ঢাকা: গেলো ৩০ অক্টোবর মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানের বড় ব্যবধানে হারানোর আগে বাংলাদেশ জিতেছে আরও সাতটি টেস্ট ম্যাচ। যেখানে পাঁচটিতেই প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে আর দুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এর আগে, টেস্টে টাইগারদের প্রথম বাংলাওয়াশের অনন্য কীর্তি লেখা হয় ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ক্যারিবিয়ার দ্বীপ সফরে গিয়ে দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্টের দুটিতেই স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদ দিয়ে তবেই দেশে ফিরেছিল সাকিব বাহিনী।
এছাড়াও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের বাদবাকি যে দুটি জয় এসেছে তার একটি ছিল ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে। আরেকটি ছিল ২০০৫ সালে ঢাকায়।
বাংলাদেশের এই আট জয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে অধিকাংশ ম্যাচই টাইগারদের পুরো পাঁচদিনই খেলতে হয়েছে এবং দিনের এক সেশনে প্রতিপক্ষকে অলআউট করে জয় ছিনিয়ে আনার মতো বিরল ঘটনা এই আট ম্যাচের একটিতেও ছিল না, যা হলো ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী টেস্ট খেলুড়ে দলটির বিপক্ষে।
ঠিক এ কারণেই এই জয়টিকে বাংলাদেশের অন্যতম জয় বলে আখ্যা দিলেন টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাইলফলক সৃষ্টিকারী টেস্ট জয় নিয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এই টাইগার দলপতি বললেন, আমার যেটা ভালো লেগেছে সেটা হলো, প্রথম ম্যাচ হারার পরেও ছেলেরা হতাশ না হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত যা হয়, হতাশ হয়ে গেলে ফলাফল আরও খারাপ হয়। তাছাড়া চট্টগ্রামের মতো ওই রকম ক্লোজ একটি ম্যাচ হাতছাড়া হলে তা পরের ম্যাচে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারতো। কিন্তু সেটি হয়নি। টেস্ট ক্রিকেটে একটা দুইটা সেশন আলাদা ব্যাপার। ওইটাই টেস্ট। ওভারঅল যদি বলেন এটা বাংলাদেশের অন্যতম একটা জয়।
তবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ওই ম্যাচটিকে কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না ম্যাশ। জয়ের খুব কাছে গিয়েও ২২ রানের হারটি যেন তার মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে মাশরাফি বলেন, প্রথম ম্যাচেই জয়ের কাছে ছিলাম। তারপরও হয়নি, এটি কোনো ব্যাপার না। ভালো লেগেছে এটা ভেবে যে ছেলেরা মানসিক দিক থেকে এগিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে টাইগার কাপ্তান অবলীলায় বলতে থাকলেন ব্যাট হাতে সাকিব, তামিম, রিয়াদ, ইমরুলের লড়াকু মনোভাবের কথা। ঢাকার এই উইকেটে প্রথম ইনিংস এমনকি দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে রক্ষণাত্নক না খেলে তামিম, ইমরুলরা যে আক্রমণাত্নক খেলা খেলেছেন তাতে তাদের বাহবা না দিয়ে পারলেন না মাশরাফি। পাশাপাশি হৃদয় নিংড়ানো প্রশংসায় ভাসালেন সাকিব, মিরাজকে। তাদের স্পিন যাদুই তৃতীয় দিনের শেষ বেলায় বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ঐতিহাসিক জয়।
‘আসলে এই উইকেটে টিকে থাকা খুবই কষ্টকর ছিল। শটস খেলাই ছিল সব চাইতে সেরা অপশন। আমরা সেটা করতে পেরেছি কিন্তু ইংল্যান্ড করতে পারেনি। একই সঙ্গে সাকিব ও মিরাজের স্পিন দারুণ চাপ ফেলে। দারুণ বোলিং করেছে ওরা। মূলত এখানেই আমরা এগিয়ে ছিলাম। আর ছোট ছোট পারফরমেন্স যদি বলেন, সবাই ভালো খেলেছে। প্রায় ছয়-সাতজন ব্যাটসম্যান ভালো করেছে, চার-পাঁচজন বোলারও ভালো করেছে। এখানে তিনদিন বা চারদিন কোনো বিষয় না, যেমন উইকেট তেমন খেলা,’ যোগ করেন ম্যাশ।
এদিকে আসছে ডিসেম্বরে তিনটি ওয়ানডে, তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট খেলতে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ। যেখানে স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন ফর্মেটেই ভালো কিছু করা কঠিন বলে মনে করছেন না মাশরাফি।
তবে মজার ব্যাপার হলো ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপক্ষে তার প্রেরণার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট জয় আর অবশ্যই সফরকারীদের বিপক্ষে পুরো সিরিজে টাইগারদের পারফরমেন্স।
‘নিউজিল্যান্ড সফরে ভালো কিছু করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব না। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে পৃথিবীর সেরা দলেরাও সংগ্রাম করে। আর আমরা তো গেলো দুই বছর নিজেদের মাঠেই খেলছি। তবে এই সিরিজে সম্পূর্ণ আলাদা একটি দল হয়ে যাবো। অবশ্যই ভালো কিছু আশা করছি, সেরকম অনুশীলনও হবে। সেরকমভাবে তৈরি হতে হবে, ভালো খেলার কোনো বিকল্পই নেই,’ মত মাশরাফির।
বাংলাদেশ সময়: ০১০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এইচএল/আইএ