মিরপুর থেকে: ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিক বাংলাদেশ অলআউট হওয়ার আগে সংগ্রহ করেছে ২৯৬ রান, তাতে টাইগারদের লিড ২৭২ রান। ২-০ তে সিরিজ জিততে হলে ইংল্যান্ডকে ২৭৩ রান করেই জিততে হবে।
তৃতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নেমে আগের দিন ৫৯ রানে অপরাজিত থাকা ইমরুল কায়েসের ব্যাটে টাইগারদের লিড বেড়েই চলছিল। তবে, ইনিংসের ৪৬তম ওভারে মঈন আলীর বল সুইপ করতে গিয়ে এলবির ফাঁদে পড়েন টাইগার ওপেনার। বিদায় নেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৭৮ রান। ১২০ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ইমরুল তার ইনিংসটি সাজান। দলীয় ২০০ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়। সাজঘরে ফেরার আগে সাকিবকে সঙ্গী করে স্কোরবোর্ডে আরও ৪৮ রান যোগ করেন ইমরুল।
এরপর জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। তৃতীয় দিন ব্যক্তিগত ২৩ রানে বেন ডাকেট ক্যাচ মিস করলে জীবন পান সাকিব। ডিপ মিডউইকেটে বেন ডাকেটের ব্যর্থতার মাঝে ৬ রানে থাকা মুশফিকের কঠিন একটি ক্যাচ ছেড়ে দেন স্টিভেন ফিন। তবে, ব্যক্তিগত ৪১ রানে আউট হন সাকিব। ইনিংসের ৫৫তম ওভারে আদিল রশিদের বলে বোল্ড হন ৮১ বলে ছয়টি চারে ইনিংস সাজানো সাকিব। বিদায়ের আগে মুশফিকের সঙ্গে স্কোরবোর্ডে আরও ৩৮ রান যোগ করেন তিনি। স্কোরবোর্ডে আর কোনো রান যোগ না হতেই সাকিবের পথ ধরেন ৯ রান করা মুশফিক। বেন স্টোকসের করা বলে অ্যালিস্টার কুকের তালুবন্দি হন টাইগার দলপতি।
বাংলাদেশের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন সাব্বির রহমান। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটে ছিলেন সাব্বির রহমান-শুভাগত হোম। ২৭ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৭ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ১৫ রান করা সাব্বির ইনিংসের ৬১তম ওভারে লাঞ্চের ঠিক আগে আদিল রশিদের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন। দলীয় ২৬৮ রানের মাথায় স্বাগতিকদের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে।
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষে (লাঞ্চ বিরতি) বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২৬৮/৭। দিনের প্রথম সেশনে ২৯.৩ ওভারে বাংলাদেশ ১১৬ রান তোলে। তাতে বিদায় নিতে হয় ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমানকে।
লাঞ্চের পর দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই বিদায় নেন ৫ রান করা তাইজুল ইসলাম। বেন স্টোকসের করা বলে উইকেটের পেছনে বেয়ারস্টোর গ্লাভসবন্দি হন তিনি। দলীয় ২৭৩ রানের মাথায় বাংলাদেশ অষ্টম উইকেট হারায়। ব্যক্তিগত ২ রান করে ফেরেন মিরাজ। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন ৭ রান করা রাব্বি। আর ২৮ বলে চারটি চারের সাহায্যে ২৫ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন শুভাগত হোম।
ইংলিশদের হয়ে চারটি উইকেট নেন আদিল রশিদ। বেন স্টোকস তিনটি উইকেট নেন, দুটি উইকেট নেন জাফর আনসারি। বাকি একটি উইকেট পান মঈন আলী।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে তোলা ২২০ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে সফরকারী ইংল্যান্ড ২৪৪ রান তুলে অলআউট হয়। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সফরকারীদের থেকে ২৪ রানে পিছিয়ে থেকে টাইগারদের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করেন গত ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। দ্বিতীয় দিন শেষে স্বাগতিকরা ৩ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৫২ রান।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে তামিমের বিদায়ে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। ৪৭ বলে ৪০ রান করতে তামিম সাতটি বাউন্ডারি হাঁকান। জাফর আনসারির বলে ইংলিশ দলপতি অ্যালিস্টার কুকের হাতে ধরা পড়েন তামিম। এটি ছিল আনসারির অভিষেক উইকেট। ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ৭৭ বলে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি এনে দেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস।
পরের ওভারে বিদায় নেন মুমিনুল হক। বেন স্টোকসের লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো কুকের তালুবন্দি হন ১ রান করা মুমিনুল। দলীয় ৬৬ রানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়। এরপর জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং ইমরুল। দিন শেষে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক হাঁকিয়ে ইমরুল কায়েস ৫৯ রানে (৮১ বল) অপরাজিত ছিলেন। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম অর্ধশতক তুলতে গিয়ে কিছুটা বোকামির পরিচয় দেন। দিনের একেবারে শেষ বলে জাফর আনসারিকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন। ৪৭ রানে বিদায় নিতে হয় রিয়াদকে। তার ৫৭ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চারের মার। রিয়াদ-ইমরুল মিলে স্কোরবোর্ডে ৮৬ রান যোগ করেন।
এর আগে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের প্রথম সেশনে একক আধিপত্য দেখায় টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর ক্রমেই যেন উইকেটের আচরণ বদলায়! দলীয় ১ রানে ইমরুল কায়েসকে (১) হারালেও মুমিনুল হককে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১৭০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে শক্ত ভিত গড়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল।
প্রথম ইনিংসে তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিং সত্ত্বেও বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২২০ রানে। শুরুটা বাঘের মতো হলেও মিডঅর্ডারের ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ গড়া হয়নি। চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট যেন ফিরে আসে মিরপুরে। বল মন্থর হয়ে ব্যাটে আসার সঙ্গে টার্নও বাড়তে থাকে। এর পুরো সুবিধাই কাজে লাগায় বোলাররা। শেষ ৪৯ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ ৩০ রানে আট উইকেট। ভাবা যায়! রীতিমতো ধসই নামের টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপে। ব্যাটিংয়ে হতাশার দিনে উজ্জ্বল ছিলেন তামিম ও মুমিনুল। অন্যদিকে, ইংলিশদের হয়ে একাই পাঁচ উইকেট দখল করেন অফস্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলী।
ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম (১০৪)। ৪২তম ওভারে মঈনের বলে এলবিডব্লুর শিকার হন দেশসেরা এ ওপেনার। মঈনের বলেই বোল্ড হয়ে ৬৬ রান করে আউট হন মুমিনুল। আর কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। বাজে শট খেলে একে একে সাজঘরে ফেরেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৩, সাকিব অাল হাসান ১০, অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ৪, সাব্বির রহমান ০, শুভাগত হোম ৬, কামরুল ইসলাম রাব্বি ০ ও মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১। ৫ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল ইসলাম।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপাকে পড়ে ইংলিশরা। দলীয় ১৪৪ রানেই হারিয়ে ফেলে ৮ উইকেট। সেখান থেকে আদিল রশিদ এবং ক্রিস ওকস দলকে টেনে তোলার পথে নবম উইকেট জুটিতে ৯৯ রানের পার্টনারশিপ করেন। ক্রিস ওকস ৪৬ রানে বিদায় নিলেও আদিল রশিদ ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন। কুক ১৪, ডাকেট ৭, জো রুট ৫৬, ব্যালান্স ৯, মঈন আলী ১০, বেন স্টোকস ০, বেয়ারস্টো ২৪, জাফর আনসারি ১৩ রান করেন।
অভিষেক টেস্টের মতোই বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন মিরাজ। ২৮ ওভারে ৮২ রান খরচায় তুলে নেন ৬টি উইকেট। তিনটি উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। আর একটি উইকেট দখল করেন সাকিব আল হাসান।
সিরিজ বাঁচাতে এ ম্যাচে মুশফিকদের জয়ের বিকল্প নেই। দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে সফরকারীরা। চট্টগ্রামে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও শেষদিকের ছন্দপতনে ২২ রানের পরাজয় সঙ্গী হয়।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: (৬৩.৫ ওভার ২২০)
তামিম ১০৪, ইমরুল ১, মুমিনুল ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সাকিব ১০, মুশফিক ৪, সাব্বির ০, শুভাগত ৬, মিরাজ ১, তাইজুল ৫*, কামরুল ০; মঈন ৫/৫৭, ক্রিস ওকস ৩/৩০, বেন স্টোকস ২/১৩।
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: (৮১.৩ ওভার ২৪৪)
অ্যালিস্টার কুক ১৪, ডাকেট ৭, রুট ৫৬, ব্যালান্স ৯, মঈন ১০, স্টোকস ০, বেয়ারস্টো ২৪, আনসারি ১৩, ওকস ৪৬, রশিদ ৪৪*, ফিন ০; মিরাজ ৬/৮২, তাইজুল ৩/৬৫, সাকিব ১/৪১।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ৩০ অক্টোবর ২০১৬
এমআরপি