ঢাকা: মাত্র এক মাস আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে রুমানা আহমেদ ছিলেন শুধুই একজন অলরাউন্ডার। যার সময় কাটতো ব্যাটে-বলে কি করে আরও ভালো করা যায়, নিজেকে ফিট রাখা যায়, আর কিভাবেই বা নিজেকে আরও ছাড়িযে যাওয়া যায়।
কী করে দলীয় পারফরমেন্স আরও ভালো করা যায়, কি করেই বা সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করা যায়। কখনও কোচের সাথে কখনও বা প্রধান নির্বাচকদের সাথে পরামর্শ করতে হয়। মাঠে অথবা মাঠের বাইরে সর্বত্রই এখন তার বাড়তি দায়িত্ব।
তবে আশার কথা হলো, এমন বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে মোটেও বিপাকে পড়েননি রুমানা। বরং অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব পাওয়ার পরেও তার সময় বেশ ভালো কাটছে বলে জানালেন এই নতুন টাইগ্রেস দলপতি, ‘এটি একটি আলাদা অনুভূতি। অধিনায়ত্ব একটি অন্যরকম দায়িত্ব। নিজেকে নিয়েতো বটেই, দল নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বলবো ভালোই লাগছে। ’
রুমানার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে। আর অভিষেক ম্যাচেই ৩০ বলে ৩৬ রান ও ১০ ওভার বল করে ৩টি মেডেন সহ মাত্র ১০ রানের খরচায় ২ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন এই টাইগ্রেস অলরাউন্ডার।
এ তো অনেক আগের কথা। ওয়ানেডেতে রুমানার সাম্প্রতিক পারফরমেন্স আরও আশা জাগানিয়া। গেল সেপ্টেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে রুমানার হ্যাটট্টিকে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডকে ১০ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের যে কোন ফরমেটে এটিই বাংলাদেশ নারী দলের কোনো বোলারের প্রথম হ্যাটট্টিক। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের মধ্যে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান ও উইকেটের গর্বিত মালিকও তিনিই।
কম যাচ্ছেন না, টি-টোয়েন্টি ফরমেটেও। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুনের পরেই অবস্থান করছেন রুমানা।
গেল ৭ নভেম্বর, বিসিবির ১৫তম বোর্ড সভায় ঘোষণা আসে জাহানারা আলমের জায়গায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের নতুন অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। রুমানা তখন কক্সবাজারে। নতুন কোচ ডেভিড ক্যাপেলের অধীনে এশিয়া কাপের অনুশীলন ক্যাম্পে। কক্সবাজারের অনুশীলন শেষ করে ঢাকায় ফিরেছেন গত ১৮ নভেম্বর।
ঢাকায় ফিরে এরই মধ্যে তিনদিন অনুশীলনও করে ফেলেছেন। কক্সবাজারের ১৭ দিন আর ঢাকার ৩ দিনের অনুশীলনের পরে এশিয়া কাপে পারফরমেন্সের কথা জানতে চাইলে এই দলপতি বলেন, ‘আপনারা বিগত দিনগুলোতে দেখেছেন যে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। এখন অধিনায়ক হিসেবে ভাবছি আমার দলকে কী করে আরও ভালো করানো যায়। সামনে এশিয়া কাপ। দেখি, দলকে আর দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারি কী না। ’
আর এশিয়া কাপের মঞ্চে দেশের জন্য ভালো কিছু করার প্রেরণা মূলত রুমানা পাচ্ছেন কোচ ডেভিড ক্যাপলের অধীনে নিবিড় ব্যাটিং অনুশীলন এবং অনুশীলন পরবর্তী নিজেদের পারফরমেন্স দেখে। বোলিং, ফিল্ডিংয়ে বরাবরই ভালো টাইগ্রেসরা সমস্যায় থাকা ব্যাটিং দুর্বলতাও কাটিয়ে উঠেছে! ডেভিড ক্যাপেলের দেখিয়ে দেয়া ব্যাটিং নির্দেশনায় আয়েশা, জ্যোতি ও ময়নাদের বড় বড় ছক্কার মার বিশ্বের যে কোনো দলের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
‘চেষ্টা করলে সব কিছু সম্ভব, এটা আমরা লক্ষ্য করছি। ভালো বোলিং ও ফিল্ডিং করলেও আমাদের মধ্যে ব্যাটিং দুর্বলতা অনেক আগে থেকেই ছিল। কোচ আসার পরে আমাদের ব্যাটিংয়ের উপরে নজর দিয়েছেন বেশি। উনি আমাদের শিখিয়েছেন কী করে নিজেদের ব্যাটিংয়ে উন্নতি করা যায়, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উনি আমাদের দেখিয়েছেন কী করে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা যায়। ’
তারপরেও এশিয়া কাপের পঞ্চম এই আসরের টি-টোয়েন্টি ফরমেটে রুমানার ভাবনায় কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে পাকিস্তান ও ভারতের মতো দুই শক্ত প্রতিপক্ষকে হারানোর মতো কঠিন বিষয়টি। কেননা ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে এই পর্যন্ত দু’দলের বিপক্ষে আটটি করে ম্যাচ খেলে এখনও একটিতেও জয়ের মুখ দেখেনি লাল-সবুজের নারী ক্রিকেট দল।
তারপরেও আশা ছাড়ছেন না বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের নতুন এই কান্ডারি। নতুন কোচ আর নিজের নতুন অধিনায়কত্ব, এই দুই নতুনের সংমিশ্রনে এশিয়া কাপ থেকেই নতুন এক দলকে দেখা যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন রুমানা আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, ২২ নভেম্বর ২০১৬
এইচএল/এমআরপি