ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ঐতিহাসিক টেস্ট জেতা হলো না বাংলাদেশের

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
ঐতিহাসিক টেস্ট জেতা হলো না বাংলাদেশের ছবি: উজ্জ্বল ধর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম থেকে: দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাত্র ২২ রানের পরাজয় মেনে নিতে হলো স্বাগতিকদের। সাদা পোশাকে সাকিব-মুশফিকদের প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড বধের অপেক্ষাটা আরেকটু দীর্ঘায়িত হলো।

রানের হিসেবে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে কম ব্যবধানের হার। আগের সর্বনিম্ন ছিল ৭৭ রান (ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ২০১২-১৩)।

চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ২৫৩ রান। শেষ দিনে টাইগারদের টার্গেট দাঁড়ায় ২৮৬ রান। তবে, বাংলাদেশ ২৬৩ রানে অলআউট হলে সিরিজে এগিয়ে যাওয়া হয়নি। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন বেন স্টোকস।

নিজেদের প্রথম ইনিংসে সফরকারীরা ২৯৩ রান তুলে অলআউট হয়। জবাবে, ব্যাটিংয়ে নেমে লিডের আশা জাগিয়েও শেষ দিকের ছন্দপতনে বাংলাদেশ তোলে ২৪৮ রান। ৪৫ রানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে ইংলিশরা। তবে, ২৪০ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। জয় পেতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৬ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৯৩
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৪৮
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৪০
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৬৩

সফরকারীদের হয়ে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন মঈন আলী। এছাড়া, জনি বেয়ারস্টোর করেন ৫২ রান। ৪০ রান আসে জো রুটের ব্যাট থেকে। ক্রিস ওকস করেন ৩৬ রান। আর অ্যালিস্টার কুক ৪, বেন ডাকেট ১৪, গ্যারি ব্যালান্স ১, বেন স্টোকস ১৮, আদিল রশিদ ২৬, স্টুয়ার্ট ব্রড ১৩ রান করেন।

টেস্ট অভিষেকের প্রথম ইনিংসে টাইগার অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ তুলে নেন সর্বোচ্চ ৬টি উইকেট। এছাড়া, সাকিব ও তাইজুল নেন দুটি করে উইকেট।

বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ইনিংসে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৮ রান। আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস করেন ২১ রান। তিন নম্বরে নামা মুমিনুল হক শূন্য রানে বিদায় নিলে চার নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করেন ৩৮ রান। টাইগার দলপতি মুশফিকুর খেলেন ৪৮ রানের ইনিংস। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৩১ রান। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা শফিউল ২ রান করে বিদায় নেন। এছাড়া, তিন অভিষিক্ত সাব্বির রহমান ১৯, মেহেদি হাসান মিরাজ ১ আর কামরুল ইসলাম রাব্বি শূন্য রানে ফেরেন।

ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট দখল করেন বেন স্টোকস। মঈন আলী নেন তিনটি উইকেট। আর আদিল রশিদ নেন দুটি উইকেট। বাকি উইকেটটি যায় গ্যারেথ ব্যাটির দখলে।

নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামে ইংল্যান্ড। সাকিব ঘূর্ণিতে দিশেহারা ইংলিশরা দলীয় ৬২ রানে টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারায়। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন বেন স্টোকস আর জনি বেয়ারস্টো। স্টোকসের ব্যাট থেকে আসে ৮৫ রান আর বেয়ারস্টো করেন ৪৭ রান। এই জুটি থেকে আসে ১২৭ রান।

এছাড়া, দ্বিতীয় ইনিংসে ইংলিশ দলপতি অ্যালিস্টার কুক ১২, বেন ডাকেট ১৫, জো রুট ১, গ্যারি ব্যালান্স ৯, মঈন আলী ১৪, আদিল রশিদ ৯ রান করেন। তৃতীয় দিন শেষে ইংলিশরা ৮ উইকেট হারিয়ে তোলে ২২৮ রান। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানের লিড মিলিয়ে ইংলিশরা এগিয়ে ছিল ২৭৩ রানে। চতুর্থ দিন ব্যাট হাতে নামেন আগের দিনে অপরাজিত থাকা ক্রিস ওকস এবং স্টুয়ার্ট ব্রড। দিনের দ্বিতীয় ওভারে রান আউটের ফাঁদে পড়েন ১০ রান করা স্টুয়ার্ট ব্রড। তাইজুলের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন গ্যারেথ ব্যাটি।

৮০.২ ওভারে ২৪০ রানে শেষ হয় ইংলিশদের ইনিংস। টাইগার সেরা স্পিনার সাকিব একাই নেন ৫টি উইকেট। দুটি উইকেট নেন তাইজুল। আর রাব্বি এবং মিরাজ নেন একটি করে উইকেট। এর আগে ৬১ বার প্রতিপক্ষকে অলআউট করলেও মাত্র ৮টি টেস্টে প্রতিপক্ষকে দু’বার অলআউট করেছিল বাংলাদেশ। যার ছয়টিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আর বাকি দুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর আটটি ম্যাচের কোনোটিতেই হারেনি বাংলাদেশ। এবার এক টেস্টেই দু’বার অলআউট হতে হয় ইংল্যান্ডকে। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করার রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রেনাডা টেস্টে ৪ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ।

২৮৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে টাইগারদের হয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ সতর্ক থেকেই ব্যাট করছিলেন। তবে, ইনিংসের দশম ওভারে মঈন আলীর বলে শর্ট লেগে ব্যালান্সের হাতে ধরা পড়েন তামিম। আগের বলে ক্যাচের আবেদনে রিভিউ নিয়েও তামিমকে ফেরাতে পারেনি ইংল্যান্ড। আউট হওয়ার আগে এই বাঁহাতি ৩৩ বল মোকাবেলা করে ৯ রান করেন। দলীয় ৩৫ রানের মাথায় টাইগারদের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে।

মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে বেশ ভালোই জবাব দিচ্ছিলেন ইমরুল কায়েস। তবে, চতুর্থ দিন মধ্যাহ্ন বিরতির কিছু আগে জো রুটের তালুবন্দি হতে হয় ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট চালানো ইমরুলকে। আদিল রশিদের বলে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ইমরুল ৬১ বল মোকাবেলা করে ৪৩ রান করেন। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার। মুমিনুলকে নিয়ে ৪৬ রানের জুটি গড়েন ইমরুল। দলীয় ৮১ রানের মাথায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে।

ইনিংসের ২৮তম ওভারে বিদায় নেন মুমিনুল হক। গ্যারেথ ব্যাটির বল সুইপ করতে গিয়ে প্যাডে লাগে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। প্রথমে ক্যাচের আবেদন করলে আম্পায়ার তা নাকচ করে দেন। তবে, রিভিউয়ে দেখা যায় মুমিনুলের স্টাম্পে বলটি আঘাত করতো। ফলে, এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নিতে হয় তাকে। আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে চারটি বাউন্ডারিতে ২৭ রান করেন মুমিনুল। মাহমুদুল্লাহ-মুমিনুল জুটিটি ২২ রানের। এক ওভার বিরতির পরই ফিরে যান মাহমুদুল্লাহ। ব্যাটির বলে এলবির ফাঁদে পড়েন ব্যক্তি ১৭ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তবে, রিভিউ চেয়েও বাঁচতে পারেননি ৩৬ বল খেলা মাহমুদুল্লাহ। দলীয় ১০৮ রানের মাথায় বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে।

মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে উঠছিল বাংলাদেশ। জুটি গড়ে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সাকিবও আউট হলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ৪১তম ওভারে মঈন আলীর বলে জনি বেয়ারস্টোর গ্লাভসে ধরা পড়েন সাকিব (২৪)। এর মধ্য দিয়ে মুশফিকের সঙ্গে ৩২ রানের জুটি ভাঙে।

এরপর জুটি গড়েন টাইগার দলপতি মুশফিক আর অভিষিক্ত সাব্বির। সাব্বির-মুশফিক জুটিতে আসে আরও ৮৭ রান। ইনিংসের ৬৮তম ওভারে গ্যারেথ ব্যাটির বলে ব্যক্তিগত ৩৯ রান করে ব্যালান্সের হাতে ক্যাচ দেন মুশফিক। তার ১২৪ বলের আত্মবিশ্বাসী ইনিংসে ছিল ৩টি চারের মার। মুশফিকের বিদায়ে সাব্বিরের সঙ্গে জুটি গড়তে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে, প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে ভালো কিছু করতে পারেননি মিরাজ। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন ১ রান করা মিরাজ। দলীয় ২৩৪ রানের মাথায় বাংলাদেশের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে। এরপর জুটি গড়তে পারেননি অভিষিক্ত সাব্বির-রাব্বি। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে গ্যারি ব্যালান্সের হাতে ধরা পড়েন রাব্বি (০)। ২৩৮ রানের মাথায় স্বাগতিকদের অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে।

জীবনের প্রথম টেস্টেই অগ্নিপরীক্ষার সামনে দাঁড়াতে হয় সাব্বিরকে। টেলএন্ডারদের নিয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন এই টি-টোয়েন্টির স্পেশালিস্ট। বাংলাদেশের ৮১তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ক্যাপ পরেন সাব্বির রহমান। যার অভিষেকটা হয়েছে টেস্টে ব্যাটিংয়ের সামর্থ্যের প্রশ্ন শুনে। আগের ৮০ জনের কেউই অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকাতে পারেননি। সাব্বিরই প্রথম এটি করে দেখান। শেষ দিনে উইকেটে অভিষিক্ত সাব্বির ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন। দিনের শুরুতে (চতুর্থ ওভারে) বেন স্টোকসের করা বলে এলবির ফাঁদে পড়েন আগের দিনের অপরাজিত থাকা তাইজুল। ৩২ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন তিনি। একই ওভারে শফিউলকেও এলবির ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন স্টোকস। আর এর মাধ্যমে ২২ রানের জয় তুলে নেয় ইংলিশরা। সাব্বির অপরাজিত থাকেন ৬৪ রান নিয়ে। তার ১০২ বলের ইনিংসে ছিল দুটি ছক্কা আর তিনটি চারের মার।

এর আগে স্পিনবান্ধব উইকেট কাজে লাগিয়ে সফল হন বাংলাদেশের স্পিনাররা। চট্টগ্রাম টেস্টের আগে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার যে সামর্থ্যের প্রশ্ন উঠেছিল সেটি বাতাসে মিলে যায়। ইংল্যান্ডের ২০ উইকেটই তুলে নিয়েছে টাইগাররা। যার ১৮ উইকেটই স্পিনারদের। একটি পেয়েছেন পেসার রাব্বি। এছাড়া, দুই ইনিংস মিলিয়ে সাকিব ৭টি, মেহেদি হাসান মিরাজ ৭টি আর বাকি ৪টি উইকেট তাইজুল ইসলামের দখলে যায়। স্টুয়ার্ট ব্রড শুধু রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, ২৪ অক্টোবর ২০১৬
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।