ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

ক্রিকেট

বিজয়ের দিনে ক্রিকেটারদের শহীদ স্মরণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
বিজয়ের দিনে ক্রিকেটারদের শহীদ স্মরণ সাবেক ক্রিকেটাররা /ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে নিহত হয়েছিলেন ক্রীড়া সংগঠক মুস্তাক আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম চৌধুরী (জুয়েল) শহীদ হয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি থাকা অবস্থায়। 

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে নিহত হয়েছিলেন ক্রীড়া সংগঠক মুস্তাক আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম চৌধুরী (জুয়েল) শহীদ হয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি থাকা অবস্থায়।

 

তাদের শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৭২ সাল থেকে বিজয় দিবসে আয়োজিত হয়ে আসছে প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচ। এবারও মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে হয়ে গেলো সাবেক ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রীতি ম্যাচ। এতে সাবেক ক্রিকেটারদের মিলনমেলায় পরিণত হয় স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বর।  

লাল জার্সি জড়িয়ে শহীদ মুস্তাক একাদশের হয়ে মাঠে নামেন আকরাম খান-মিনহাজুল আবেদিন নান্নু-নাইমুর রহমান দুর্জয়রা। অপরদিকে সবুজ জার্সিতে মাঠে নামেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল-ফারুক আহমেদদের শহীদ জুয়েল একাদশ। খেলায় শহীদ জুয়েল একাদশকে ৬ উইকেটে হারায় শহীদ মুস্তাক একাদশ।

ম্যাচের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মহান বিজয় দিবসের দিনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন সাবেক ক্রিকেটাররা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আকরাম খান, নাইমুর রহমান দুর্জয়, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, ফারুক আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলের আবেগ-অনুভূতি বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আকরাম খান: তাদের অবদান ছাড়া আমরা এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না। কারণ ওই সময় আসলে বাঙালির জন্য ক্রিকেট খেলাটা কঠিন ছিল। শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি তাদের স্মরণ করছি। আমার যখন ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু তখন আমি ওনাদের দেখিনি। তারপরও এই খেলার মাধ্যমে জানতে পেরেছি তাদের অবদানের কথা। এটা অনেক বড় একটা উদ্যোগ। আমি গর্বিত ওনাদের কারণে প্রত্যেক বছর প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে পারি।

নাইমুর রহমান দুর্জয়: এই ম্যাচে একটা সময় নিয়মিত খেলোয়াড়রা অংশ নিতো। তারপর দেখা গেলো এটি সাবেক প্লেয়ারদের একসঙ্গে হওয়ার উপলক্ষ হতে পারে। মূল কারণ হলো যাদের জন্য আমরা দেশ পেয়েছি সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। সব মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আমাদের ক্রিকেটার-সংগঠক শহীদ জুয়েল ও শহীদ মুস্তাক ছিলেন। এ দু’জনের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমাদের এ আয়োজন। স্বাধীনতার পরবর্তীতে এই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা, আমরা সবাই গর্ববোধ করি। এটা আমাদের জন্য বড় ব্যাপার। ওনাদের জন্যই কিন্তু আমরা বাংলাদেশ নামে, বাংলাদেশের হয়ে পতাকা বহন করতে পারি।  

আমিনুল ইসলাম: আগে যখন আমরা নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলাম, যখন ক্রিকেট খেলতাম, প্রত্যেক বছরই আমরা এ ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। খেলে গর্ববোধ করতাম। আজকের বাংলাদেশ আমরা তৈরি পেয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের কৃতিত্বে এবং অনেক ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। এই ম্যাচটা যে আমরা আয়োজন করি তাদের শুধু শ্রদ্ধা না, অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানানোর চেষ্টা করি। কেননা সবার প্রিয় খেলা এই ক্রিকেট। সবার প্রিয় খেলার মাধ্যমে আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। এটার সঙ্গে সঙ্গে খুব খুশি হতাম যদি দেশের প্রত্যেকটা জেলাতে যুব সমাজকে আজকের স্বাধীনতা দিবসে খেলার ব্যবস্থা করে দিতে পারতাম। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা কিভাবে হয়েছে জানতো। সেই সঙ্গে ক্রিকেট পৌঁছে যেতো।  

ফারুক আহমেদ: বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। খেলোয়াড়রাও এর বাইরে ছিলেন না। এটা অনেক বড় ব্যাপার। যতটুকু মনে পড়ে ১৯৮২ সাল থেকে বিজয় দিবসে ম্যাচ খেলছি। আমার মনে হয় আগামীতেও খেলবো এবং শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করবো।

মিনহাজুল আবেদিন নান্নু: আমাদের সময় এই ম্যাচটাকে ট্রায়াল ম্যাচ হিসেবে ধরা হতো। এখন তো সাবেক ক্রিকেটারদের মিলন মেলা। এই ম্যাচটা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে কোনোবারই কিন্তু মিস করিনি। শহীদের সন্তান হিসেবে মাঠে হাজির থাকতে পেরে খুব ভালো লাগে। শহীদ জুয়েল ও শহীদ মোস্তাককে ম্যাচের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে ভালো লাগে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
এসকে/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।