ধারণা করা হচ্ছিল, তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ দিয়ে আলোর দেখা পাবে টাইগাররা। কিন্তু, প্রথমটিতে কিউইদের কাছে ৬ উইকেটে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
সেই ফিকে হয়ে যাওয়া আশা থেকে বেরিয়ে জয়ের ধারায় ফিরে দলকে আলোর মুখ দেখানোর লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মাউনগানুই স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায়।
গেল ৯ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডে সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে সীমিত ওভারের অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, ‘এই পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে বাংলাদেশ কোনো জয়ের দেখা না পেলেও এই সিরিজ দিয়ে আমরা সেই হতাশার অতীতেকে ভুলতে পারবো। ’
মাশরাফি সেই কথা রাখতে পারেননি। পারবেনই বা কি করে! তিনিতো আর একা খেলছেন না। তার সাথে আছেন আরও দশজন। বল হাতে তিনি ও তার সঙ্গীরা যাও ভালো করছেন, ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ভুল ও ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারার প্রবণতায় এখনও মাশরাফির দেয়া সেই কথার বাস্তব কোনো প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়নি।
কেন দেখা যায়নি সিরিজের একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক; তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কিউইদের বিপক্ষে পেরে উঠেনি কারণ তাদের সামনে ছিল ৩৪২ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্য। তৃতীয়টিতে টাইগারদের রসদ হিসেবে ছিল ২৩৬ রানের স্বল্প সংগ্রহ। কিন্তু একটি কথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের আশা জাগিয়েও হেরে গেছে টিম বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য লক্ষ্যটি কিন্তু আহামরি ছিল না, মাত্র ২৫২। ওপেনিং জুটিতে তামিম দ্রুত ফিরলেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সাব্বির ও ইমরুল যেভাবে ব্যাট চালাচ্ছিলেন তাতে একবারের জন্যও কারোরই হয়তো মনে হয়নি মাশরাফিরা এই ম্যাচটি হেরে যাবেন। কেননা ব্যক্তিগত ৩৮ ও দলীয় ১০৫ রানে সাব্বির যখন ফিরলেন তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১০৫ রান, ওভার শেষ হয়েছে মাত্র ২৩টি। তাছাড়া তখনও ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায় সাকিব, রিয়াদ, মোসাদ্দেক ও সোহানের মতো ব্যাটসম্যানরা।
কিন্তু, অবাক করার বিষয় হলো সাব্বিরের বিদায়ের পরেই তাসের ঘরের মতো বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার ধসে পড়ে। ফলে অনেকটাই নিশ্চিত জয়টা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় সিরিজ হারতে হলো সফরকারীদের।
এবার আসা যাক, টি-টোয়েন্টি সিরিজের আলোচনায়। গেল ৩ জানুয়ারি নেপিয়ারে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৫২ রানের ইনিংসটি না হলে হয়তো দলীয় স্কোর ১০০ রানের কোঠাও পার হতো না! শেষ পর্যন্ত ১৪১ রানের সম্মানজনক স্কোর দাঁড়ায়। যা দুই ওভার হাতে রেখেই টপকে যায় স্বাগতিকরা। প্রশ্ন হলো, গেল দুই বছর ধারাবাহিক সাফল্য উপহার দেয়া একটি দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে এমন পারফরম্যান্স কতটা কাম্য?
ব্যাটিংয়ে এমন ধারাবাহিক ব্যর্থতা কতটা হতাশার সেটা হয়তো দলের ভেতর থেকে তারা বুঝতে পারছেন না। যদি বুঝতেই পারতেন তা হলে নিউজিল্যান্ডের ওই ব্যাটিংবান্ধব কন্ডিশনে ঠিকই ভুল শুধরে নিজেদের ফিরে পেতে চাইতেন। যা এখনও দেখা যায়নি।
বিগত দিনগুলোতে নিজেদের ফিরে পাওয়ার প্রবণতা দেখা না গেলেও সামনের দিনগুলোতে টাইগারদের নিজেদের প্রমাণের সময় কিন্তু এখনও শেষ হয়ে যায়নি। দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচটি জিতলেই সিরিজে ফিরতে পারবে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের একটি আশাও থাকবে। আর সেই কাজটি করতে না পারলে সিরিজ হারের হতাশা পেয়ে বসবে সফরকারীদের। যা পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও দারুণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই একটি মাত্র জয় এখন দলে আলো ফেরানোর উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা পেলে টাইগার শিবিরে ফিরবে ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস। মাশরাফিরা পারবেন তো হতাশা পেছনে ফেলে নিজেদের সেরাটা দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে? সিরিজ বাঁচাতে যে জয়ের কোনো বিকল্প নেই!
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭
এইচএল/এমআরএম