খুলনা: বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রয়াত অলরাউন্ডার কাজী মানজারুল ইসলাম রানা। তার বাড়ির পাশেই খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম।
স্টেডিয়াম থেকে হেঁটে গেলে ৫ মিনিটের পথ রানার বাড়ি। বাড়ির দোতলা থেকে স্টেডিয়াম দেখা যায়। এতো কাছে বাড়ি হলেও আসন্ন সিরিজ উপলক্ষে বিসিবি থেকে স্টেডিয়ামে আসার আমন্ত্রণ বা দাওয়াত পাননি রানার মা জামিলা খাতুন।
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে মুজগুন্নীতে রানার কাজী বাড়িতে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে আক্ষেপ করে এ কথা জানান তার মা।
জামিলা খাতুন বলেন, এ মাঠে খেলা হলে বুকটা ভরে যায়। যারা খেলতে আসে তারা আমার রানার মতো। তাদের জন্য দেয়া করি। যদিও আমাকে কোনো খেলা হলে কেউ দাওয়াত দেয় না। আমি দাওয়াত চাইও না।
শেষ দু’টো বাক্য বলার সময় দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন রানার মা।
জামিলা খাতুন স্মৃতিতে কাতর হয়ে বাড়ির দোতলায় রানার রুমে নিয়ে যান। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান রানার পাওয়া পুরস্কার, সনদ ও খেলায় ব্যবহৃত জার্সি, ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস, ট্রফি, বল, ক্যাপ, জুতাসহ আসবাবপত্র।
তিনি জানান, ২০০৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় রানার মৃত্যুর পর এ রুমে কেউ থাকে না। ছেলের স্মৃতি আকড়ে ধরে বেঁচে আছেন তিনি।
সংসার কেমন চলছে জানতে চাইলে জামিলা খাতুন বলেন, রানার বাবা নেই। ওরা তিন ভাই ছিলো। ছোট ছেলে রানা চলে যাওয়ার পর থেকে চাকুরিজীবী বড় ছেলের আয়ে কষ্ট করে সংসার চলছে। মেঝো ছেলে মনিরুল ইসলাম এমবিএ পাশ হলেও কোথাও চাকরি হয়নি। ২০১২ সালে আইসিসির সহ-সভাপতি থাকাকালে আ হ ম মুস্তফা কামাল আমাদের বাসায় এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন মেঝো ছেলের চাকরি দেবেন। তার মতো আরও অনেকেই আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি।
দুঃখ প্রকাশ করে রানার মা বলেন, মাঠে খেলা এলে সাংবাদিকরা আসেন সমবেদনা জানাতে ও খোঁজ খবর নিতে।
খেলোয়াড়রা খোঁজখবর নেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাশরাফি আমাকে মায়ের মতো ভালোবাসে-শ্রদ্ধা করে। খুলনায় এলে আমার সঙ্গে দেখা করতে বাসায় আসে। মোবাইলেও খোঁজখবর নেয়। এছাড়া তামিম, মুশফিকুর রহিমও বাসায় এসে খোঁজ খবর নেয়।
এতো না পওয়ার মাঝেও জামিলা খাতুনের সান্ত্বনা, আবু নাসের স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশের গ্যালারিটা রানা নামে রাখা হয়েছে। এজন্য তিনি ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান।
মিডিয়ার কারণেই গ্যালারির নাম রানার নামে হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
১৯৮৪ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনায় জন্মগ্রহণ করা রানার জাতীয় দলে টেস্ট অভিষেক ঘটে ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তার আগে ঘটে ওয়ানডে অভিষেক। দেশের হয়ে ছয়টি টেস্ট আর ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন তিনি। ২০০৭ সালে রানা খুলনার ডুমরিয়ায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। একই দুর্ঘটনায় নিহত হন খুলনা বিভাগীয় দলের আরেক সতীর্থ ক্রিকেটার সাজ্জাদুল হাসান সেতু।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
এমআরএম/এইচএ