ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

টাইগারদের অন্ধভক্ত!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৬
টাইগারদের অন্ধভক্ত! ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা‍: ‘ভোর রাতে কুমিল্লা থেকে এসে লাইনে দাঁড়ালাম। গভীর রাত হলো এখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।

টিকিট পেলে স্বপ্নের খেলোয়াড়দের দেখতে পাব। চিৎকার করে সাহস যোগাব। ’

শনিবার (০৫ মার্চ) দিবাগত গভীর রাতে মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইনডোরে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লা থেকে আগত ৮ম শ্রেণির ছাত্র মো. হৃদয় খান।

শুক্রবার (০৪ মার্চ) রাতে থেকে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন নরসিংদী থেকে আসা শাহেদ ও রফিক নামে দুই বন্ধু। ইউসিবি ব্যাংকের লাইনে শুক্রবার রাত, শনিবার সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেও তারা পাননি কাঙ্ক্ষিত টিকিট।

উল্টো তাদের কপালে জুটেছে পুলিশের মার। রোববার সকালে টিকিট পাবেন আশায় রাতটা ইউসিবি ব্যাংকের পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়িতে কাটাচ্ছেন শাহেদ ও রফিক। ঘুম আসছে না, তবু স্বপ্ন দেখছেন সোনার হরিণ টিকিটের।

রোববারের ফাইনাল ম্যাচটি গ্যালারিতে বসে চিৎকার করে প্রিয় খেলোয়াড়দের সমর্থন যোগাতে হৃদয়, শাহেদ আর রফিকের মতো হাজারো ‘অন্ধভক্ত’ টিকিটের আশায় স্টেডিয়াম পাড়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

হৃদয় বলেন, ‘মাঠে বসে খেলা দেখা ম‍ূল উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য তামিম-সাকিব আর মুশফিকদের সাহস যোগানো। টিকিট পাই আর না পাই কাপ জিতেই বাড়ি ফিরব। ’

তিনি বলেন, ‘লাইনে দাঁড়ানোর সিরিয়াল ১৫৮। শুনতেছি শতাধিক টিকিট দেবে। যদি ভাগ্যের জোরে টিকিট পাই তাহলে ভাববো বাংলাদেশ জিতবে। ’

শুক্রবার রাতে সিলেট থেকে এসেছেন সামন, রিপন, মাসুম ও মারুফ। চার বন্ধু দু’দিন ধরে ইউসিবি ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়েও দেখা পাননি টিকিটের।

টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ করে মারুফ বলেন, চার বন্ধু অনেক কষ্টে দু’দিন ফুটপাতে খেয়ে না খেয়ে আছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভালোবেসে মাঠে খেলা দেখব বলে এসেছি। কিন্তু লাইনে নয়, কালোবাজারিতে টিকিট আছে।

মাসুম বলেন, আমাদের মতো শত শত অন্ধভক্ত খেলা দেখতে এসেছেন। কিন্তু টিকিট না পেয়ে হতাশ সবাই। বিসিবি চাইলে টিকিট দিতে পারে।

টিকিটের জন্য শনিবার দুপুর থেকে ইউসিবি’র লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. আরিফ হোসেন। রাত জাগা উৎসর্গ করলেন প্রিয় খেলোয়াড়দের।

আরিফ বলেন, মশার কামড় কিছুই না। যদি রোববার টিকিটটা পেয়ে যাই সে আশায় আছি।

নারীদের লাইন নিয়ে ইনডোরে অভিযোগ করেন মো. কবির হোসেন। তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগ নারী বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। আড়াইশ টাকার টিকিট কিনে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করবে।

তার অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেল। কোহিন‍ূর নামে লাইনে দাঁড়ানো এক নারী বলেন, বাসায় কাজ করি। ছেলে খেলা দেখবে তাই টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি।

আয়েশা খাতুন নামে আরেক নারীও একই কথা জানান। জিজ্ঞাসা শুরু ও পুলিশের ভয় দেখানোর পর কয়েকজনকে বের হয়ে যেতেও দেখা গেছে। তবে রাত জেগে লাইনে দাঁড়ানো সব নারীকে কালোবাজারি বলে অভিযোগ করেছে ভক্তরা।

ইউসিবি ব্যাংক ও ইনডোর এলাকায় গিয়ে আরও দেখা যায়, খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা দিতে মাঠে যেতে একটি টিকিটের আশায় অনেকে দু’দিন ধরে লাইনে দাঁড়ানো।

রাত পার করতে ফুটপাতে ড্রেনের ওপর শুয়ে পড়েছেন। অনেকেই গল্প আর আড্ডায় সময় পার করছেন। এসব অন্ধভক্তদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো, রাত জাগা সব সফল হবে বাংলাদেশ জিতলে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫২ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৬
আরইউ/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।