ঢাকা: ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছেন ১৯ বছর বয়সী টাইগার অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। বয়সে তরুণ হলেও তার বোলিং দেখে সেটা মনে হওয়ার কোন সুযোগই নেই।
মিরাজ এবারই প্রথমবারের মতো খেলছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ (বিপিএল)। বিপিএলেও বল হাতে নেমে আলো কেড়েছেন। ঢাকা পর্বে খেলা এই পর্যন্ত তিন ম্যাচে মিরাজের উইকেট ৩টি। উইকেটের চেয়েও যে বিষয়টি দেখার, সেটি হলো ওভার প্রতি রান রেট। কেননা চার ছক্কার টি-টোয়েন্টির এই ফরমেটে তিন ম্যাচে বল করেছেন ৪ ওভার করে, যেখানে দুটি ম্যাচেই তার দেয়া রানের গড় ৫ আরেকটিতে ৫.৫০।
টাইগার তরুণ স্পিন বিস্ময় মিরাজের সঙ্গে কথা বলেছে বাংলানিউজের সিনিয়র ক্রীড়া প্রতিবেদক মহিবুর রহমান। জানতে চেয়েছেন তার প্রথম বিপিএলের দিনকাল ও জাতীয় দলের ভবিষ্যত নিয়ে। পাঠকদের জন্য মিরাজের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
বাংলানিউজ: প্রথমবার বিপিএল খেলছেন অনুভূতিটা কেমন?
মিরাজ: এটা আমার প্রথম বিপিএল। অনুভূতিটা কেমন, ঠিক বোঝাতে পারবো না। তবে আমার আগে থেকেই বিপিএল খেলার ইচ্ছে ছিল, যা এবছর পূর্ণ হলো। ভালো লাগছে এটা ভেবে যে এমন একটি বড় আসরে আমি খেলতে পারছি। যদিও টি-টোয়েন্টি ভিন্ন রকম খেলা, এখানে টেকনিক থেকে শুরু করে সব কিছুই বেশি বেশি করতে হয়, তারপরেও বলবো বেশ উপভোগ করছি।
বাংলানিউজ: টিম হোটেল কিংবা ড্রেসিংরুমে দলের কার সাথে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক?
মিরাজ: টিমের সবাই আমার বেশ ভালো বন্ধু। বিদেশি প্লেয়ারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা যদি বলেন সেটা সবচেয়ে বেশি রাজশাহী কিংসের অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির সঙ্গেই। অন্যান্য বিদেশি প্লেয়াররাও বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ। যেমন; পাকিস্তানের মোহাম্মদ সামি, উমর আকমল, সামিত প্যাটেল। মানে বিদেশি যারা আছেন তাদের সবার সাথেই সম্পর্কটা দারুণ হয়েছে। সবাই আমাকে বেশ আগলে রেখেছেন। আর আমাদের দেশি সিনিয়র হিসেবে যারা আছেন, যেমন; সৌরভ ভাই (মুমিনুল), সাব্বির ভাই আছেন, রকিবুল হাসান ভাই; উনারা সবাই আমাকে সব সময়ই সমর্থণ দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলানিউজ: আপনার দলে বিদেশি অনেক প্লেয়ার আছে, আপনার বয়স মাত্র ১৯। এই বিদেশি প্লেয়ারদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ কতটুকু পাচ্ছেন?
মিরাজ: আসলে এটা আমার জন্য অনেক বড় একটি সুযোগ। কেননা এখানে সাকিব ভাই (সাকিব আল হাসান), সাঙ্গাকারা, ড্যারেন স্যামি, ডুয়াইন ব্র্রাভোসহ বিশ্বের বেশ কয়েকজন সেরা ক্রিকেটারের সঙ্গে আমি খেলতে পারছি। এটা অবশ্যই বড় একটি অভিজ্ঞতা। আর এই অভিজ্ঞতা যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করতে পারবো ইনশাল্লাহ।
বাংলানিউজ: জাতীয় দলের পরে বিপিএলেও আপনার বোলিং দুর্দান্ত। কী মনে হয়, জাতীয় দলে ভালো করাই কি আপনার এই কাজটি সহজ করে দিয়েছে?
মিরাজ: একথা ঠিক যে জাতীয় দলে ভালো খেলায় আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। এই আত্মবিশ্বাসের জন্যই হয়তো ভালো করছি। কারণ জাতীয় দলের হয়ে খেলার পরে এমন বড় আসরে খেলতে কোনো জড়তা কাজ করছে না। কারণ আমি বড় ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যদি এখানে না খেলতাম তাহলে হয়তো জড়তা থাকতো।
বাংলানিউজ: টি-টোয়েন্টিতে যারা ভালো করে তারা বিশ্বের অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্ট যেমন আইপিএল, বিগব্যাশ ও সিপিএলে খেলে থাকে। এই টুর্নামেন্টগুলোতে খেলা নিয়ে কিছু ভাবছেন?
মিরাজ: আসলে এই টুর্নামেন্টগুলো নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। চিন্তা আছে বিপিএলে ভালো করে জাতীয় দলের হয়ে ভালো কিছু করার। মাত্রই আমার টেস্ট অভিষেক হলো। তাই আমি চেষ্টা করবো টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি এই তিন ফরমেটেই ভালো খেলতে। দেশের জন্য আরও ভালো করতে হবে আমাকে।
বাংলানিউজ: আপনি স্পিনার, স্পিনে অনেক ধরনের ডেলিভারি থাকে। আপনার পছন্দের কোনটি?
মিরাজ: আমি ন্যাচারালি বল টার্ন করাতে পছন্দ করি। এর বাদে টার্ন করতে করতে যেটা সোজা যায় সেটা অনেক ভালো লাগে।
বাংলানিউজ: শুধু বোলারই নন, আপনি একজন সলিড ব্যাটসম্যানও। বোলিংয়ে ভালো করছেন, ব্যাট হাতে বড় রান পাওয়া নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?
মিরাজ: যেহেতু আমি বলে ভালো করছি সেহেতু সবাই আমাকে ভালো বোলার হিসেবে জানে। কিন্তু আমি ব্যাটিংও করতে পারি। বোলিংয়ের পাশাপাশি চেষ্টা করবো ভালো ব্যাটিংও করতে। আর ব্যাটিংয়ে যে ভুলগুলো আছে সেগুলো খুব শিগগিরই শোধরাতে হবে। সেটা পারলে আমার জন্যই অনেক ভালো হবে।
বাংলানিউজ: সামনে কতদূর যেতে চান?
মিরাজ: আসলে অনেক দূর যেতে চাই। বাংলাদেশের জন্য দারুণ কিছু করতে চাই। এটাই আমার লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ১৫ নভেম্বর ২০১৬
এইচএল/এমআরপি