহেতু আমি অলরাউন্ডার আমার লক্ষ্য এক নম্বর ‍অলরাউন্ডার হয়ে নিজেকে ও বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। সালমা আপুতো গত বছর ছিলেন এক নম্বরে। এবার আমার লক্ষ্য পূরণ করতে চাই।  
 
নিজেদের ঘাটতি:
আমরা কোয়ালিফাইং থেকে দুটি ঘাটতি লক্ষ্য করছি। আমাদের ফিটনেসে ঘাটতি আছে। হিটিং জোন ও আমাদের স্ট্রোকটা একটু কম। অবশ্যই আমাদের কোচ তা লক্ষ্য করছেন।   এ সময়গুলোতে ইমপ্রুভ করতে হবে।

ক্রিকেট জীবন উপভোগ: 
সবাই ক্রিকেটারদের চেনে। নারী ক্রিকেটারদেরও সবাই চিনতে শুরু করেছে। ক্রিকেট জীবন উপভোগের বিষয়টি নির্ভর করে পারফরম্যান্সের ওপর। এখন আত্মবিশ্বাস খুব ভালো কাজ করছে। সবাই আমাকে নিয়ে আশা করে, গর্ব করে। আমি আসলে তাদের মুখ আরও উজ্জল করতে চাই। ব্যাট-বলের সঙ্গে থাকতে পারাটাই তো উপভোগ্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।