এরপর দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দৈত্যবধ।
২০১৬ সালটি বাংলাদেশ দল কাটিয়েছে সাফল্য-ব্যর্থতাকে সঙ্গী করে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের আনন্দে যেমন ভেসেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৩ বলে ২ রান করতে না পারার হতাশা কাঁদিয়েছে গোটা দেশের মানুষকে।
ওয়ানডে ফরম্যাটে শক্তিশালী হয়ে ওঠা বাংলাদেশ দল এবছর টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ খেলেছে বেশি। ওয়ানডে সিরিজ খেলার সুযোগ পেয়েছে বছরের শেষে এসে। তাতে ছিল সাফল্য-ব্যর্থতার মিশেল। পুরো বছরে একমাত্র টেস্ট সিরিজ খেলতে নেমেই দেখিয়েছে চমক। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চমকে দেয় পুরো বিশ্বকে। বাংলাদেশের ১৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য বিবেচনা করা হচ্ছে ওই জয়কে।
বছর শুরু টি-টোয়েন্টি দিয়ে: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি টেস্ট ও দুটি টি-টোয়েন্টি খেলার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হলো কেবল চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। কেননা ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ও মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সেরে রাখতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। সবগুলো ম্যাচই খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে। মিরপুরে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ম্যাচ চলায় মাশরাফি বাহিনীর প্রস্তুতি ক্যাম্পও হয়েছে খুলনায়। প্রথম দুটি ম্যাচ দাপট দেখিয়েই জিতে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমটা চার উইকেটে, দ্বিতীয় ম্যাচ ৪২ রানে জিতে নেয় স্বাগতিকরা।
এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। অথচ সেরা একাদশ নিয়ে মাঠে নামা হয়নি। হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে দল থেকে ছিটকে পড়েন মুশফিকুর রহিম। ক্লান্তি ভর করায় বিশ্রামে রাখা হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। ক্রিকেটারদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে বাইরে রাখা হয় আল-আমিনকেও। যার ফল অবশ্য ভালো হয়নি। শেষ দুটি ম্যাচ হেরে বসে বাংলাদেশ। সিরিজ জেতা আর হয়নি। চার ম্যাচের সিরিজ ২-২ এ শেষ হয়।
এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ: টানা তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের আয়োজন করার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হয় পাঁচ দলের আসরটি। আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারিয়ে আসরের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। বৃষ্টি-বিঘ্নিত ফাইনালে ভারতের কাছে ৮ উইকেটে হেরে রানার্সআপ হয় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
আক্ষেপের নাম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ভারতকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে ওঠার দারুণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে দুটো চার! ম্যাচ তখন বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়, শেষ ৩ বলে চাই মাত্র ২টি রান। ওই ‘মাত্র’ শব্দটাই সমুদ্রের চেয়েও বিশাল হয়ে যায়, ‘মাত্র’ ২ রান পাড়ি দিতেই শেষ হয়ে যায় খেলা। শেষ ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দেখে ১ রানের পরাজয়। তীরে এসে তরী ডোবার দৃশ্য দেখে বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানোর স্বাদ নেওয়া হয়নি মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-শুভাগতর ভুলে।
জয়ের সেঞ্চুরিতে সিরিজ বাংলাদেশের: আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ম্যাচে বাংলাদেশ দল নিজেদের তুলে ধরে দারুণভাবেই। আধিপত্য দেখিয়ে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আফগানিস্তানকে টাইগারররা হারায় ১৪১ রানের বিশাল ব্যবধানে। বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা জেতে ২-১ ব্যাবধানে। এই জয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে শততম ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। ফলে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের সেঞ্চুরিটাও উদযাপন করে টাইগার শিবির।
ইংলিশদের কাঁপিয়ে দিয়েও পারলো না টাইগাররা: তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে প্রতিটি ম্যাচেই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ওয়ানডেতে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। রোমাঞ্চকর লড়াই হয় সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে। বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৮ রানের টার্গেট টপকে চার উইকেটের জয় তুলে সিরিজ নিজেদের করে নেয় ইংল্যান্ড। শেষ দিকে ইমরুল কায়েসের হাত থেকে সহজ ক্যাচ না ফসকালে ম্যাচের চেহারা অন্যরকম হতে পারতো।
তিন দিনেই টেস্ট জয় বাংলাদেশের: মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের দারুণ বোলিংয়ে দুই দিন বাকি থাকতেই ঢাকা টেস্ট জিতে নেয় বাংলাদেশ। ১০৮ রানের ইতিহাস গড়া জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি প্রথম টেস্ট জয়। এর আগে ৯ টেস্টের সবগুলো হারে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও হতাশ হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। মাত্র ২২ রানের জন্য ইতিহাস গড়তে পারেনি মুশফিক বাহিনী। তবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আর হতাশ হতে হয়নি।
২৭৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ১০০ রান সংগ্রহ করে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। বেশ সাবলীলভাবেই ব্যাটিং করছিলেন দুই ওপেনার অ্যালিস্টার কুক ও বেন ডাকেট। সেসময় ফিকেই হয়ে আসছিল বাংলাদেশের জয়ের আশা। তবে চা বিরতির পর মিরাজ ও সাকিবের দারুণ বোলিংয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ের শিকার হয় ইংল্যান্ড। তৃতীয় সেশনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের ইনিংস। শেষের ৬১ রান সংগ্রহ করতেই সফরকারীরা হারায় সব কয়টি উইকেট। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসে ১২ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার পেয়েছেন মিরাজ। আর প্রথম টেস্টে ৭ উইকেট নিয়ে তিনি সিরিজ সেরার পুরস্কারও পান।
বিদেশের মাটিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ: বছরের একেবারে শেষ দিকে দেশের মাটিতে ওয়ানডে জয়ের ধারাবাহিকতা রাখা যায়নি বিদেশের মাটিতে। নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে বাংলাদেশ হারে ৭৭ রানের ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচে কিউইদের অল্প রানে বেধে রাখলেও হতাশ করে বাংলাদেশের ব্যাটিং। হারতে হয় ৬৭ রানের ব্যবধানে। তৃতীয় ওয়ানডেতে হারতে হয় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ফলে, বছরের শেষ দিনটি (৩১ ডিসেম্বর) হতাশায় শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬
এসকে/এমআরপি