ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

আমাদের নুর বকস যেন ‘জলিল চাচা’!

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
আমাদের নুর বকস যেন ‘জলিল চাচা’! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জলিল চাচা। কেবল নামটিই যথেষ্ট। ক্রিকেট বিষয়ে যারা খবরাখবর রাখেন তাদের প্রায় সবাই জানেন ৭০ ছুঁইছুঁই এই বৃদ্ধ সম্পর্কে। পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই সে দেশীয় পতাকার আদলে তৈরি পাঞ্জাবি-পাজামায় মোড়ানো জলিল চাচার সরব উপস্থিতি। যা গত সাড়ে পাঁচ দশক ধরে ক্রিকেট মাঠের পরিচিত দৃশ্য।

জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম থেকে: জলিল চাচা। কেবল নামটিই যথেষ্ট।

ক্রিকেট বিষয়ে যারা খবরাখবর রাখেন তাদের প্রায় সবাই জানেন ৭০ ছুঁইছুঁই এই বৃদ্ধ সম্পর্কে। পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই সে দেশীয় পতাকার আদলে তৈরি পাঞ্জাবি-পাজামায় মোড়ানো জলিল চাচার সরব উপস্থিতি। যা গত সাড়ে পাঁচ দশক ধরে ক্রিকেট মাঠের পরিচিত দৃশ্য।

বাংলাদেশেরও আছেন একজন ‘জলিল চাচা। ’ তিনি নুর বকস। ঝিনাইদহের গোগরী পান্তাপাড়ার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব নুর বকস। জলিল চাচার মতো মাঠে আসার সময়ের বয়সটা তার অতটা সমৃদ্ধ না হলেও গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিতে মাঠে আসছেন এই পৌঢ়। অবশ্য ২০০১ সালের আগে তো বাংলাদেশ দলের খেলা থাকতো কালেভদ্রেই। তাই মাঠে আসার সুযোগ থাকছিল কই?

‘ক্রিকেট পাগল’-এই পরিচিতির বাইরে নুর বকসের আরও বড় গর্বের একটি পরিচিতি আছে। তিনি আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ এ দেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধ করেছেন। আর এখন তার ‘যুদ্ধ’ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরিচিত করার।

ঢাকার মাঠে বিপিএল’র বিভিন্ন দলকে সমর্থন দেওয়া শেষে ‍নুর বকস রোববার (২০ নভেম্বর) চলে আসেন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামেও।

হাতে একতারা। তার গোড়াতেই দুদিকে বাধা দুটি লাল সবুজের পতাকা। মাথায়ও প্যাঁচানো জাতীয় পতাকার ব্যান্ড। সেই ব্যান্ডে গেঁথে রেখেছেন আরও দুটো খুদে পতাকা। মাথার একেবারে উপরে লেখা-‘জয় বাংলা। ’ আর বুকে ঝুলছে গৌরবের সেই পরিচিতি। ‘সেনা নম্বর: ৩৯৬২৬৪৪২, পদবী: সৈনিক, নাম: নুর বকস, সনাক্তকরণ চিহ্ন: বাম হাতের ছোট আংগুলে কাটা দাগ। ’

সোমবার (২১ নভেম্বর) রাতে জহুর আহমেদের ইস্টার্ন গ্যালারিতে বসে চিটাগাং ভাইকিংস আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের খেলা উপভোগ করছিলেন নুর বকস। চার-ছক্কা হচ্ছে তো নুর বকসের একতারা বাজছে। সঙ্গে নাচ। আউট হলেও চলছে একই দৃশ্যের অবতারণা। ফাঁকে ফাঁকে চলছে দর্শকদের সেলফির আবদার মেটানোর তোড়জোড়।

এমন সময় কথা হলো নুর বকসের সঙ্গে। নুর বকস জানান, ‘১৫ বছর ধরে আমি দেশের সব মাঠে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে গিয়েছি। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে খেলা থাকলেই মাঠে যাওয়া হয়। ’

খেলা পাগল বাবাকে সবরকমের সহযোগিতা দেন তিন ছেলে। বড় আর মেজ ছেলে যথাক্রমে আনোয়ার ও রিপন এলাকায় মাছের চাষ করেন। ছোট ছেলে স্বপন করেন চাকরি। মেয়ে আনোয়ারা এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

নুর বকস বলেন, ‘দেশের এই মাঠে-সেই মাঠে ঘোরাঘুরির পেছনে যা টাকা খরচ হয় তার প্রায় পুরোটা দেয় আমার চার ছেলে-মেয়ে। পাশাপাশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা আমার শখ মেটানোর পেছনের পুঁজি। আগে শুধু দেশে খেলা থাকলেই মাঠে আসতাম সমর্থন দিতে। এখন বিপিএল’র ম্যাচ দেখতেও মাঠে যাচ্ছি। ’

এবারের বিপিএল’ এ কোন দলকে সমর্থন করছেন-এমন প্রশ্নটা অবশ্য এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন নুর বকস। পরে অবশ্য হেসে হেসে বলেন, ‘আমি তো কোনো একটা দলকে সাপোর্ট করতে পারি না। তবে আমার বিভাগের দল বলে খুলনা টাইটানসকে সমর্থন দিচ্ছি। আর খুলনাতো ভালো খেলছেই। ’

রোববার রাতে চট্টগ্রামে এসে উঠেছেন জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের পাশের মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ভাইকিংস ও বরিশাল বুলসের ম্যাচ দিয়ে শেষ হচ্ছে বিপিএল’র চট্টগ্রাম পর্ব্। তাই ম্যাচ শেষে রাতেই ধরবেন ঢাকার ট্রেন। পরের খেলাগুলো যে মিরপুরেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
টিএইচ/এমআরপি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।