ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ব্রিটিশ বধের নায়কের খেলা দেখতে পারেননি দাদী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
ব্রিটিশ বধের নায়কের খেলা দেখতে পারেননি দাদী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামের বুড়ুম খার দীঘি। স্থানীয়দের মতে দীঘিটি আজ অবধি কেউ পানি সেঁচে খালি করতে পারেনি।

আবার রয়েছে এই দীঘি নিয়ে নানান আজগুবি গল্প। শত বছরের এসব লোককথা হঠাৎ পাল্টে গেল একদিনে। আউলিয়াপুরে বা বাকেরগঞ্জে এখন ছেলে-মেয়েদের ঘুম পাড়ানো হয় একজন বিস্ময় বালকের নাম দিয়ে। দুরন্ত ছেলে-মেয়েদের ভাত খাওয়ানোর সময় বলা হয়, তোমরা ভাত খাও আর ক’দিন পরই টিভিতে দেখবে তোমাদের ভাই চলে আসবে। ঘুম পাড়ানো হয় একইভাবে।

আর সেই বিস্ময় বালক দেশ ও আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ঝলসে ওঠা মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের নাম উঁচু থেকে আরও উচুঁতে নিয়ে যাওয়া বাকেরগঞ্জের সন্তান মিরাজ, যিনি পাল্টে দিয়েছেন ক্রিকেটের ইতিহাস।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের স্টেডিয়ামে বল হাতে দৌড় শুরু করে যখন মিরাজ, তখন পুরো দেশে আওয়াজ ওঠে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। কিন্তু অবাক বিষয় হলো, সারা বাংলার মানুষ টেলিভিশনে মিরাজের খেলা দেখতে পারলেও নিজ ঘরে মিরাজের কিনে দেয়া টেলিভিশনে খেলা দেখতে পারেননি বিশ্বনন্দিত এই ক্রিকেটারের দাদী জবেদা বিবি!

নিথর টেলিভিশনের গায়ে হাত বুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। খেলা দেখতে পারেননি মিরাজের চাচা-চাচি, চাচাতো ভাই-বোনরাও। তাই বাংলাদেশ খেলতে নামলে তারা ছুটে যান নিকটস্থ মাওলানা হেলালের বাড়ি।

আউলিয়াপুর গ্রামের বুড়ুম খার দীঘির পূর্ব পাশে মাটির ওপর টিনের চালা দেয়া জরাজীর্ণ ঘরটিই মিরাজের দাদা বাড়ি। সেখানেই থাকেন দাদী জবেদা বিবি ও চাচাদের পরিবার।

দাদী জানান, ঘরে বসে টিভি দেখমু কেমনে? আমার ঘরেতো কারেন্ট (বিদ্যুৎ) নাই। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগকে অনেক অনুরোধ করেও বিদ্যুৎ সংযোগ আনা সম্ভব হয়নি মিরাজের দাদার বাড়িতে। কিছু টাকাও দেয়া হয়েছিলো কিন্তু তাতেও দেখা মেলেনি বিদ্যুতের।

যা হোক, বিদ্যুৎ আসুক আর নাই আসুক মিরাজের কথা বলতেই দাদী জবেদা বিবি জানালেন, ছোটবেলা থেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে খেলাধুলা করতো মিরাজ। যখন সে খুলনার বাড়িতে যেত তখন কাছে পাওয়াই মুশকিল ছিল। সারাদিন বল আর ব্যাটের পিছনে ছুটতো। জবেদা বিবির দুই পুত্র জালাল হোসেন তালুকদার ও জাকির হোসেন তালুকদার। বড় পুত্রের বড় ছেলে মেহেদী হাসান মিরাজ। যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে তখন মিরাজ তার বোন ও মায়ের সাথে বাবার কর্মস্থল খুলনাতে চলে যায়। তারপর প্রায়ই আসতো আউলিয়াপুরে।  

জবেদা বিবি জানান, মিরাজরা গত ঈদ ও কুরবানী এখানেই করেছে। স্কুল যখন ছুটি থাকতো মিরাজরা ছুটে আসতো আউলিয়াপুর। মিরাজ ওর বাবা-মায়ের সামনে খেলাধুলা করতে পারতো না। তারা সবসময় লেখাপড়ার চাপ দিত। কিন্তু মিরাজ ক্রিকেট খেলে ব্যাট এনে গুজে রাখতো মায়ের কাপড় পেঁচিয়ে। তবে কখনো কিছুতে অবহেলা করতে দেখেনি তাকে। খেলা ও লেখাপড়া সমান পরিশ্রমে চালিয়েছে। যখন প্রথম ক্রিকেটে সুযোগ করে নেয় তখন দাদিকে নিজের বাসার টেলিভিশনটা পাঠিয়ে দেয় আর বলে দেয়, এই টিভিতে তার খেলা দেখতে। মুঠোফোনে কয়েকদিন আগেই মিরাজ দাদীর সাথে কথা বলেছেন। দাদীর কাছে আফসোস করে জানিয়েছিলেন, যদি এই আনন্দের দিনে তার দাদা বেঁচে থাকতো!

বরিশাল থেকে মিরাজরা যখন খুলনায় পাড়ি জমায় তখন মিরাজের বয়স ৫ কি ৬ বছর। বরিশালে চাচাদের সঙ্গে নিজেরা মিলে ক্রিকেট খেলতো। ক্ষেত থেকে ধান তোলার পর কিছুটা জায়গায় পিচ বানিয়ে ক্রিকেট খেলতো।  

‘মিরাজ যখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলতে ভারতে যায়, তখন তার প্রিয় দাদা দেনছের আলী তালুকদার মারা যান। আজ মিরাজের এই যে সম্মান, এই যে দেশের সবাই মেহেদী মিরাজ, মেহেদী মিরাজ বলছে, তা যদি একবারও দাদা শুনে যেতে পারতেন, ভীষণ খুশি হতেন নিশ্চয়ই। তিনি বেঁচে থাকলে গ্রামকে চেঁচিয়ে মাথায় তুলতেন’- এমনটাই জানালেন দাদী জবেদা বেগম।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘন্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এমএমএস/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।