মিরপুর থেকে: চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় জয় পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে তামিম-মুমিনুল দলকে ভালো অবস্থানে পৌঁছে দিলেও মিডলঅর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৬৩.৫ ওভারে ২২০ রান তুলে অলআউট হয় স্বাগতিকরা।
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করেন তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই বিদায় নেন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। ক্রিস ওকসের লাফিয়ে ওঠা বলে শট নিয়ে ব্যক্তিগত ১ রানে বেন ডাকেটের হাতে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন ইমরুল।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায় দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয় সফরকারী ইংল্যান্ড আর স্বাগতিক বাংলাদেশ। ইংলিশদের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জিততে জিততেও হেরেছে টাইগাররা। লড়াই করে অভিজ্ঞ ইংলিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারটি ছিল রানের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন (২২ রানের)।
২৩তম ওভারে গিয়ে বাংলাদেশের দলীয় শতক আসে। দিনের প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেট হারিয়ে ১১৮ রান। তামিম-মুমিনুলের দৃঢ়তায় লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। বিরতির পর আবারো দারুণ শুরু করেন তামিম-মুমিনুল। ৭১ বলে নিজের দশম অর্ধশতকের দেখা পান মুমিনুল। আদিল রশিদকে চার হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত ৫০ করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
শুরু থেকে সতর্ক তামিম নিজের প্রথম রান নেন ২০তম বলে। ধীরে শুরু করলেও দ্রুতই খোলস ছেড়ে বের হন তামিম। দলীয় ৫০ রান উঠতেই তার ব্যাট থেকে ৫টি বাউন্ডারির মার দেখা যায়। সাতটি চারের সাহায্যে ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দেখা পান তামিম। সাদা পোশাকে তামিমের সেটি ছিল ২০তম অর্ধশতক। আর তা ছুঁতে এই বাঁহাতির লাগে মাত্র ৬০ বল। অর্ধশতককে টেনে নিতে লাঞ্চের পর টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি পূরণ করেন তামিম ইকবাল। ৪৪তম ম্যাচে এসে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি। ১৩৯ বলে ১২টি চারের সাহায্যে তিনি শতক পূর্ণ করেন।
ইনিংসের ৪২তম ওভারে মঈন আলীর বলে এলবির ফাঁদে পড়েন তামিম। আউট হওয়ার আগে টাইগার এই ওপেনার ১৪৭ বলে ১২টি বাউন্ডারিতে ১০৪ রান করেন। মুমিনুলের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে স্কোরবোর্ডে ১৭০ রান যোগ করেন তামিম। দলীয় ১৭১ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে টাইগারদের।
তামিম অর্ধশতককে শতকে রূপান্তর করতে পারলেও পারেননি মুমিনুল। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে মঈন আলীর বলে বোল্ড হন তিনি। এর আগে ১১১ বলের ইনিংসে মুমিনুল ১০টি চারের সাহায্যে করেন ৬৬ রান। দলীয় ১৯০ রানের মাথায় টাইগারদের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে।
এরপর জুটি গড়তে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর সাকিব আল হাসান। এক চার আর সমান ছয়ে ব্যক্তিগত ১৩ রান করে বিদায় নেন রিয়াদ। তার আগে সাকিবের সঙ্গে মাত্র ৬ রান যোগ করতে পারেন স্কোরবোর্ডে। দলীয় ১৯৬ রানের মাথায় টাইগারদের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। ইনিংসের ৫১তম ওভারে বেন স্টোকসের লাফিয়ে ওঠা বলে কোনো ফুটওয়ার্ক ছাড়াই ব্যাট ঠেলে দেন রিয়াদ। স্লিপে দাঁড়ানো অ্যালিস্টার কুকের কোনো সমস্যাই হয়নি সেটি তালুবন্দি করতে। যেন কুককে স্লিপ ক্যাচের অনুশীলন করাচ্ছিলেন রিয়াদ!
সাকিব-মুশফিকও পারেননি দলকে ভালো ভাবে টেনে নিতে। আগের ওভারে বেন স্টোকসের একটি ডেলিভারি মাথায় আঘাত করলেও খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা মুশফিক। তবে, পরের ওভারেই মঈন আলীর বলে কুকের হাতে ধরা পড়েন ৪ রান করা মুশফিক। ২০১ রানের মাথায় বাংলাদেশের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে। স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ হতেই স্টোকসের বলে উইকেটের পেছনে বেয়ারস্টোর হাতে ধরা পড়েন সাব্বির (০)।
দ্বিতীয় সেশনের বিরতির আগে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২০৫ রান। চা পানের বিরতির পর শুভাগত হোম ও মেহেদি হাসান মিরাজের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ক্রিস ওকসের বলে উইকেটরক্ষক জনি বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শুভাগত। কোনো ফুটওয়ার্ক না থাকায় জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্রিস ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরের হাফ ভলি খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ১৮ বলে ৬ রান করা শুভাগত। আর মঈন আলীর বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মিরাজ। মিরাজের উইকেটটি আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা প্রথমে আউট না দিলে ইংল্যান্ড রিভিউয়ের আবেদন জানায়। পরে থার্ড আম্পায়ারের নির্দেশে আউট হন এক রান করা মিরাজ।
স্বাগতিকদের নবম উইকেটের পতন ঘটে ২১৫ রানের মাথায়। ৩২ বলে ব্যক্তিগত ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাকিব আল হাসান। ক্রিস ওকসের বলে উইকেটের পেছনে বেয়ারস্টোর গ্লাভসবন্দি হন সাকিব। মঈন আলীর পঞ্চম শিকারে সাজঘরে ফেরেন রাব্বি। আর বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ২২০ রানে।
ইংলিশ স্পিনার মঈন আলী নেন ৫টি উইকেট। ক্রিস ওকস তিনটি আর বেন স্টোকস নেন দুটি উইকেট।
গত ম্যাচের একাদশ থেকে নেই শুধু পেসার শফিউল ইসলাম। তার জায়গায় এই ম্যাচে এসেছেন শুভাগত হোম। এদিকে, ইংলিশ দলে দুই পরিবর্তন এসেছে। পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডকে বিশ্রাম দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে স্টিভেন ফিনকে। আর স্পিনার গ্যারেথ ব্যাটির জায়গায় এসেছেন আরেক স্পিনার জাফর আনসারি। এটি আনসারির অভিষেক টেস্ট।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম রাব্বি, শুভাগত হোম।
ইংল্যান্ড একাদশ: অ্যালিস্টার কুক (অধিনায়ক), বেন ডাকেট, জো রুট, গ্যারি ব্যালান্স, মঈন আলি, জনি বেয়ারস্টো, আদিল রশিদ, জাফর আনসারি, ক্রিস ওকস, বেন স্টোকস, স্টিফেন ফিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ২৮ অক্টোবর ২০১৬
এমআরপি