ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

স্যামি-সাব্বিরদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন সাকিবের ঢাকা

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৬
স্যামি-সাব্বিরদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন সাকিবের ঢাকা ছবি:শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফো.কম

চতুর্থ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চ্যাম্পিয়ন সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস। ড্যারেন স্যামির রাজশাহী কিংসকে ৫৬ রানে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে রাখলো ডায়নামাইটসরা।

মিরপুর থেকে: চতুর্থ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চ্যাম্পিয়ন সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস। ড্যারেন স্যামির রাজশাহী কিংসকে ৫৬ রানে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে রাখলো ডায়নামাইটসরা।

বিপিএলের ফাইনালের মহারণে টস হেরে আগে ব্যাট করা ঢাকা ডায়নামাইটস নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৫৯ রান। প্রথমবারের মতো বিপিএল শিরোপা জিততে সাব্বির-স্যামি-মুমিনুল-মিরাজ-সোহানদের এই স্কোর টপকাতে হতো। তবে, ১৭.৪ ওভার ব্যাট করে গুটিয়ে যাওয়ার আগে রাজশাহী মাত্র ১০৩ রান তোলে।

শিরোপা নির্ধারণী এ ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রাজশাহী কিংস অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। ঢাকার হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন মেহেদি মারুফ এবং এভিন লুইস। রাজশাহীর হয়ে প্রথম ওভারটি করেন কেরসিক উইলিয়ামস। প্রথম ওভারে রাজশাহীর দুই ওপেনার তুলে নেন ১১ রান।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারে স্যামি বল তুলে দেন টাইগার স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে। নিজের দ্বিতীয় বলেই মেহেদি মারুফকে বিদায় করেন মিরাজ। এক মেহেদির বলে উইলিয়ামসের তালুবন্দি হন আরেক মেহেদি। ১০ বলে একটি চারের সাহায্যে ৮ রান করেন ঢাকার ওপেনার মেহেদি মারুফ।

ফাইনালের মঞ্চে তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি নাসির হোসেন। মাত্র ৫ রান করে বিদায় নেন তিনি। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে স্যামি বল তুলে দেন আরেক বিস্ময় স্পিনার আফিফ হোসেনের হাতে। নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন নাসিরকে। দলীয় ৩৫ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় ঢাকা। ব্যাট হাতে নেমে দ্রুত বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে বোলিং আক্রমণে আসেন স্যামি। এসেই প্রথম বলে বিদায় করেন মোসাদ্দেক হোসেনকে। এলবির ফাঁদে পড়ার আগে মোসাদ্দেক করেন ৫ রান। দলীয় ৪২ রানের মাথায় টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় ঢাকা।

এরপর জুটি গড়েন এভিন লুইস এবং কুমার সাঙ্গাকারা। এই জুটি থেকে আসে ২৫ বলে ৪১ রান। ইনিংসের ১১তম ওভারে ফরহাদ রেজার বলে উইলিয়ামসের তালুবন্দি হন এভিন লুইস। সাজঘরে ফেরার আগে ক্যাবিরীয় এই ওপেনার ৩১ বলে করেন ৪৫ রান। তার ইনিংসে ছিল আটটি চারের মার। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় ঢাকা।

ইনিংসের ১৩তম ওভারে বিদায় নেন ডোয়াইন ব্রাভো। রানআউট হয়ে ফেরার আগে তিনি করেন ১৩ রান। তার ১০ বলের ইনিংসে একটি করে চার ও ছক্কার মার ছিল। দলীয় ১০১ রানে পাঁচ উইকেট হারায় ঢাকা। ঢাকার তারকা অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলের দিকে তাকিয়ে ছিল ডায়নামাইটস। ইনিংসের ১৬তম ওভারে বিদায় নেন এই ক্যারিবীয়ান। সামিত প্যাটেলের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ফরহাদ রেজা। নিজের শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পারায় বল শূন্যে ছুঁড়ে বাউন্ডারি সীমানার বাইরে চলে যান তিনি। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় বল লুফে নিয়ে রাসেলকে ফেরান ৮ রানের মাথায়। ১১ বলে তার ইনিংসটিতে কোনো বাউন্ডারি ছিল না। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় ঢাকা।

ঢাকার দলপতি সাকিব আল হাসান ৭ বলে দুই চারে ১২ রান করে ফরহাদ রেজার বলে বোল্ড হন। ইনিংসের ১৮তম ওভারে সপ্তম উইকেট হারায় ঢাকা। দলীয় ১৩০ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব। ইনিংসের ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাজঘরে ফেরেন আলাউদ্দিন বাবু। উইলিয়ামসের বলে স্যামির হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি ১ রান করেন।

কুমার সাঙ্গাকারা ৩৩ বলে ৩৬ রান করে ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হন। ফরহাদ রেজা নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন। লঙ্কান এই গ্রেট ব্যাট হাতে উইকেটের একপ্রান্ত ধরে না রাখলে আরও আগেই ঢাকার লোয়ারঅর্ডারদের পরীক্ষায় নামতে হতো। সাঙ্গার ইনিংসে ছিল মাত্র দুটি চারের মার, সঙ্গে ছিল একটি ছক্কা। সাঞ্জামুল ১২ রানে অপরাজিত থাকেন।

সাত বোলার বল হাতে নেন রাজশাহীর হয়ে। ফরহাদ রেজা তিনটি উইকেট তুলে নেন। একটি করে উইকেট পান উইলিয়ামস, মিরাজ, আফিফ, স্যামি আর প্যাটেল।

ঢাকার দেওয়া ১৬০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে রাজশাহীর হয়ে ব্যাটিংয়ে ওপেন করতে নামেন মুমিনুল হক ও নুরুল হাসান সোহান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন নুরুল হাসান সোহান। আবু জায়েদের বলে আন্দ্রে রাসেলের তালুবন্দি হওয়ার আগে সোহান করেন মাত্র ৫ রান। দলীয় ১৫ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় রাজশাহী।

এরপর জুটি গড়েন সাব্বির রহমান এবং মুমিনুল হক। সেট হয়েও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি সাব্বির। ইনিংসের দশম ওভারে সাজঘরে ফেরেন রানআউট হয়ে। ব্যক্তিগত ২৬ রানে বিদায় নেন তিনি। ২২ বলে সাব্বির দুটি চার হাঁকান। সাব্বির-মুমিনুল মিলে স্কোরবোর্ডে আরও ৪৭ রান যোগ করেন। ইনিংসের ১১তম ওভারে সাকিব ফেরান মুমিনুলকে। রাজশাহীর এই ওপেনার ৩০ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ২৭ রান করে এলবির ফাঁদে পড়েন। দলীয় ৬৬ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় রাজশাহী।

চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন জেমস ফ্রাঙ্কলিন। ইনিংসের ১৩তম ওভারে সাঞ্জামুলের বলে ব্রাভোর তালুবন্দি হন তিনি। বাউন্ডারি সীমানায় ধরা পড়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৫ রান। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় কিংসরা। সামিত প্যাটেল এবং ড্যারেন স্যামি দলকে বেশি দূর টানতে পারেননি। ইনিংসের ১৪তম ওভারে সাকিব বোল্ড করেন স্যামিকে (৬)। আর এই উইকেটের মধ্যদিয়ে কেভিন কুপারকে হটিয়ে সাকিব বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটের (৬১) মালিক হন। পরের ওভারে সাঞ্জামুল ফিরিয়ে দেন সামিত প্যাটেলকে। ব্যক্তিগত ১৭ রানে আন্দ্রে রাসেলের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার আগে ১২ বলে একটি বাউন্ডারির দেখা পান প্যাটেল। দলীয় ৯১ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় রাজশাহী।

দলীয় ৯৩ রানের মাথায় বিদায় নেন মেহেদি মিরাজ। আবু জায়েদের বলে সাঞ্জামুলের তালুবন্দি হওয়ার আগে তিনি করেন ১ রান। ১৭তম ওভারে ব্রাভো বোল্ড করেন ফরহাদ রেজাকে (২)। দলীয় ৯৮ রানের মাথায় অষ্টম উইকেট হারায় রাজশাহী। একই ওভারে ব্রাভোর থ্রোতে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন উইলিয়ামস (৪)। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে আন্দ্রে রাসেল ফেরান নাজমুল ইসলামকে। আফিফ ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। আর এর মধ্যদিয়ে তৃতীয় শিরোপা নিজেদের ঘরেই রাখে ঢাকা।

এর আগে গ্রুপ পর্বে দু’দলের দু’বারের সাক্ষাতে প্রতিটিতেই জয় তুলে নিয়েছিল একমাত্র বিদেশি অধিনায়ক হিসেবে ড্যারেন স্যামির নেতৃত্বে খেলা রাজশাহী কিংস। তবে শক্তির বিচারে আসরে সবচেয়ে কঠিন দলই ঢাকা। সেই ঢাকার সামনেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ আসরের ফাইনালে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় রাজশাহী কিংস।  

গ্রুপ পর্বে ১২ ম্যাচের মধ্যে সাকিবদের জয় ছিল ৮টিতেই। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে যায় পরের রাউন্ডে। টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া বাকি ছয় দলের মধ্যে ঢাকার দুটো করে হার ছিল রাজশাহী কিংস ও খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে। এছাড়া বাকি চারটি দলের বিপক্ষেই ঢাকা ছিল অপরাজিত। এরপর প্লে-অফেও যথারীতি সেই ধার অক্ষুণ্ণ রেখে উঠে যায় টুর্নামেন্টের ফাইনালে।

ফাইনালে ঢাকার প্রতিপক্ষ রাজশাহী কিংস ১২ পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে উঠে। এই রাজশাহীর বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে দুইবারের মোকাবেলায় দুইবারই হেরেছিল ঢাকা। বিপিএলের এবারের আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই ড্যারেন স্যামিদের কাছে ৬ উইকেটে হেরে প্রথম হারের স্বাদ পায় সাকিবরা। রাজশাহীর বিপক্ষে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচেও তাই। সেবার অবশ্য হারের ব্যবধানটা কম, ৩ উইকেটে। তবে, শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে দুই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়লো সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৬
এমএমএস/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।